gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ভয়ানক প্রতারক তারাজুলের বিরুদ্ধে ৫ মামলার প্রস্তুতি

❒ এনটিআরসিএর নাম ভাঙানো সংবাদে তোলপাড়

প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২ জুন , ২০২২, ১২:১৬:১৬ এ এম
বিশেষ প্রতিনিধি:
1654107414.jpg
কখনও এক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার ভাগ্নে, কখনও এনটিআরসি-এর কর্মকর্তা সেজে যশোরাঞ্চলে ভয়ানক সব প্রতারণা করে বেড়ানো বহুরুপি প্রতারক তারাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫ মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। দৈনিক গ্রামের কাগজের সংবাদে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারাজুল। তার নিকটজন ও কয়েক সহযোগী প্রতারককে পাঠিয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথেও যোগাযোগ করে চলেছে বলে তথ্য মিলেছে। চাকরি প্রার্থী বেকার ও বিশেষ করে প্রতারণার ফাঁদে পড়া  শিক্ষকরা এই ধুরন্ধরকে দ্রুত আটক ও কঠোর শাস্তি দাবি অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া তার চাঁচড়া রায়পাড়া প্রাইমারি স্কুল মোড় ও আরবপুর পাওয়ারপাউজ পাড়ার ডেরায় অভিযান দাবি করেছেন।কার্যত কোনো কাজ না থাকলেও ঠাঁটেবাটে চলা প্রতারকের নাম তারাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা অভিযোগ আসে দৈনিক গ্রামের কাগজ দপ্তরে। বগুড়া থেকে যশোরে এসে আস্তানা গাড়া তারাজুল ইসলাম নিজেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবীর রিজভীর ভাগ্নে বলে পরিচয় দিয়ে যশোরে প্রতারণা শুরু করেন। বিগত কয়েক বছর ধরে নিজেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। নিবন্ধনে পাশ করিয়ে দেয়া, পছন্দের স্কুলে চাকরি দিয়ে দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি দৈনিক গ্রামের কাগজ দপ্তরে অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। দৈনিক গ্রামের কাগজ দপ্তরে আসা ভুক্তভোগীদের একজন ছিলেন উত্তম কুমার। পেশায় শিক্ষক, নেশায় কবি। বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। বাগেরহাটের বালিপাড়া স্কুলে পোস্টিং তার। তিনি জানান, তিনিসহ তার পরিচিতজনদের কাছ থেকে প্রতারণা করে  ২০ লাখ টাকার উপর হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক তারাজুল। এনটিআরসি-এর নিয়োগ শুরু হলেই মাঠে নেমে পড়েন প্রতারক তারাজুল ইসলাম। যশোরের আরবপুর এলাকার ৫তলা ভবনের নিচ তলায় একটি ডেরা খুলে সেখানে কম্পিউটার বসিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতারণা করেন। জাল সনদ বানানোসহ এনটিআরসিএর সব নকল কাগজপত্র তিনি বানিয়ে দিয়ে টাকা হাতান। নিবন্ধনে পাশ করিয়ে দেয়ার নামে তিনি মাথাপ্রতি ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। আরবপুরের ওই ডেরায় তার কথিত বন্ধুর রুমে চলে কারবার। নকল ও ভুয়া সনদ নিতে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নড়াইল, পাবনা, খুলনা, বরিশাল, এমনকি ঢাকা থেকেও ওখানে লোকজন আসে। আবার অনেকের নিবন্ধন আইডি অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেন। ভাল স্কুলে চাকরি দেয়ার নামে উত্তম কুমারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ তার। কখনও নিরাপদ সড়ক চাই এর লোক পরিচয় দিয়েও চলে তার নানা অপকর্ম। উত্তম কুমারের সাথে আসা যশোরের নীলগঞ্জের সুব্রত, নওয়াপাড়ার মাসুদ, কুষ্টিয়ার বৈদন্তিমালা, বেজপাড়ার মুরাদসহ আরো কয়েকজন জানান, তাদের চাকরি দেয়ার নামে তাদের কারো কাছ থেকে ৫ লাখ, কারো কাছ থেকে ৩ লাখ হাতিয়েছেন। আবার নিবন্ধন করিয়ে দেয়ার নামে ২০২১ সালে ৩শ’৫০ জনের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। তিনি নিজেকে এনটিআরসি-এর টেলিটক ইঞ্জিনিয়ার বলেও পরিচয় দেন। প্রথমে লিখিত ও পরে ভাইভার কথা বলেও টাকা আদায় করেন। পরে সব ফাঁস হয়ে পড়ে আসলেই এনটিআরসি-এর কেউ নন, সেরেফ ফেরেফবাজি করে টাকা হাতিয়ে যান। দু’একজনের মেধায় নিবন্ধন হয়ে গেলে বা পছন্দের স্কুল পেয়ে গেলে নিজেকে জাহির করেন তারাজুল। এটা অনেকটাই ‘ঝড়ে কলাগাছ ভাঙা ও ফকিরের কেরামতি বাড়ার মত।’ প্রতারক তারাজুল নিজেকে জাহির করেন। পুলিশ সেজেও নড়াইলের এক শিক্ষকের বাড়িতে হাজির হয় তারাজুল। এসব নিয়ে দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হলে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। আরো ভুক্তভোগী গ্রামের কাগজ দপ্তরে এসে প্রতারণার নানা তথ্য দিচ্ছেন। আর এতে বেশামাল হয়ে প্রতারক তারাজুল দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সে নিজে এবং তার কয়েক সহযোগী প্রতারক বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে। এছাড়া বিভিন্ন বিতর্কিত লোক দিয়ে গ্রামের কাগজ দপ্তরেও যোগাযোগ করাচ্ছেন, যাতে নিউজ আর প্রকাশিত না হয়। এদিকে ভুক্তভোগীদের মধ্যে উত্তম কুমার, আবিদুর রহমান, পিন্টুসহ ৫ জন জানিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত না দিলে তারা মামলা করবেন। প্রতারক তারাজুলকে তারা আইনে সোপর্দ করে টাকা আদায় করবেন। একই সাথে আর যাতে কেউ ওই প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন সে আহবানও জানান তারা।

আরও খবর

🔝