gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
আদালতের নির্দেশের পরও বিদ্যুৎ মিলছে না লাইসেন্সধারী নলকুপে

❒ মাটিকোমরায় ক্ষতিগ্রস্ত দু’শতাধিক কৃষক

প্রকাশ : সোমবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২২, ০৯:৩১:৪২ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম :
1650900731.jpg
ঝিকরগাছার মাটিকোমরা এলাকার সব চেয়ে পুরোনো ডিপ টিউবওয়েলের রয়েছে বিএডিসির বৈধ লাইসেন্স। এই ডিপ টিউবওয়েলের আওতাভূক্ত দুই শতাধিক কৃষক মৌসুমের পর মৌসুম উচ্চ মূল্যে ডিজেল কিনে স্যালো চালিয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। একটি ডিপটিউবওয়েলে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এই ক্ষতি। আদালতের রায় ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নির্দেশনা সত্বেও সংযোগ লাগানো যাচ্ছে না স্থানীয় আবুল কাসেম নামে এক ধুরন্ধরের কারণে। পেশি শক্তিবলে পাশেই তার একটি অবৈধ ডিপ টিউবওয়েল। মামলার আশ্রয় নিয়ে যথেচ্ছা করছেন তিনি। ব্যক্তি স্বার্থে একটি বিশাল অংশের কৃষক জিম্মিদশাই ফেলেছেন। বৈধ পাম্পটিতে  সংযোগ দিলে কৃষকরা বিঘা প্রতি কমপক্ষে ৩ হাজার টাকার মত কম খরচে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন বলে তাদের দাবি।ঝিকরগাছা উপজেলা বাজারের অনেক ভেতরে মাটিকোমরা গ্রাম। কৃষক ও ধানী জমির জন্য বেশ সুনামও রয়েছে ওই মাটিকোমরা এলাকার। ১৯৮৫ সালে ওখানে বিএডিসির অনুমোদন নিয়ে চালু হয় একটি ডিপ টিউডওয়েল। বৈধ লাইসেন্সধারী ওই টিউবওয়েলের আওতায় প্রায় দেড়শ বিঘা জমি, দুশো কৃষক। কিন্তু এই আধুনিকতার ছোঁয়ার সময়েও ওই ডিপটিউবওয়েলে বিদ্যুৎ  সংযোগ  নেই। এতে করে উচ্চ মূল্যে ডিজেল কিনে কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটি কোমরা গ্রামের নুরজাহান বেগমের নামীয় বৈধ পাম্পটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি অদ্যাবধি। পাম্পটির পরিচালকের স্বামী ফিরোজ আহমেদ। সংযোগ না দেয়ায় পাম্পটি বন্ধ থাকায় এলাকার কৃষক ও জমি মালিক স্যালো মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করছেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে ডিজেল প্রতি কেজি ১শ’ ২ টাকা থেকে ১শ’৫ টাকায় কিনে স্যালো মেশিন চালানোই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।  ডিজেলে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। যদি পাম্পটিতে সংযোগ দিয়ে চালু করা যায় তাহলে ওই এলাকার ১শ’৮০ বিঘা জমিতে দুই শতাধিক কৃষক অল্প খরচে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। কিন্তু বৈধ লাইসেন্স থাকা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সদিচ্ছা এবং আদালতের নির্দেশনা আসলেও সংযোগ লাগছে না। এই বৈধ পাম্পের পাশে নীতিমালা ভুলুন্ঠিত করে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি পেশিশক্তি বলে আরো একটি পাম্প বসিয়েছেন। ২৫শ’ মিটারের মধ্যে কোনো ডিপটিউবওয়েল বসানো যাবে না নির্দেশনা থাকলেও রাস্তার ওপারেই আবুল কাসেম জবরদোস্তি স্টাইলে আরো একটি ডিপটিউবওয়েল বসিয়ে কৃষকদের জিম্মি করার চেষ্টা করছেন।  তার পাম্পে কোনো কাগজপত্র না থাকলেও তিনি ওই পুরোনো এবং বৈধ পাম্পটির বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াতে বাধা সৃষ্টি করছেন।