শিরোনাম |
রান্নার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক রকমের মশলা ব্যবহার করে থাকি। তার মধ্যে রসুনও রয়েছে। মশলা হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও রসুনের আরো অনেক ব্যবহার রয়েছে।
রসুনে রয়েছে একশরও বেশি রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। আর সেই কারণেই রসুন জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়।
১৫০০ শতকে চীন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস রসুন ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যানসারের চিকিৎসায়।
রসুন কাঁচা অবস্থায়ও অনেকে খেয়ে থাকেন। তবে এই কাঁচা রসুন কারও জন্য মহৌষধ, আবার কারও জন্য বিষে পরিণত হয়। এটি যেমন অনেক উপকার করে, তেমনি কিছু ক্ষতিও করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে। হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা অনেক।
কাঁচা রসুনে যেসব উপকার হয়-
১. সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে দু কোয়া রসুন খেতে হবে। তারপর সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। এতে করে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যাবে। ওজন কমাতে চাইলে এর সাথে লেবুর রস খেতে পারেন।
২. কাঁচা রসুন রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন চার কোয়া করে কাঁচা রসুন খেলে এটি রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে ওষুধের সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারে।
৩. ডায়েটে রসুনের উপস্থিতি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ রসুনে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট উপাদান অ্যালিসিন থাকে ৷ উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রসুন যাদুকরী ভূমিকা পালন করে। তবে তাপের প্রভাবে অ্যালিসিন যৌগ তার ওষধিগুণ হারিয়ে ফেলে ৷ সেজন্য রান্নার বদলে কাঁচা রসুন খাওয়া বেশি উপকারী ৷
৪. বিপাকীয় ক্রিয়া ও পরিবেশ দূষণের ফলে যে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয় তা হার্ট তথা সমস্ত শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কাঁচা রসুনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেই ক্ষতি খুব ভালোভাবে ঠেকাতে পারে।
৫. বাচ্চাদের কৃমিনাশক হিসেবে রসুন কার্যকর ৷ এমনকি, ক্যাভিটি-সহ দাঁতের অন্য সমস্যাতেও রসুন উপকারী ৷ কিন্তু রসুনের তীব্র গন্ধের জন্য মাউথওয়াশ হিসেবে এর ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না।
৬. যে সমস্ত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী নিয়মিত কাঁচা রসুন খান, তারা অনেক বেশি অ্যাকটিভ থাকেন।
৭. ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে রসুন ৷ পাশাপাশি রসুনের নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক ও চুল ঝলমলে থাকে ৷ চুল পড়া কমাতে অনেকেই স্ক্যাল্পে রসুনের পেস্ট মালিশ ব্যবহার করেন।
৮. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রাও বেশি থাকে কাঁচা রসুনে। ফলে অ্যালঝাইমার ও ডিমেনসিয়ার প্রকোপ কমে। সংক্রমণজনিত অসুখ-বিসুখ কম হয়। বাড়ে আয়ু।
৯. নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে ইস্ট্রোজেন লেভেল বেড়ে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয় মেয়েদের। লেড টক্সিসিটি কমাতে কাজে লাগে। এছাড়া কাঁচা রসুন পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
১০. দাদ, খোস-পাঁচড়া ধরণের চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
১১. শিরা উপশিরায় প্লাক জমতে বাঁধা প্রদান করে। রক্ষা করে শিরা উপশিরায় মেদ জমার মারাত্মক রোগ অথেরোস্ক্লেরোসিসের হাত থেকে।
১২. গিঁট বাতের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
১৩. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ, জন্ম এবং বংশবিস্তারে বাঁধা প্রদান করে।
১৪. যক্ষ্মা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
১৫. দেহের বিভিন্ন অংশের পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ার যন্ত্রণা কমায়।
১৬. কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
১৭. গলব্লাডার ক্যান্সার মুক্ত রাখে।
১৮. স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
১৯. রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে।
২০. প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
২১. পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দূর করে।
২২. ইষ্ট ইনফেকশন দূর করে।
২৩. চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
২৪. হাতে পায়ে জয়েন্টের ব্যথা দূর করে এবং বাতের ব্যথা সারায়।
২৫. স্টাফিলোকোক্কাস ইনফেকশন দূর করে।
২৬. দাঁতের ব্যথা সারাতে সহায়তা করে।
২৭. ব্রণ সমস্যা দূরে রাখে। ব্রনের উপর রসুনের কোঁয়া ঘষে নিন,তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।
২৮. আঁচিলের সমস্যা সমাধান করে।
২৯. চামড়ায় ফোসকা পড়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়।
৩০. রসুনের ফাইটোনসাইড অ্যাজমা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩১. দীর্ঘমেয়াদী হুপিং কাশি ও ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩২. ঘুম না হওয়া, অনিদ্রা রোগ মুক্ত রাখে।
৩৩. ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৩৪. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যেসব ক্ষতি ডেকে আনে কাঁচা রসুন :
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব এমনকি বমিও হতে পারে। অতিরিক্ত রসুন খেলে হাইফিমা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এছাড়া আইরিস ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রসুনে থাকা কিছু উপাদান জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের অন্যতম কারণ হতে পারে।
যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে তাদের রসুন কম ব্যবহার করতে বলা হয়। আবার যেকোন অস্ত্রোপ্রচারের আগে রসুন খেতে মানা করা হয়।
অতিরিক্ত রসুনের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো-
ডায়রিয়া :
অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। কারণ রসুনে সালফার রয়েছে যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। ফলে হতে পারে ডায়রিয়া।
গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর :
গর্ভবতী নারীর জন্য রসুন খাওয়া অনিরাপদ। গর্ভাবস্থায় রসুন খেলে প্রসব বেদনা বাড়তে পারে। যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদেরও রসুন খাওয়া ঠিক নয়, এতে দুধের স্বাদ বদলে যেতে পারে।
মাথা ঘোরানো :
অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা হতে পারে। কারণ রসুন বেশি খাওয়ার ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। আর নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো বমি বা বমিভাব।
যকৃতের ক্ষতি :
যকৃত আমাদের শরীরের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এটি চর্বি ও প্রোটিনের বিপাক, রক্ত পরিশোধন, শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অপসারণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। অতিরিক্ত রসুন খেলে এতে থাকা অ্যালিসিন নামক উপাদান যকৃতে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম :
বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল স্ট্যাডিতে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রসুন খেতে থাকলে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া রসুনে সালফার থাকার কারণে মুখে দুর্গন্ধও হয়। তাই কারা রসুন খাবেন, কতটুকু খাবেন, তা জেনে তবেই খাবেন। নইলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন। কোন কিছুই বেশি ভালো না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।