শিরোনাম |
❒ উৎকণ্ঠায় যশোরের ১২ হাজার ইজিবাইক ও রিকসা চালক
দেশব্যাপি চলা তীব্রতাপপ্রবাহ যশেরাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে টানা দুই সপ্তাহ। এর প্রতিকুল প্রভাব পড়েছে যশেরাঞ্চলের শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের উপর। ইচ্ছা থাকলেও প্রচন্ড গরমে কাজে যেতে পারছেন না অধিকাংশ দিনমজুর। যশোর পৌরসভা এলাকায় চলাচল করা ১২ হাজার ইজিবাইক ও রিকসা চালক পড়েছেন বিপাকে। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে তারা রাস্তায় নামলেও প্রয়োজনীয় যাত্রী পাচ্ছেন না।
তাদের গরমে একদিকে ওষ্ঠাগত জীবন, অন্যদিকে দিন মজুর, ইজিবাইক ও রিকসা চালকদের উপার্জন নেমে এসেছে এক তৃতীয়াংশে। সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবীরা হা-হুতাশ আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। এমন দিন যাচ্ছে, একটি টাকাও উপার্জন নেই, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধŸগতির কারণে তারা রয়েছেন সীমাহীন দুর্গতিতে।
সারাদেশে চলছে দূর্বিসহ তাপপ্রবাহ। সতর্ক বার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় বাইরে চলাফেরা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। এর প্রেক্ষিতে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যেতে পরামর্শও দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। গত ১৭ এপ্রিল থেকে সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত সপ্তাহ ও চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ৩৮ থেকে শুরু করে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হতে হচ্ছে যশোরের বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষকে। দিনের পর দিন তীব্র গরম উপেক্ষা করে রাস্তায় নামলেও প্রয়োজনীয় যাত্রী পাচ্ছেন না যশোর ইজিবাইক ও রিকসা চালকেরা। শহরের লোকসংখ্যার আনাগোনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। যে কারণে যাত্রী কম হওয়ায় তাদের উপার্জনও কমেছে বহুলাংশে।
যশোর পৌরসভার তথ্যমতে, যশোরে লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্স বিহীন ইজিবাইকের সংখ্যা এখন ৮ হাজারের মত। আর লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন রিক্সা, অটো রিকসা মিলিয়ে এ সংখ্যা আরো হাজারের উপরে বাড়বে। প্রচন্ড গরমে এসব চালকেরা সবাই পড়েছেন বিপাকে। চরম উপার্জন সংকটে এসব চালকেরা। গরমে দেড় সপ্তাহ জুড়ে যশোর শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না, বরং চালকেরা যাত্রী সংকটে পার করছেন সময়।
গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল যশোর শহর ও শহরতলীতে খোঁজখবর নিয়ে তথ্য মিলেছে, রিকসা চালক দিন মজুরদের অবস্থা শোচনীয়। তাদের উপার্জন তিন ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে অটো রিকসা চালক খড়কীর মনিরুজ্জামান মনির জানিয়েছেন, তীব্র গরমে রিকসা রাস্তায় নামলেও যাত্রী নেই বললেই চলে। সারা দিনে আগে কমপক্ষে ৬শ, উপরে ৯শ টাকা পর্যন্ত দিনে আয় করেছেন। এখন আয় হচ্ছে দেড়শ থেকে দুশো টাকা। ঘরে বাজার নেই। দ্যব্যমূল্যও চড়া। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রব্যের দাম বাড়ছে, আর আয় কমছে। দিশেহারাভাবে সময় কটছে তার।
রিক্সাচালক বারান্দীপাড়ার শাহিন, সিটি কলেজপাড়ার মনিরুজ্জামান বাবু, পোস্টঅফিস পাড়ার জসীম উদ্দিন, ঘোপ বউ বাজারের কুতুব উদ্দিন জানিয়েছেন, তারা দিনের আয়ে দিনে খরচ করেন। তারা পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দিতে গরমে মাঠে রয়েছেন। তবে যাত্রী কম। আয় কমে গেছে কয়েকগুন। তাদের মত শ’ শ’ রিকসা ও ইজিবাইক চালক মালিকের দৈনিক ভাড়া শোধ করতে পারছেন না। কঠিন সময় পার করছেন তারা। এই পরিস্থিতি আরো কিছুদিন বহাল থাকলে খাদ্য সংকটে পড়ে মারা যাবেন তারা। একই সাথে চলমান উপার্জন কম ও প্রচন্ড গরমের কারণে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কোনো কোনো চালক।
অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির যশোরের সাধারণ সম্পাদক শামীম উজ্জামান জানিয়েছেন, চাকরিজীবী ও অন্য সব শ্রেণি পেশার মানুষের মাসিক বেতন আছে। গরমে তাদের অনেকে ইচ্ছামত অফিস করছেন। কিন্তু ইজিবাইক ও রিকসা চালকদের গরমেও রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তারপরও রয়েছে যাত্রী সংকট। দিনমজুরদের অনেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গৃহস্থরা গরমে শ্রমিক কাজেও লাগাচ্ছেন কম। আর জীবনের উপর প্রভাব পড়ছে শ্রমজীবীদেরই।
ষষ্টিতলাপাড়ার ইজিবাইক চালক আব্দুল করিম জানিয়েছেন, টানা গরমে কয়েকদিন বাইক চালিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিন দিন পর ২৭ এপ্রিল রাস্তায় নেমেছেন। এদিন বিকেল পর্যন্ত ৩শ’৩০ টাকা আয় করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো কিছু হলেও হতে পারে। প্রতিদিন ইজিবাইক মালিককে দিতে হয় ৪শ’ টাকা। তাহলে তিনি বাজার করবেন কি দিয়ে!
যশোরের কোদালিয়ার ইজিবাইক চালক আশিকুজ্জামান ও ঘোপের দিন মজুর সেলিম হোসেন বলেন, শুধু ইজিবাইক রিকসা চালক ও দিনমজুরদের নন, তাদের সাথে পরিবারের হাজার হাজার সদস্য সম্পৃক্ত। পরিবারের মুখের দিকে চেয়ে রাস্তায় নামছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু আশা মত ফল হচ্ছে না। উপার্জন নেই বললেই চলে। এরপরও প্রতিদিনই রস্তায় নেমে ঠাঠা রোদে সময় কাটছে। সব মিলিয়ে চলমান গরমে দরিদ্র জনগোষ্ঠি, দিন মজুররা পড়েছেন মহা বিপাকে। দূর্বিসহ সময় কাটছে তাদের। গরম না কমলে আরো প্রতিকুলপ্রভাব পড়বে এদের চলমান জীবন যাত্রায়।