একটি ১৪৪ ও ১৫৪ ধারার অভিযোগের আলোকে যশোর জেলা  ম্যাজিস্ট্রেট ওই পাম্পে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও পল্লী বিদ্যুৎকে নির্দেশনা দেন। পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিলে ধুরন্ধর আবুল কাশেম ব্যক্তি স্বার্থে দুইশতাধিক কৃষকের স্বার্থ ভুলুণ্ঠিত করে একটি পিটিশি দিয়ে ওই সংযোগ প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেখেছেন। স্থানীয় কৃষক রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, ফিরোজ আহমেদের ডিপটিউবওলের আওতার ৩ বিঘা জমি, নুর বক্স জানান তার  সাড়ে তিন বিঘা জমি, তৌহিদ জানান তার ৩ বিঘা ২ কাঠা জমি রয়েছে। তাদের মত দু’শতাধিক কৃষক এখন চরম লোকসানে আছেন। স্যালো দিয়ে বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। পাম্পটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে কৃষকরা বেঁচে যেতো। ফিরোজ আহমেদের পাম্পটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে খুব উপকার হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদার বিদ্যুৎ নীতি ঘরে ঘরে আলো কৃষকের মাটিকোমরায় এই উদ্যোগটি করছেন আবুল কাসেম। সম্পূর্ণ ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে একটি বৈধ পাম্প বন্ধ রাখার ষড়যন্ত্র করছে। ১৯৮৫ সালের পুরোনো এবং কৃষক বান্ধব পাম্পটিতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবি তাদের। এ ব্যাপারে ফিরোজ আহমেদ জানিয়েছেন, অকারণে আবুল কাসেম তাকে হয়রানী করছেন। বৈধ লাইসেন্স তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়েছেন। বিএডিসির অফিসের খাতায় বৈধ পাম্পটি তার। অথচ ভুই ফোঁড় পেশিশক্তি খাটিয়ে ব্যবসা করতে তার পাম্পের অদুরেই অবৈধ পাম্প খুলে বসেছেন আবুল কাসেম। তিনি দ্রুত তার পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দাবি করেন এলাকার কৃষকের স্বার্থে। এ ব্যাপারে আবুল কাসেমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, ফিরোজ আহমেদের পাম্পটি লাইসেন্সধারী এটা সত্য।  ওই পাম্পের কাছাকাছি তিনি পাম্প করে ফেলেছেন দুরত্ব না মেনে তাও সত্য। কিন্তু তিনি তো পাম্পে অনেক টাকা লগ্নি করে ফেলেছেন। ফিরোজ আহমেদের পাম্পটিতে সংযোগ লাগলে তার নিজের পাম্পের আওতায় আর জমি থাকবে না। তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফিরোজ আহমেদের সাথে সমন্বয় করে তিনি পাম্প চালাতে আগ্রহী। কিন্তু ফিরোজ আহমেদ এ ব্যাপারে কথাই বলতে চাচ্ছেন না। তিনি যে মামলাটি করে সংযোগ দেয়া বন্ধ করে রেখেছেন তা তুলেও নেবেন। দু’জন মিলে দুটি পাম্প চালাতে ক্ষতি কি। একজনকে একেবারে ভাতে না মেরে আপোষে চললে মন্দ কি। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ ঝিকরগাছার ডিজিএম টিএম মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, ফিরোজ আহমেদের পাম্পটি বৈধ এবং লাইসেন্সধারী। আদালত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নির্দেশনা পেয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু হঠাৎ আদালতে একটি পিটিশন ঠুকে দিয়েছে আবুল কাশেম। তবে আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুতই সংযোগ লাগবে নুরজাহান বেগম ও ফিরোজ আহমেদ পরিচালিত পাম্পটিতে।

আরও খবর

🔝