gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
প্রতারণামূলক চিকিৎসায় লিপ্ত ডি কে নাথের দৌড়ঝাঁপ

❒ মামলার প্রস্তুতি ভুক্তভোগীদের

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৭ জুন , ২০২২, ১২:২৬:১৪ এ এম
আশিকুর রহমান শিমুল : :
1654540010.jpg
প্রতারণামূলক চিকিৎসায় লিপ্ত কথিত ডাক্তার ডি কে নাথের বিরুদ্ধে দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজেকে নির্দোষ সাজাতে বিতর্কিত লোকজন নিয়ে গ্রামের কাগজসহ বিভিন্ন মহলে ধর্না দিচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে তথ্য দিচ্ছেন বলে কাল্পনিক গল্প বানিয়ে নিজেরই এক স্টাফকে দোষী বানিয়ে অপপ্রচার ছড়াচ্ছেন তিনি। এদিকে ভুক্তভোগী অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, প্রতারক ডিকে নাথ তাদের টাকা ফেরত না দিলে দ্রুতই মামলা করবেন। দৈনিক গ্রামের কাগজে ডিকে নাথের “প্রতারণার দোকান’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন অনেক ভুক্তভোগী। ৪ জুন বেলা ১২ টার দিকে প্রতারণার শিকার ১০/১২ জন ভুক্তভোগী টাকা ফেরত চেয়ে ডি কে নাথের প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করে। এদিকে এর আগে গ্রামের কাগজের সংবাদ প্রকাশের পর গত ১৬ মে স্বাস্থ্য বিভাগ কথিত ডাক্তার ডি কে নাথের ঘোপ জেল রোডের জনসেবা সংসদ সোসাইটিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তারপরও তিনি গোপনে তার কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। অভিযোগ রয়েছে, কথিত ডাক্তার ডি কে নাথ রোগী দেখার আড়ালে তিয়ানশির পণ্য বিক্রি করছেন। তিয়ানশির ‘চাইনিজ স্বাস্থ্য সেবা এন্ড থেরাপি সেন্টার’ নামে কার্ড ছাপিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্য করার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। যশোর সদর উপজেলার শর্শুনাদাহ গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, তার ছেলে সেজান (৭) জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিমাসে তাকে রক্ত দিতে হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ডি কে নাথের চেম্বারে আসেন। ডি কে নাথ তার ছেলেকে দেখে জানান তিন মাসের মধ্যে রোগ ভালো হয়ে যাবে। এজন্য ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। রোগী তিন মাসে সুস্থ না হলে টাকা ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু তার ছেলে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডি কে নাথ তার সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়েছে। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে বের করে দেন। এজন্য গ্রামের অন্যান্য লোকজনকে সাথে নিয়ে তিনি টাকা ফেরত নিতে আসেন। শহরের ঘোপ বউ বাজার এলাকার সুরাইয়া আক্তার ঝুমুর জানান, তিনি ও তার সাথে ইমরান হোসেন প্রথমে ডি কে নাথের ‘বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। তাকে বাঘারপাড়া উপজেলার অডিটর হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কোনো ডিলার না দিতে পারায় তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর তিনি নিজেই ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাঘারপাড়ায় বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিসেসের ডিলারশিপ নেন। ওইসময় চুক্তি হয় তার প্রতিষ্ঠানে ডি কে নাথ রোগী দেখবেন ও তার কাছ থেকে রোগীদের ওষুধ কিনতে বাধ্য করবেন। কিন্তু কিছুদিন পর ডি কে নাথ তাকে জানান, এই ব্যবসা বাদ এখন তিয়ানশি করতে হবে। তিনি তিয়ানশি করতে অস্বীকার করেন ও পাওনা টাকা ফেরত চান। তখন ডি কে নাথ তার পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। অথচ তিনি টাকা পাবেন তার লিখিত প্রমাণ রয়েছে। খাজুরা সিলিমপুরের রুপা খাতুন, ঘোপ বেলতলা এলাকার সমর্থ বানু, মুক্ত বেগমসহ একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ডি কে নাথের কাছ থেকে তারা ১০-১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। উল্টে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এজন্য তারা সকলে টাকা ফেরতের দাবিতে কথিত ডাক্তারের চেম্বার ঘেরাও করেছেন। এসব নিয়ে দৈনিক গ্রামের কাগজে ৫ জুন আবার সংবাদ প্রকাশিত হলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ডিকে নাথ। তিনি কয়েক ভুয়া সাংবাদিক ও বিতর্কিত লোকজন নিয়ে বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করছেন। পত্রিকা দপ্তরে এবং প্রতিবেদকের কাছে লোক পাঠিয়ে নিজের এক স্টাফকে দুষছেন। এমনকি গ্রামের কাগজ ও প্রতিবেদককে নিয়ে বিষোদগার করছেন তার আজ্ঞাবহ মহলে। নিজেকে কখনও সাংবাদিক, কখনও সমাজ কর্মী, কখনও ডাক্তার,  কখনও তিয়ানসির ডিস্ট্রিবিউটার, কখনও মানবাধিকার কর্মী, আবার ইন্সূরেন্স কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এই ডিকে নাথ বেশামাল হয়ে পড়েছেন। এদিকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ডিকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা টাকা ফেরত না পেলে ডিকের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেবেন। অপরদিকে অভিযুক্ত ডিকে নাথ ৫ জুন বিকেলে যশোরের একতা হসপিটালের সামনে এ প্রতিবেদককে পেয়ে নিউজ না ছাপানোর অনুরোধ জানান। অনুনয় বিনয় করে জানান, তার স্টাফ ঝুমুর তার বিরুদ্ধে লেগেছে। ঝুমুরের জুনিয়র স্বামী ইমরানও তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। ওই সময় ডি কে নাথের সাথে কয়েক বিতর্কিত লোককেও দেখা যায়।  এসময় ডিকে নাথ আরো জানান, তিনি কোনো রোগীকে ওষুধ বা তিয়ানশির পণ্য দেননি। যারা ভুক্তভোগী তারা সকলেই তিয়ানশি ডিস্ট্রিবিউটর ঝুমুর ও ইমরানের কাছ থেকে পণ্য কিনে খেয়েছেন। পণ্যে যদি কেউ উপকার না পেয়ে থাকেন তার জন্য তিনি দায়ী না। ঝুমুর ও ইমরান তার প্রতিষ্ঠান দখল করতে বিভিন্ন অপপ্রচার করছে। এদিকে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক জানান, ডি কে নাথের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে তাহলে খোঁজ খবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

🔝