gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৭ মে ২০২৪ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ জমকালো আয়োজনে গ্রামের কাগজের মিলনমেলা

আনন্দ উল্লাসে দিন পার
প্রকাশ : শুক্রবার, ৩ মে , ২০২৪, ০১:৩৩:০০ এ এম , আপডেট : শুক্রবার, ১৭ মে , ২০২৪, ১২:১৯:৪৩ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-05-03_6633eaaae7b3f.jpeg

সকাল নয়টা। যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে লোকের আনাগোনা শুরু। মিলনায়তনে ঢুকতেই রেজিস্ট্রেশনের ঝাঁপি খুলে বসেন স্টাফ রিপোর্টার মিনা বিশ্বাস ও উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং শিক্ষানবীশ রিপোর্টার ঊর্মি জাহান ও অচিন্ত বর্মন। দূর-দূরান্ত থেকে এসেই রেজিস্ট্রেশন টেবিলে ভিড় করেন সবাই। কারণ নাম লেখালেই পাওয়া যাচ্ছিল আকাশি কালারের গেঞ্জি আর ক্যাপ, সাথে নাস্তার প্যাকেটও। এ কারণে কেউই কাল বিলম্ব করতে চাননি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য এক প্রকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
রেজিস্ট্রেশন শেষ করে একই রঙের গেঞ্জি-ক্যাপ পরেই শুরু হয় আনন্দ উল্লাস। অনেকেই তখন নাস্তা করার কথা ভুলে যান। একই ড্রেসে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এটি ছিল গ্রামের কাগজের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে মিলনমেলা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানের চিত্র। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন গ্রামের কাগজের বিভিন্ন স্থানের শতাধিক প্রতিনিধি। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আনন্দের কমতি ছিল না। আনন্দ আরও বেশি উপভোগ্য হয় মূল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে।
দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রতিনিধি আর ডেস্কের সহকর্মীরা দীর্ঘদিন পর আনন্দ উপভোগে একাকার হয়ে যান। মিলনমেলা আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এমপি কাজী নাবিল আহমেদ প্রধান অতিথি হয়ে আসায়। একটি সময় হইহুল্লোড় করে সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হয় প্রথম পর্বের প্রাথমিক কাজ। এরইমধ্যে মঞ্চে আসেন প্রধান অতিথি এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। শুরু হয় প্রথম পর্বের মূল অনুষ্ঠান। সাকমিডের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ছিল ‘পরিবেশগত সংকট ও সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৯০ দশকে সাংবাদিকতাকে প্রসারিত করেছিলেন। তিনিই প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের অনুমোদন দেন। পরিবেশ সংকট এখন দৃশ্যমান। জলবায়ু পরিবর্তনে সব উপাদান বিদ্যমান। তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবেশ সাংবাদিকতায় বেশি বেশি প্রশিক্ষণ হতে হবে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন সাকমিডের প্রোগ্রাম অফিসার আবু সুফিয়ান ও শাহিনুর রহমান। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন গ্রামের কাগজের বার্তা সম্পাদক সরোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সোস্যাল মিডিয়া এডিটর স্বপ্না দেবনাথ। আলোচনা শেষে তিনজন গুণি ব্যক্তিকে সম্মাননা জানানো হয়। যাদের সম্মাননা জানানো হয় তারা হলেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ডক্টর মুস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিকতায় অধ্যাপক মশিউল আজম ও চিকিৎসায় ডাক্তার ইয়াকুব আলী মোল্লা। সম্মাননা পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় এই তিন গুণিব্যক্তি আবেগ আপ্লুত হন। গ্রামের কাগজ যে তাদের সম্মাননা প্রদান করেছে তা সারাজীবন মনে রাখবেন বলে উল্লেখ করেন।
সম্মাননা পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয় মূল পর্ব প্রতিনিধিদের সাথে পত্রিকার নানা বিষয়ে আলোচনা। এ পর্বটি পরিচালনা করেন সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিধিদের দিকনির্দেশনা দেন। এ পর্বে প্রতিনিধিদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দেন নির্বাহী সম্পাদক আসাদ আসাদুজ্জামান, বার্তা সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, অনলাইন এডিটর জাহিদ আহমেদ লিটন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এম. আইউব ও সোস্যাল মিডিয়া এডিটর স্বপ্না দেবনাথ। এ সময় বিশেষ প্রতিনিধি দেওয়ান মোর্শেদ আলম তথ্য যাচাই নিয়ে কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের কাগজের নেপথ্যের অনুপ্রেরণাদাতা সহযোগী সম্পাদক আঞ্জুমানারা।
প্রতিনিধিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করেন মহেশপুরের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আব্দুর রহমান, মঙ্গলকোটের পরেশ দেবনাথ, আলমডাঙ্গার প্রশান্ত বিশ্বাস, নড়াইলের লোহাগড়ার শাহাজান সাজু, মাগুরার লিটন ঘোষ, কয়রার মনিরুজ্জামান মনু, মণিরামপুরের জাহাঙ্গীর আলম ও পত্রিকার অনলাইনের মণিরামপুর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহান। প্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রামের কাগজের এই পর্ব শেষে বিরতি দেওয়া হয় মধ্যাহ্নভোজের। দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবাই ফিরে আসেন হলরুমে। শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গানের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পুরস্কৃত করা হয়। এ পর্বটিও পরিচালনা করেন সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। ডিজিটালে বিশেষ অবদানের জন্য স্টাফ রিপোর্টার নিজাম উদ্দিন ভুইয়া শিমুলকে পুরস্কৃত করা হয়।
এছাড়া, জেলা পর্যায়ে সেরা সাংবাদিক নির্বাচিত হন ঝিনাইদহের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার রাজিব হাসান, খুলনা ব্যুরো চিফ রাজু আহমেদ, নড়াইলের স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল কাদের, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি এসএম রেজাউল ইসলাম ও মাগুরা প্রতিনিধি লিটন ঘোষ।
উপজেলা পর্যায়ে সেরা সাংবাদিক নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন, যশোরের বাঘারপাড়ার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার চন্দন দাস, চৌগাছার স্টাফ রিপোর্টার শাহানুর আলম উজ্জ্বল, মণিরামপুরের স্টাফ রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম, নড়াইলের লোহাগড়ার স্টাফ রিপোর্টার শাহজাহান খান সাজু, ঝিনাইদহের মহেশপুরের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আব্দুর রহমান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান, যশোরের ঝিকরগাছার স্টাফ রিপোর্টার ইমরান রশীদ, কেশবপুরের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোতাহার হুসাইন, কেশবপুর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান রাজু, শার্শা প্রতিনিধি আব্দুল মান্নান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি গণেশ পাল ও খুলনার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি সব্বির খান ডালিম।
প্রথমে পুরস্কৃত করা হয় গ্রামের কাগজে বিশেষ অবদানের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি কাজী মৃদুল, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ব্যুরোর আকবর কবীর, খুলনার কয়রা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনু, খুলনার পাইকগাছা প্রতিনিধি আলাউদ্দিন সোহাগ, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার স্টাফ রিপোর্টার আশরাফ আলী, মাগুরার মহম্মদপুরের স্টাফ রিপোর্টার এসআরএ হান্নান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি বাবলু রঞ্জন বিশ্বাস, যশোরের অভয়নগর প্রতিনিধি কামরুল হাসান, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি প্রশান্ত বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা প্রতিনিধি হারুনার রশিদ রাজু, কেশবপুরের মঙ্গলকোটের সিনিয়র রিপোর্টার পরেশ দেবনাথ, চুড়ামনকাটির স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান, বারীনগর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, রূপদিয়া প্রতিনিধি রবিউল খান, মণিরামপুরের খেদাপাড়া প্রতিনিধি এরশাদ আলী, চুকনগরের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ইব্রাহীম রেজা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি টিপু সুলতান, ঝিনাইদহের ডাকবাংলো প্রতিনিধি আহমেদ সাগর ও অভয়নগরের প্রেমবাগ প্রতিনিধি জাকির হোসেন হৃদয়।
তৃণমূলে অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন খুলনার কপিলমুনির স্টাফ রিপোর্টার শেখ আব্দুল গফুর, মণিরামপুরের ঢাকুরিয়ার ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ঊজ্জ্বল রায়, ঝিকরগাছার বাঁকড়া প্রতিনিধি আবুল কাশেম, যশোরের চুড়ামনকাটির স্টাফ ফটো সাংবাদিক ওহিদুজ্জামান মিলন, মণিরামপুরের চিনাটোলা প্রতিনিধি তাজাম্মূল হোসেন, বাঘারপাড়ার খাজুরার স্টাফ রিপোর্টার ফরিদুজ্জামান, যশোরের নওয়াপাড়া পৌর প্রতিনিধি তারিম আহমেদ ইমন, বসুন্দিয়া প্রতিনিধি এমএ গণি খান ও শার্শার নাভারণ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান।
ডিজিটালে অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন চারজন। তারা হলেন, মণিরামপুরের কুয়াদা প্রতিনিধি আকবর আলী, মনোহরপুর প্রতিনিধি জিএম ফিরোজ উদ্দিন, চৌগাছার পুড়াপাড়া প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জুয়েল ও মাগুরার শালিখা প্রতিনিধি হাবিবুল হক চৌধুরী।
পুরস্কার প্রদান পর্বে অতিথি হয়ে আসেন যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। এ সময় বক্তৃতায় তিনি বলেন, গ্রামের কাগজ এখন আর কেবল যশোরের পত্রিকা না। এই পত্রিকা এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও অবস্থান করে নিয়েছে। অনলাইনে বিদেশে বসে মানুষ এখন গ্রামের কাগজ পড়েন।
সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন যখন সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানকে মঞ্চে ডাকেন তখন সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এরপর তাদের প্রত্যেকের হাতে র‌্যাপিংপেপারে মোড়ানো চকলেটের প্যাকেট তুলে দিলে যেন খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে পুরো হলরুমে। এরপর ডাক পড়ে ভাবিদের। ভাবিরা মঞ্চে যাওয়ার পর সম্পাদক নিজ হাতে তাদের উপহার তুলে দেন। ভাবিদের সঙ্গ দেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আঞ্জুমানারা। এতে তারা যেমন খুশি হন, ঠিক তেমনি আপ্লুত হন সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুপুরের খাওয়ার পর সবার মধ্যে যখন ক্লান্তি ভর করছিল ঠিক সেইসময় ঘুম কেড়ে নেয় মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন, টুকু উদাস বাউল ও বাউল আব্দুল মজিদের গান। এছাড়া, আভা-সুমের দ্বৈত গান মুগ্ধ করে অনেককে। এর বাইরে গ্রামের কাগজের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল ইসলাম-অঙ্কিতা, সামিরা, অর্নি, গ্রামের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক আসাদ আসাদুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি দেওয়ান মোর্শেদ আলম ও শিক্ষানবীশ রিপোর্টার মহিউদ্দিন সানি। কবিতা আবৃত্তি করেন সোস্যাল মিডিয়া এডিটর স্বপ্না দেবনাথ। এভাবে এক সময় শেষ হয়ে যায় মিলনমেলা। এরপর দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন ফিরে যান যে যার গন্তব্যে।

 

আরও খবর

🔝