শিরোনাম |
ভারতের বিহার রাজ্যে এক পেট্রল পাম্পে ঘটেছে এক অভিনব ও আলোচিত ঘটনা, যা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভুল করে বেশি পেট্রল দেওয়ার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তা চড় মারেন পাম্পকর্মীকে। কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরে যায় দ্রুতই—কারণ পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাম্পের কর্মীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে রেখে একের পর এক সাতটি চড় মারেন।
ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং তা ঘিরে শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক।
এনডিটিভির বরাতে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (৫ জুলাই)। বিহারের একটি শহরের একটি ব্যস্ত পেট্রল পাম্পে যান এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি পাম্পকর্মীকে বলেন, ১২০ রুপির পেট্রল দিতে। কিন্তু কর্মী ভুলবশত তাঁর মোটরবাইকে ৭২০ রুপির পেট্রল ঢেলে দেন।
এই ভুলে তীব্র ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা। নিজের ক্ষমতা ও ইউনিফর্মের প্রভাব খাটিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পাম্পকর্মীকে প্রকাশ্যে চড় মারেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই সময় আশপাশে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন এবং সবাই হতবাক হয়ে যান।
আরও পড়ুন...
মুস্তাফিজের বোলিং জাদুতে স্তব্ধ লঙ্কানরা, প্রশংসায় ভাসালেন লিয়ানাগে
পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ ভালোভাবে নেননি পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার এবং অন্যান্য কর্মীরা। তাঁরা সেই কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন এবং এক পর্যায়ে পাল্টা সাতটি থাপ্পড় দেন। কেউ একজন মোবাইলে পুরো ঘটনাটি ধারণ করেন এবং তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, এক্স (পূর্বে টুইটার) এবং ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা চুপচাপ পরিস্থিতি সহ্য করছেন এবং প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে বলছেন, “এই ধরনের নির্যাতন-মনোবৃত্তি পুলিশ সদস্যদের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিন্তু এবার কর্মীরাও নিজেদের সম্মান রক্ষায় দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন।”
ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। অনেকেই পাম্পকর্মীদের প্রশংসা করে বলছেন, “অত্যাচার সহ্য না করে রুখে দাঁড়ানোই উচিত।” আবার অনেকে বলছেন, “আইনের লোক যদি নিজেই আইন ভাঙে, তাহলে সাধারণ মানুষ কাকে ভরসা করবে?”
তবে কিছু মানুষ আবার বলেছেন, পুলিশের সঙ্গে এমন আচরণ করাও ঠিক হয়নি, এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
আরও পড়ুন...
সন্ত্রাস ও অর্থের রাজনীতি নয়, জনস্বার্থের রাজনীতি করতে চাই
বিহার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং পাম্পের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আইনের চোখে সবাই সমান। যদি কোনো কর্মকর্তা নিয়ম লঙ্ঘন করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে পাম্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভুলে অতিরিক্ত পেট্রল দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও এমন আগ্রাসী আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
ভারতের বহু রাজ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। ছোটখাটো কারণে সাধারণ নাগরিকদের হেনস্তা করার অনেক নজির রয়েছে। এই ঘটনার পেছনেও সেই চাপা ক্ষোভ কাজ করেছে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
অনেকেই বলছেন, পুলিশ যদি ক্ষমতা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে অপমান করেন, তাহলে কখনো কখনো তার জবাব এমনভাবে ফিরে আসতেই পারে।
ঘটনাটি শুধু একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও পাম্পকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ নয়, এটি প্রতিফলন করে একটি বৃহৎ সামাজিক বাস্তবতার—যেখানে পেশাগত শৃঙ্খলা, সামাজিক সম্মান এবং ন্যায়ের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন অপেক্ষা শুধু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপের।