gramerkagoj
শুক্রবার ● ১০ মে ২০২৪ ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ গরমে পুড়ছে মানুষ ও প্রকৃতি

তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন
প্রকাশ : শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:০০:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ১০ মে , ২০২৪, ১২:০৪:৪৬ এ এম
মহিউদ্দিন সানি:
GK_2024-04-27_662d2176e3af9.jpg

খুলনা বিভাগে ৩১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া তাপদাহ এক সপ্তাহ পর থেইে তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। কখনো যশোর আবার কখনো চুয়াডাঙ্গা-দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৪৮ সালের পর এই ভূখন্ডের এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। যশোরে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এভাবে দুই জেলায় টানা ২৮ দিন তাপপ্রবাহ ওঠানামা করছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। হাঁসফাঁস করছে মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে অনেকের। সূর্যের চোখ রাঙানিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জনপদ। তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তা দুর্ভোগ পরিস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। স্বস্তি ফেরেনি জনজীবনে।
তীব্র তাপদাহ ও লু হাওয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে যশোরাঞ্চলে। প্রচণ্ড গরমে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি ছিটিয়ে পরিবেশ শীতল করার চেষ্টা করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
শনিবার যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, যশোর শহরে তপ্ত রোদে রিকশাচালকেরা জীবনের তাগিদে পথে নামলেও কাহিল হয়ে পড়েছেন। শহরের যেসব জায়গায় রিকশার যানজট লেগে থাকত, গতকাল শনিবার দুপুরে এ দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়েনি। অনেক রিকশাচালককে রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচলও ছিলো কম। শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষেরা তীব্র গরমে কর্মহীন হয়ে পড়ছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে পাদুকা শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রই নিচ্ছেন শহরমুখী মানুষেরা। যশোর পৌরপার্ক, কালেক্টরেট চত্বর, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন মসজিদে মানুষজনকে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।
শহরের মানুষ নিত্য ব্যস্ততার ফাঁকে ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছিলেন। সড়কের পাশে বিভিন্ন শরবত, আইসক্রিম, ডাব, আখের রসেরও চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে পথচারীদেরকে একটু স্বস্তি দিতে সরবরাহ করা হয়েছে বিশদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত।
গরমে গ্রামের মানুষেরাও বিপাকে আছেন। তাদের চিন্তা এখন মাঠের পাকা ধান। তাপদাহে ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। এই গরমে চলছে শ্রমিক সংকট। শ্রমিকের মজুরিও এখন বেশি। মাঠ-ঘাটে কৃষক, শ্রমিক মিলে যেটুকু সময় ধান কাটছে ততটা সময় বিশ্রামও নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে কোথাও কোথাও টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। গৃহপালিত পশু-পাখি ও বাচ্চা-বুড়োদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। অনেক এলাকায় গোসল ও প্রয়োজনীয় সকল পানির উৎস শুধুমাত্র পুকুর ও সেচ পাম্প।
গ্রামে শিশুসহ সকলের পছন্দ আইসক্রিম। ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করতে গ্রামে ঢুকছেন বিক্রেতারা। ভ্যানের পেছনে ছুটছে শিশুরা। স্কুল বন্ধ থাকায় তরুণীরা আম, তেঁতুল, পেঁপে মেখে খাচ্ছেন। সন্ধ্যায় গ্রামের মাঠে ভিড় বাড়ছে। গভীর রাত পর্যন্ত খোলা মাঠে একটু স্বস্তির বাতাস পেতে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গরমজনিত রোগে ৪২ জন ভর্তি হয়েছেন। অতিরিক্ত তাপে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিটস্ট্রোক প্রভৃতি রোগে মোট ১৬৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শনিবার শহরের প্যারিস রোডে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রিকশাচালক রোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এত গরম। সকালতে দুটো টিপ দিছি। সারা গা ঘামে ভিজে যাচ্ছে। গাছের তলে বসে আছি তাও মনে হচ্ছে যে চুলোর পাড়ে বসে আছি।’
অন্য একজন রিকশাচালক আমিনুর জানান, শহরে লোকজন নেই। বিকেলের দিকে টুকটাক যাত্রী পান তারা। তবুও গরমে হিমশিম খেতে হয় তাদের। আর রোজগারও কমেছে তাদের।
শুক্রবার যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়ার শ্রম বিক্রির হাটে বাঘারপাড়া থেকে সাতজন দিনমজুর এসেছিলেন। তাদের দাবি, কাঙ্খিত মজুরি দিতে চাচ্ছে না কৃষকেরা। এজন্য সোমবার পর্যন্ত রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে থাকবেন তারা। তারা জানান, এসপ্তাহে অনেক কৃষকই ধান কাটতে শুরু করবে। আজ কয়দিন বেশি গরম পড়ছে। সে কারণে তারা একটু অপেক্ষা করছেন। দু’তিনদিনে গরম কমতেও পারে এবং মজুরি বেশি পাবেন বলে অপেক্ষা করছেন।
যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। নরেন্দ্রপুরে অধিকাংশ মাঠেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা জানান, ভোর বেলা থেকে তারা ধান কাটতে শুরু করছেন। বিকেলে আলো যতক্ষণ থাকছে ততক্ষণ তারা মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দুপুরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বাড়ির আঙিনায় ধান ঝাড়াসহ বাকি কাজ সেরে নিচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যশোর, চূয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া, এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকা জুড়ে সমভূমি। ফলে তাপমাত্রা প্রবাহের যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ- এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়। সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
সূত্রমতে, বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমঘাট হচ্ছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল। আর বঙ্গোপসাগর হচ্ছে জলীয় বাষ্পের উৎস। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প এই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকায় বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে।
যশোর মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা সবাইকে প্রচুর পানি, ডাবের পানি ও দেশি ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সুস্থ থাকতে ডিপ ফ্রিজের পানি পান করা যাবে না।

 

আরও খবর

🔝