gramerkagoj
বুধবার ● ৮ মে ২০২৪ ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
১৬ লাখ টাকার সব ক্যামেরা নষ্ট

❒ নিরাপত্তা ফের হুমকির মুখে

প্রকাশ : রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর , ২০২২, ১১:৫২:০৬ পিএম
শিমুল ভূইয়া ::
GK_1671990826.jpg
যশোর শহরের এমকে রোডে প্রকাশ দিবালোকে ইউসিবি ব্যাংকের একজন গ্রাহকের ১৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ২০১৯ সালের ২৭ জুন চৌরাস্তার প্রিয়াঙ্গণ জুয়েলার্সে দিন দুপুরে ৩৭ ভরি সোনা ডাকাতি হয়। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ঈদহাগ মোড়ে খুন হন ব্যবসায়ী সাফা। প্রতিটি ঘটনার রহস্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সহজেই উদঘাটনের পর অপরাধীদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেসব সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল সেগুলোই এখন পড়েছে নিরাপত্তা হুমকিতে। অযত্ন অবহেলায় কোনোটি ঝুলে পড়েছে, কোনোটি হেলে পড়েছে, আবার কোনোটি খোলা আকাশের দিকে মুখ করে আছে। বেশ কয়েকটি ক্যামেরা চুরি করে নিয়ে গেছে অপরাধীরা। এ সুযোগে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যার মত ঘটনা। লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। অন্যদিকে অপরাধী ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
২০১৭ সালের ১৬ মার্চ প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে যশোর পৌর এলাকা জুড়ে একশ’ ২৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন তৎকালীন পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। এর উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং বুথ বসানো হয় জেলা ডিএসবি’র তৎকালীন কার্যালয়ে। এরপর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পরিবর্তন ও মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই কার্যক্রম মুখ থুববে পড়ে। এক পর্যায়ে ২০২০ সালে তিন বছরের মাথায় ক্যামেরাগুলো বিকল হয়ে যায়। হারিয়ে গেছে মনিটরিং বুথও।  
শহরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলোর মধ্যে রয়েছে এসপি অফিস থেকে পৌরসভার সামনে দিয়ে ইদগাহ হয়ে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত ২০টি, এসপি অফিস থেকে দড়াটানা হয়ে জেলখানা মোড় পর্যন্ত ২০টি, দড়াটানা থেকে গাড়িখানা, চৌরাস্তা, রেলরোড, চারখাম্বা হয়ে রেলস্টেশন পর্যন্ত ২৫টি, চৌরাস্তা হয়ে আর এন রোড, মণিহার দিয়ে মুড়লি পর্যন্ত ৩০টি, এসপি অফিস থেকে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, বিমান অফিস মোড়, আরবপুর পর্যন্ত ২৩টি। এগুলো স্থাপন করেছিল মার্কস ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসপি অফিসের মোড়ের একটি বৈদ্যুতিক খাম্বায় তিনটি ক্যামেরা রয়েছে। যার একটি ভেঙে ঝুলে আছে। অপর দুটি বিকল। দড়াটানা মোড়ে স্থাপিত মুজিব সড়কের দিকে মুখ করা ক্যামেরাগুলো টেলিফোন, স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের ক্যাবলের জটলায় হারিয়ে গেছে। এ স্থানের গাড়িখানার দিকে মুখ করা ক্যামেরাগুলো ভেঙে পড়ে আছে। জেলরোড়ের ক্যামেরার কয়েকটি নেই। গরিব শাহ রোডের ক্যামেরাগুলো নষ্ট হয়ে কার্যকারিতা হারিয়েছে। চৌরাস্তায় কোতোয়ালি থানার সামনের ক্যামেরাগুলোর কয়েকটি শহরের পরিস্থিতি নয়, মনে হচ্ছে যেনো আকাশ দেখছে। কয়েকটি আবার মাথা নুইয়ে নিজের কর্মক্ষমহীন অবস্থার জানান দিচ্ছে। একই অবস্থা মণিহার, জেলখানার মোড়, মুজিব সড়কের আরও কয়েকটি ক্যামেরায়। কিছু কিছু স্থানে স্ট্যান্ড আছে, কিন্তু ক্যামেরা নেই। আবার ক্যামেরা আছে তো ক্যাবল নেই।
যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানান, তিনি সিসি ক্যামেরাগুলো লাগিয়েছিলেন। যার সুফল সেসময় যশোরবাসী পেয়েছে। কিন্তু তিনি চলে আসার পর থেকেই ক্যামেরাগুলোকে আর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এর কারণে সবগুলোই বিকল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পৌরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এসব সিসি ক্যামেরা সচল করা খুবই জরুরি।
সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দায়িত্ব পাওয়া মার্কস ট্রেডার্সের মালিক মেহেদি হাসান জানান, মুলত রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই ক্যামেরাগুলোর এ অবস্থা হয়েছে।
তার দাবি, তিনি সার্বিক সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পৌরসভা কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মাঝে একবার পৌরসভা থেকে তাকে ডাকা হয়েছিল। ঠিক করতে হলে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে আর কেউ তার যোগাযোগ করেননি।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার, পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ রেজাউল করিমসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তারা জানান, এসব সিসি ক্যামেরা সচল থাকলে তাদের অপরাধী ধরতে সুবিধা হতো। একইসাথে অপরাধ প্রবণতাও কমে আসতো বলে তারা দাবি করেন।
এ বিষয়ে র‌্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার লে. নাজিউর রহমান জানান, শহরে কোনো অপরাধ হলে তারা প্রথমেই ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ফুটেজের দিকে নজর দেন। এখন সিসি ক্যামেরাগুলো না থাকায় তাদের বেগ পেতে হয়। অনেক সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ নিয়ে শণাক্ত করা হয়। কিন্তু, ব্যক্তি পর্যায়ে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। মোড়ে মোড়ে স্থাপিত পৌরসভার ক্যামেরাগুলো থাকলে অপরাধীর যাতায়াত লক্ষ্য করে ধরতে সুবিধা হয়।
অপারাধ বিষয়ে আইনজ্ঞ যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধীদের মনে ভয় থাকে। এতে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে। এছাড়া, কয়েক বছর আগে প্রায় যশোরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ শনাক্ত করে অপরাধী ধরারও প্রবণতা ছিল। কিন্তু, সেটাও এখন কমে এসেছে।
এদিকে, যশোর পৌরসভা স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলো বিকল হয়ে পড়ায় আতঙ্কগ্রস্ত পৌরবাসীর অনেকে নিজেরা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের সামনের ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। কিন্তু, এর সংখ্যা অনেক কম। এর বাইরের বিশাল পৌর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতার বাইরেই থেকে গেছে। যার কারণে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধ সংঘটিত করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। পৌরসভার সিসি ক্যামেরাগুলো সচল থাকলে যা সম্ভব হতো না বলে মনে করেন অনেকে। গত ২২ ডিসেম্বর শহরের খড়কিতে প্রকাশ্যে মুদি দোকানি ইরফানকে খুন করে পালিয়ে যায় খুনিরা। পেছনের দিক থেকে তাদের পালিয়ে যাওয়া কিছু ফুটেজ থাকলেও তা পরিপূর্ণভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।




আরও খবর

🔝