gramerkagoj
রবিবার ● ১৯ মে ২০২৪ ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ উল্টোপথ থেকে সরে দাঁড়ালো বনবিভাগ

গাছ কাটার সেই টেন্ডার স্থগিত
প্রকাশ : সোমবার, ৬ মে , ২০২৪, ১০:৩৭:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ১৭ মে , ২০২৪, ১১:৫৬:৩৩ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-05-06_663907b29de8b.jpg

অবশেষে গণমানুষের দাবি ও দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর দুই হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে যশোর বনবিভাগ। যশেরাঞ্চলের উপর দিয়ে যাওয়া টানা তাপদাহের মধ্যে উল্টোপথে অবস্থান নিয়ে যশোরের চারটি সড়কের দুই হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে টেন্ডার আহবান করেছিল, ৬ মে তা বাতিল করা হয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত তিন সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে যশোরে ৩৮ থেকে শুরু করে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলমান এই তাপপ্রবাহে যখন গাছ লাগানোর দাবি জোরালো হচ্চিলো ঠিক তখন উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে যশোর বনবিভাগ। জেলার ৪ সড়কের দুই হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় বনবিভাগ। সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধির পরিবর্তে গাছ কাটার জন্য আহবান করা টেন্ডার নিয়ে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। এ নিয়ে দৈনিক গ্রামের কাগজসহ কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদও প্রকাশিত হয়।
তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত যশোরের জনজীবন। এরমধ্যে বৃষ্টিহীন খরতাপে পুড়ছিল এ অঞ্চল। প্রকৃতির এ বৈরি আচরণের জন্য অনেকগুলো কারণের মধ্যে গাছ কেটে ফেলাও একটি বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব দেন তারা। তারা সবাই তখন গাছ লাগানোর দাবি জানান। বেশিবেশি গাছ লাগানোর ব্যাপারে লেখালেখিও শুরু হয় বিভিন্ন প্লাট ফরমে। বৃষ্টি না হওয়া ও গরমের প্রধান কারণ গাছ কমে যাওয়ার কথা বলা হয় বারবার। যে কারণে বেশি করে গাছ লাগানোর উপর জোর দেয়া হয়। অথচ যশোরের ৪ সড়কের দুই হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় সামাজিক বনবিভাগ। গত ২৫ এপ্রিল বনবিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম স্বাক্ষরিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দুটি অখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় সামাজিক বনায়নের আবর্তনকাল উত্তীর্ণ বাগান ও অন্যান্য উৎসের বনজদ্রব্য বিক্রির লক্ষ্যে নির্ধারিত শর্তানুসারে দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর থেকে আন্দুলিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের ২৪৩টি, চাঁচড়া-ভাতুড়িয়া-সাড়াপোল হয়ে তেঁতুলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারে ৯শ’৭৯টি, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটারে ৫শ’২টি ও বাঘারপাড়া উপজেলার ধোয়াখোলা বাজার থেকে তালবাড়িয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ৩শ’১০টি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রি করা হবে। এসব গাছের মধ্যে রেইনট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়েবাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে।
এ টেন্ডার নিয়ে বন বিভাগের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় যশোর সড়ক উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, বনবিভাগ সামাজিক বনায়নের দুই হাজারের বেশি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছে সিদ্ধান্তটি হাস্যকর। তারা বনবিভাগের এ অদুরদর্শী উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
পরিবেশ ও আবহাওয়াবিদরাও নানা মন্তব্য করেন বন বিভাগের এই দুই হাজার গাছ কাটার টেন্ডার আহবান করা নিয়ে। এ নিয়ে গত ৫ মে দৈনিক গ্রামেরকাগজসহ কয়েকটি দায়িত্বশীল মিডিয়ায় ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সরকারের উপর মহল ও বন বিভাগের উপর মহলে পৌঁছালে সোমবার ওই টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। সামাজিক বনবিভাগ যশোরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

 

 

 

 

আরও খবর

🔝