gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
দৌলতপুরে ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী, ৮ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
প্রকাশ : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ০৩:০৪:৫৭ পিএম
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি::
1662541519.jpg
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অস্বাভাবিকহারে পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে পদ্মাপাড়ের ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি।আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যদিও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশার কথা শোনাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।জানা গেছে, বন্যায় উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে।তলিয়ে যাচ্ছে মাষকলাই, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদি ফসল। পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।ভুক্তভোগীরা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটছে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। এছাড়া গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দুর্গত এলাকার লোকজন। বাড়িঘরের চারপাশ পানিতে ডুবে থাকায় এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছোট-বড় ও ডিঙি নৌকা ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় অন্তত ৩০০ বিঘা আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে মাষকলাই, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। বেশ কিছু উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ ম-ল বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে চরের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু জানান, তার ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পানি ও নদীর পাড় সমান সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে আরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ইকবাল আহমেদ বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই ইউনিয়নে নদীভাঙনও দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে বিস্তীর্ণ এলাকার আবাদি জমি, কয়েকশ ঘরবাড়িসহ চরচিলমারী বিজিবি ক্যাম্প, জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে।কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, প্রতিদিন নদীতে গড়ে ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে পানি বেড়েছে অন্তত ৮২ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচে পানির প্রবাহ ছিল। বর্তমানে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমার ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। চলাচলের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি মাদরাসা ও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না। বন্যাদুর্গতদের সরকারি সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, চিলমারী ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা  হাতে পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তালিকা এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি।দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চিলমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে ১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য ইউনিয়নে সরেজমিনে খোঁজখবর নেওয়ার পর এ সস্পর্কে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

🔝