gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কুড়িগ্রামে তীব্র নদী ভাঙন: সব হারানোর শঙ্কায় হাজারো মানুষ
প্রকাশ : বুধবার, ৩১ আগস্ট , ২০২২, ০৭:০১:৪৪ পিএম
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা ::
1661950930.jpg
তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে উত্তরে সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের তিস্তা-দুধকুমার-ব্রহ্মপুত্র পাড়ের শত শত পরিবার। গত ৩-৪ দিনে তিস্তা নদীর ভাঙনের তোড়ে জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর।ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।এদিকে, সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা ও গোয়ালপুড়ি গ্রামে গত এক মাসে ২০টি বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। তাছাড়াও ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথমআলোর চর ও রসুলপুর গ্রামেও গত একমাসে ৩০টি পরিবার ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে।গত এক মাস যাবৎ ভাঙন শুরু হয়েছিল উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে।এর মধ্যে গত তিনদিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর, শত শত বিঘা ফসলী জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠসহ মানুষের শেষ সম্বলটুকুও নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে একরাতের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০/৪০টি বাড়ি মুহুর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অনেকেই। ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয়রা।বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন জানান, 'প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে সুন্দরভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছিলাম। গত পরশুদিন থেকে হঠাৎ করে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মাদ্রাসার অর্ধেক চলে গেছে। বাকিটা ভেঙে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।'কালপানি বজরার এলাকার মোজাম্মেল হক (৬৫) জানান, 'তিনদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পরি আছি। গরীব মানুষ জায়গা নাই কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দুর সম্পর্কের জেঠতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর আল্লাহ দেখপে।'এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠেছে, সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু দেখে গেছেন। তাদের নাকি কিছুই করার নেই।সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, গত এক মাসে ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। তাদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে।ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার বলেন, তার ইউনিয়নে গত এক মাসে ৩০টির মত পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেয়া হয়েছে।উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাঙন কবলিতদের তালিকা দ্রুততম সময়ে করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু করা হবে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। একইসঙ্গে, বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন ইউএনও। আর খোলা আকাশে কেউ থাকলে সেটা তার নজরে আসেনি।এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২০-২৫ বছর পূর্বে মূল নদীর স্রোতে ছিল এই এলাকায়। গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

🔝