gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
যশোরে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার বাড়ছে না, সাংবাদিকরাই ভরসা
প্রকাশ : বুধবার, ১ জুন , ২০২২, ১২:১৫:১৪ এ এম
এম. আইউব:
1654020983.jpg
যশোরে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার বাড়ছে না। জনসাধারণ এই আইনের ব্যবহার করছেন না বললেই চলে। যেটুকু ব্যবহার হচ্ছে তা সাংবাদিকরাই করছেন। তবে, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করায় উপজেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু মানুষ ব্যবহারে চেষ্টা করছেন। তবে, সেটিও কালেভদ্রে। এ কারণে সরকারের মহতি উদ্যোগ মাঠে মারা যাচ্ছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস করে। এই আইনে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সকল দপ্তরকে জনগণকে তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি দপ্তরে একজন কর্মকর্তাকে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয় আইনে। তবে, তথ্য অধিকার আইনে ২৩ টি বিষয়ে তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বাকি সব তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে কিংবা ইমেইলে অনুরোধ করতে পারবেন। অনুরোধে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফ্যাক্স নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা, যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তার নির্ভুল ও স্পষ্ট বর্ণনা এবং কোন পদ্ধতিতে নিতে আগ্রহী সেই সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে। অনুরোধ করার পর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। এতকিছুর পরও জনসাধারণ তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন না। যশোরে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের দশটি দপ্তরে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের হালহকিকত জানতে যশোর সদর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শিক্ষা অফিস, কৃষি অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, যুব উন্নয়ন অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস, নির্বাচন অফিস, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসে খোঁজ নেওয়া হয়। এসব দপ্তর থেকে জানানো হয় এ পর্যন্ত তথ্য অধিকার আইনে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন পাননি। যা দু’ একটি আবেদন পড়েছে তা সাংবাদিকরা করেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিকরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন বলে জানা যায়। তথ্য অধিকার আইন নিয়ে যশোরের আট উপজেলায় কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ম্যানেজমেন্ট রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-এমআরডিআই। সংস্থাটি তথ্য অধিকার আইনের সুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছে। এই সংস্থার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত নাগরিক কমিটি-জানাক। জানাক সদস্যরা বিভিন্ন সময় তথ্য অধিকার আইনে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে তথ্য নিয়েছেন। এই কার্যক্রমে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চৌগাছা উপজেলা। ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলিতে দেশের সর্বপ্রথম তথ্য অধিকার ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। ওই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারীকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী-পুরুষ তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। তাদেরই একজন আশারফ হোসেন। যিনি তথ্য অধিকার আইনে একের পর এক আবেদন করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। একপর্যায়ে তাকে তথ্য সৈনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০২০ সালে কেশবপুর উপজেলার জানাক সদস্য উৎপল দে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীরের কাছে করোনা পরীক্ষা করতে সরকারি নির্ধারিত ফি কত এবং কেশবপুর উপজেলায় এপ্রিল ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কতজন এই পরীক্ষা করেছেন, কত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আবেদন করেন। নামপত্তনে সরকারি ফি কত জানতে চেয়ে বাঘারপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা জান্নাতের কাছে আবেদন করেন জানাক সদস্য রাকিব হোসেন। ২০২০ সালের জুন মাসে ঝিকরগাছায় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছিল, গ্রহণ ভিত্তিক বিতরণের তালিকা, গ্রাহক কর্তৃক প্রদেয় বিলের পরিমাণ ও বিলের বিপরীতে সরকারি কোষাগারে কী পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তা জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন জানাক সদস্য সুলতান আহমেদ। জানাকের সহযোগিতায় ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি জামালতা গ্রামের আশারফ হোসেন চৌগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উপজেলায় মোট কয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ২০১৮ -১৯ অর্থ বছরে যে সকল বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার বরাদ্দের পরিমাণসহ খরচের ভাউচার, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে যে সকল স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার টাকার পরিমাণসহ বিদ্যালয়ের নামের তালিকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রত্যেক বিদ্যালয়ের স্লিপ পরিকল্পনার বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ও খরচের ভাউচার পেতে আবেদন করেন। ২০২০ সালে জানাক সদর উপজেলার পক্ষে স্বরোজিত মন্ডল যশোর শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা কালচারাল অফিসার বরাবর আবেদন করে ৩১ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত দুস্থ শিল্পীদের কী কী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। মণিরামপুর জানাকের সহায়তায় সুমন চক্রবর্তী নামে এক স্বেচ্ছাসেবক সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমির শ্রেণিভেদে রেজিস্ট্রি ফি কত, রেজিস্ট্রি ফি সংক্রান্ত সরকারি আদেশ/পরিপত্র/ নীতিমালার কপি, দলিল লেখক কর্তৃক দলিল লেখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফির পরিমাণ এবং এ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালার কপি, দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় কিনা; হলে সেই টাকার পরিমাণ, জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট কতগুলো দলিল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তার সংখ্যা, যে সকল দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি বা রেজিস্ট্রেশন না করে ফেরত দেয়া হয়েছে সেগুলো কী কী কারণে সম্পন্ন হয়নি বা ফেরত দেয়া হয়েছে, দলিল লেখার কাজে দলিল লেখক সমিতিকে কত টাকা ফি প্রদান করতে হয় এবং এ সংক্রান্ত কোনো সরকারি আদেশ/পরিপত্র/ নীতিমালা থাকলে তার  কপি চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন।করোনাকালে  মার্চ ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত সরকারি বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের নীতিমালার কপি ও যে সমস্ত সংস্থার মাধ্যমে প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে তার তালিকা এবং এই প্রণোদনা প্রাপ্তদের নামের তালিকা চেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে  তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন অভয়নগর জানাক সদস্য সৈয়দ জাহিদ মাসুদ  তাজ। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যশোরে এ পর্যন্ত যারা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছেন তাদের অধিকাংশই সাংবাদিক। তবে, জানাক সদস্যরা ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে দু’ শতাধিক আবেদন করান স্থানীয় জনসাধারণকে দিয়ে। তারা নিজেরাও অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করে থাকেন।  যশোরে সরকারি দপ্তরের তুলনায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তথ্য দিতে বেশি গড়িমসি করে। এ কারণে এমআরডিআই জেলার ২শ’ ৭টি এনজিও’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারপরও মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা বলছেন।২০১৫ সালে চৌগাছায় ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীরা সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ওইসময় সিংহঝুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেয়াল লিখন করা হয়। তখন তথ্য অবমুক্তকরণে দেয়াল লিখন মডেল সারাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ কারণে তথ্য কমিশন মডেলটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু অর্থের অভাবে দীর্ঘ সাত বছরেও জনকল্যাণমুখি উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখেনি। তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা এমআরডিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন উদ্যোগটি সফল হলে বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি কমে আসবে।   

আরও খবর

🔝