gramerkagoj
শনিবার ● ৪ মে ২০২৪ ২০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ প্রচন্ড গরমে প্রতিনিয়ত ঝরছে গুটি

যশোরে অধিকাংশ গাছে ফল নেই আমে ভয়াবহ ফলন বিপযর্য়ের শঙ্কা

❒ সকাল বিকেল সেচ দেয়ার পরামর্শ কৃষিবিদদের

প্রকাশ : বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:০২:০০ এ এম , আপডেট : শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ১২:২৩:১২ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-04-23_6627df86d186b.jpeg

এবার যশোরাঞ্চলের অধিকাংশ আম গাছে ফল আসেনি। আবার যে সব গাছে ফল এসেছে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিনিয়িত গুটি ঝরে যাচ্ছে। যে কারণে যশোরে এবার ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদরা। অধিকাংশ গাছে গুটি না আসায় এবং অনেক গাছের গুটি ঝরে যাওয়ায় আম ভিত্তিক চাষীরা রয়েছেন চরম হতাশা ও উৎকণ্ঠায়।
রীতিমত ফলন বিপর্যয়ের হুমকিতে রয়েছে যশোর জেলার ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর আম বাগান। আর সদরে রয়েছ ২৩৮ হেক্টরের আম চাষ। এবার আমের ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে শঙ্কা করে কৃষিবিদরা বলছেন, যে সব গাছে এখনও গুটি টিকে আছে সেখানে সকাল বিকেল সেচ দিতে হবে। এছাড়া গুটিতে সাদা পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তথ্য মিলেছে, এ বছর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যশোর অঞ্চলের আম বাগানে মুকুল আসতে শুরু করেছিল। অনেক গাছে মুকুল এসেছিল দেরিতে। আর জেলার ৮ উপজেলার আম বাগান ও ও বসত বাড়ির আম গাছে এবার গতবছরের তুলনায় কম গুটি টিকে থাকে। কিন্তু চলমান টানা তাপপ্রবাহের কারণে এখন প্রতিনিয়তই ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ৩০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। অনেক গাছে শোভা পাচ্ছে এখন শুধুই পাতা। একটি গুটিও নেই এমন আম বাগান ও বসত বাড়ি পাড়ায় পাড়ায়। এ কারণে আম চাষ ভিত্তিক কৃষকরা এবার মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ৩৮ থেকে শুরু করে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলমান এই তাপপ্রবাহ অল্প ব্যবধানে বহাল থাকায় অধিকাংশ গাছের গুটি ঝরে যাচ্ছে। অনেক গাছ গুটিশূন্য হয়ে আছে। এবার প্রথম দিকে আম বাগানের ৭০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে তীব্র খরায় ঝরে যাচ্ছে সিংহভাগ গুটি। এতে অনেক কৃষকের খরচই উঠবে না জানিয়েছেন তারা।
২২ ও ২৩ এপ্রিল যশোরের নতুন খয়েরতলা, ডাকাতিয়া, নুরপুর, কনেজপুর, পাঁচবাড়িয়া, হাশিমপুর ও শেখহাটি এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় আম বাগান ও বসতবাড়ির আধিকাংশ গাছ গুটি শূন্য।
কনেজপুর গ্রামের চাষী আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, তার মোট ৬০টি আম গাছ। এরমধ্যে ২০/২৫ টিতে গুটি এসেছে। অর্ধেক গাছে গুটি নেই। যে সব আম বাগানে সেচের দরকার সেখানে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে পারছেন না চাষীরা। এতে তার সহ এলাকার অনেক আম চাষীর উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
ডাকাতিয়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, চলতি বছরে গ্রামের গাছ গুলোতে অল্প পরিমাণ গুটি এসেছিল। সেগুলো ধরে রাখতে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রতিদিন সেচ ও কীটনাশক স্প্রে করছেন সবাই। কিন্তু প্রচন্ড গরমের কারণে পানিতে কাজ হচ্ছে না। গুটি ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না। এতে এই এলাকায় আম ফলনে চরম বিপর্যয় ঘটবে।
একই গ্রামের আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, তার এলাকার ইজাহার আলীর ৬/৭ বিঘা আম বাগানের অবস্থা শোচনীয়। আমের গুটি কম এসেছে এলাকার আরো অনেক বাগানে। এরই মধ্যে অনেক বাগানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র যশোরের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর কাওছার উদ্দিন আহাম্মদ দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, প্রচন্ড তাপপ্রবাহের ফলে সারা দেশের আম চাষে প্রতিকুলপ্রভাব পড়ছে। একেতো এবার দেশের অধিকাংশ আম গাছে গুটি আসেনি। আবার যে সব গাছে গুটি এসেছে হুমকিতে পড়েছে খরায়। গরম দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে আমের গুটি আরো ঝরতে থাকবে। যশোরের আম চাষেও ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে এবার। সেক্ষেত্রে বাগানে ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। পাশাপাশি পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তিনি আরো জানান, দেশের বৃহৎ আম চাষ এলাকা চাপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদনে আরো শঙ্কা রয়েছে এবার। ওখানে এবার আমের উৎপাদন কম হবে। অনেক মুকুল ও গুটি নষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। যে কারণে এবারের মৌসুমে চড়া মূল্য দাঁড়াতে পারে আমে।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আম উৎপাদন অনেকাংশ কম হবে যশোরে। অনেক গাছে গুটি না আসায় স্বাভাবিকভাবেই এবার উৎপাদন কম হবে। আবার চলমান গরমে গুটি ঝরে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। সেই গুটি টিকিয়ে রাখতে মাঠপর্যায়ে চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। গত বছর যেসব গাছে আম ধরেছিল, সেসব গাছে এবার কম ফল ধরেছে। কারণ আবহাওয়া পরিস্থিতি, পরাগায়নের সমস্যা ও রোগবালাই। তবে গরমে এখন পানিই সব। আম গাছের গোড়ায় সকাল বিকেল সেচ দিতে হবে। আর গুটি ও মুকুলে স্প্রে করতে হয়।

আরও খবর

🔝