gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
বঙ্গবন্ধুর নামে ২৮ সাহসী মানুষের জানাজা পড়ার দিন আজ

❒ যা ইতিহাসে নেই

প্রকাশ : শনিবার, ২৭ আগস্ট , ২০২২, ১২:০৬:৫৬ এ এম
আসাদ আসাদুজ্জামান:
1661537269.jpg
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পর যখন বঙ্গবন্ধুর নামটি নেয়াও এক ধরনের অপরাধ ছিলো, ঠিক সে সময় ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে গায়েবানা জানাজা পড়েছিলেন ২৮ জন সাহসী মানুষ। আজ সেই দিন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা জাতি। ঘটনার পর সারাদেশে একটা আতংকিত পরিবেশ তৈরি হয়। যে কারণে দেশের কোথাও কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, হয়নি ন্যুনতম প্রতিবাদ। ঠিক সেসময়ই যশোরে হাতে গোনা কয়েকজন বঙ্গবন্ধু প্রেমি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন।সে সময় যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় অবস্থিত আলী মঞ্জিলের দোতলায় ছিলো আওয়ামী লীগের অফিস। অফিসটি ১৬ আগস্ট পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তালাও লাগিয়ে দেয়া হয়। যশোরের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা তখন আত্মগোপনে ছিলেন। সে সময় শহরের এম এম আলী রোডে একটা ছোট্ট দোকান ছিলো তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও ১৯৭২ সালের এম এম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল খালেকের। ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট এই দোকানে বসেই আব্দুল খালেকসহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শরীফ আব্দুর রাকিব, এস এম কামরুজ্জামান চুন্নুসহ চার/পাঁচ জন এক গোপন মিটিং করেন। সে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, পরদিন ২৭ আগস্ট সিভিল কোর্ট মসজিদে সবাই একযোগে জোহরের নামাজের পর যশোর ঈদগাহে গায়েবানা জানাজা পড়বেন। জানাজা শেষে একটি মৌন মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করবে। সাইকেল নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাদেরকে এই কর্মসূচি জানানোর দায়িত্ব দেয়া হয় আব্দুল খালেককে। যথারীতি গোপনে নেতাদের এ কর্মসূচি জানানো হয়। পরদিন অর্থাৎ ২৭ আগস্ট যথারীতি জোহরের নামাজের পর একে একে ঈদগাহে সমবেত হন। সেখানে সেদিন সর্বসাকুল্যে ২৮ জন সাহসী বঙ্গবন্ধু প্রেমি উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, শাবাশ চেয়ারম্যান খ্যাত তৎকালীন এমপি মরহুম আবুল ইসলাম, বৃহত্তর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক মরহুম আশরাফ আলী, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মরহুম এডভোকেট শরীফ আব্দুর রাকিব, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল খালেক, সাবেক পৌর মেয়র এস এম কামরুজ্জামান চুন্নু, বর্তমান যশোর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমূখ। এ ছাড়াও আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে। তাছাড়াও সেদিন সিভিল কোর্ট মসজিদের দু’জন মুসুল্লী এই গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন, যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সেদিন জানাজা শেষ হতে না হতেই গোটা ঈদগাহ একদল পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে ফেলে। তারা প্রথমে এই ২৮ নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। অনেক অনুরোধ করে গ্রেফতার এড়ানো সম্ভব হলেও আর মৌন মিছিল করা যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী কোনো মিছিল নয়, একে একে বের হয়ে সবাইকে যে যার মতো বাড়ি চলে যেতে বলে।সেদিনের সেই প্রতিবাদ কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর গোটা দেশ যখন আতংকিত, যখন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে, তখন আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই গায়েবানা জানাজার। মূলত জানাজা এখানে যতোটা না মূখ্য ছিলো, তার চেয়ে বড় বিষয় আমরা সেদিন ভেবেছিলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার একটা ন্যুনতম প্রতিবাদ হওয়া দরকার। সে আলোকেই আমরা সেদিন এ কর্মসূচি নিয়েছিলাম।তিনি আরও বলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কোনো কথা বলা, জয় বাংলা শ্লোগান দেয়াটাও যেনো অন্যায় ছিলো। এই আতঙ্কিত পরিবেশ আমরা মানতে পারিনি। আর পারিনি বলেই আমরা সেদিন এই প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিলাম। যা আজ আওয়ামী লীগের কেউ মনেও রাখেনি।

আরও খবর

🔝