শিরোনাম |
স্বামীর লাঠির আঘাতে এক চোখ অচল তাকিয়াতুন সিদ্দিকার। তার মাজার হাড় ভেঙে গেছে। ঢাকায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। তাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছেন যিনি, নির্যাতনকারী সেই যৌতুকলোভী স্বামী বাবু কারাগারে। সেখানেও বাবুর দাপট কমছে না। উল্টো গুরুতর আহত স্ত্রীকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে, ‘ বের হলে খবর আছে’। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে তাকিয়াতুনের পরিবার।
পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামের তাকিয়াতুনের স্বামী মেহেদী হাসান বাবু একজন যৌতুকলোভী। তাকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। আরও পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ায় তাকিয়াতুনের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়। বাবু একই এলাকার অধিবাসী। পুলিশ তাকে আটক করলেও মামলার অপর আসামি বাবুর মা মাহাফুজা আক্তার রিক্তা রয়েছেন অধরা।
তাকিয়াতুন সিদ্দিকার পরিবার জানায়, বাবুর সাথে তাকিয়াতুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ২০০৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর এক লাখ এক টাকা দেনমোহর ধার্যে পারিবারিকভাবে বাবুর সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বাবুর মা মাহফুজা আক্তার তাকিয়াতুনের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। দাবি করতে থাকেন যৌতুক। কয়েকদিনের মাথায় তাকিয়াকে শ^শুরবাড়ি থেকে নিয়ে যান তার পরিবারের লোকজন। ক্ষমা চেয়ে ফের তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান বাবুর পরিবারের সদস্যরা। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বাবার বাড়ি থেকে নিযে যাওয়ার পরই তাকিয়াতুনের উপর ফের নির্যাতন শুরু করেন বাবু, তার মাসহ পরিবারের সদস্যরা। এরমাঝে তাকিয়ার এক চোখ উপড়ে ফেলেন তারা। বাধ্য হয়ে তাকিয়ার পিতা দশ লাখ টাকা যৌতুক দেন বাবুকে।
এরপর কয়েকদিন চুপ থাকার পর বাড়ির ছাদ ঢালাই দেয়ার কথা বলে ফের পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বাবু। টাকা না দেওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল তাকিয়াতুনকে মারপিট করে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজন এসে তাদেরকে বাধা দেয়। পরে শ^শুরবাড়ির লোকজন ঘরের মধ্যে আটকে রাখে তাকিয়াতুনকে। খবর পেয়ে ২০ এপ্রিল তার বড়বোন তাহমিনা নূর সিদ্দিকা তাকে উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করেন। এই ঘটনায় ২৮ এপ্রিল তাকিয়াতুন সিদ্দিকা অভয়নগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওইদিনই প্রধান আসামি বাবুকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভয়নগর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন। কিন্তু এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী বা সহযোগী আসামি মাহফুজা আক্তার রিক্তাকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, কারাগারে আটক বাবু ও তার মা মাহফুজা আক্তার রিক্তা মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সন্তানদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে তাদেরকেও খুন গুমের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। তাকিয়াতুনের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যৌতুকলোভী বাবু জামিনে বের হয়ে কী ধরনের তান্ডব চালাবে তা নিয়ে সংশয়ে তাকিয়াতুন ও তার পরিবার।