প্রকাশ : সোমবার, ১১ জানুয়ারি , ২০২১, ০৯:৩৫:৩১ পিএম
যশোর শহরতলির খোলাডাঙ্গার শিশু তৃষা আফরিন কথাকে গণধর্ষণ ও হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় দু’ আসামিই খালাস পেয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক টিএম মুসা সোমবার এক রায়ে এই আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিপি সেতারা খাতুন। খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছে, ওই এলাকার মৃত আউয়ালের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও কামরুল গাজীর ছেলে মেহেদী ওরফে শক্তি গাজী। এছাড়াও এ মামলার আরেক অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শামীম ২০১৯ সালের ৬ মার্চ ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এদিকে, রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহতের পিতা তরিকুল ইসলাম। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। গত বছরের ৩ মার্চ বিকেলে খোলাডাঙ্গার গাজীপাড়ায় ভাড়ায় বসবাস করা ইজিবাইক চালক তরিকুল ইসলামের মেয়ে তৃষা আফরিন কথা বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ৪ মার্চ সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরের একটি গর্তে তৃষার ক্ষতবিক্ষত লাশ পায় পরিবারের সদস্যরা। বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধারের পর পুলিশ নিশ্চিত করে ওই শিশুকে প্রথমে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা শিশুটির গোপনাঙ্গও ক্ষতবিক্ষত করে। তার মুখের মধ্যে লুঙ্গি ঢুকিয়ে দিয়ে দু’ হাত পেছনের দিক দিয়ে বেঁধে রোমহর্ষক নির্মমতা চালায়। এঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। পুরাতন কসবা ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ শেহাবুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হন খোলাডাঙ্গা এলাকার কামরুজ্জামান কামের ছেলে শক্তি, স্যালভেশন আর্মিপাড়ার প্রফুল্ল কুমারের ভাড়াটিয়া আব্দুল বারেকের ছেলে শামীম ও একই এলাকার সাইফুল নৃশংস এই ঘটনার সাথে জড়িত। পৈশাচিক নির্যাতন ও নৃশংস খুনের ঘটনায় সেই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে ওঠে যশোরের মানুষ। ক্ষুব্ধ মানুষ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এক পর্যায়ে ৬ মার্চ রাতে প্রতিপক্ষের গুলিতে হয়ে নিহত হয় অভিযুক্ত শামীম। এর আগেই জনগণের সহায়তায় পুলিশ আটক করে সন্দেহভাজন সাইফুলকে। তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিলে সাইফুল সবকিছু স্বীকার করে। পুলিশ আটক করে আরেক অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামকে। ওই তিনজন খুনের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের আদালতে স্বীকার করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা শিহাবুর রহমান শেহাব। এক পর্যায়ে শক্তি গাজীও আদালতে আত্মসমর্পণ করে। ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।রায়ের পর ব্লাস্টের সমন্বয়কারী আইনজীবী মোস্তফা হুমায়ুন কবীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এ মামলায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল। ছিল ময়নাতদন্ত রিপোর্টও। এ কারণে হতাশ হয়েছি। তৃষার বাবা তরিকুল ইসলাম এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।