শিরোনাম |
ফুটবল মাঠে যতই উচ্ছ্বাস থাকুক, বাস্তবতা মাঝেমধ্যেই যেন নির্মম এক চিঠি লিখে দিয়ে যায় জীবনের ঠিকানায়। ঠিক তেমনই নির্মমতায় বিদায় নিতে হয়েছে পর্তুগিজ তারকা দিয়োগো জোতাকে। মৃত্যুর খবর কাঁদিয়েছে শুধু লিভারপুল নয়, গোটা ফুটবল বিশ্বকে। কিন্তু এই শোকের মুহূর্তেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো তার ক্লাব লিভারপুল—চুক্তির বাকি দুই বছরের পুরো বেতন তুলে দেওয়া হবে জোতার স্ত্রী রুতে কারদোসো এবং তার তিন সন্তানকে।
জীবনের স্বাভাবিক গতিতে যখন কেউ হঠাৎ থেমে যায়, তখন সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে পরিবার। দিয়োগো জোতার স্ত্রী রুতে কারদোসোর জীবনটা যেন এক মুহূর্তেই পাল্টে গেল। বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ পেরিয়েছে। তিনটি সন্তানের সঙ্গে এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল।
আরও পড়ুন...
এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে রচিত ইতিহাস
স্পেনে লিভারপুল ক্লাবের অনুশীলনে ফেরার পথে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান জোতা ও তার ভাই। একসঙ্গে চলে যান দুই তরুণ প্রাণ।
শনিবার পর্তুগালের গোন্দোমার শহরে জোতা ও তার ভাইয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছিলেন ক্লাব সতীর্থ থেকে শুরু করে জাতীয় দলের বন্ধুরা। জোতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক লিভারপুল জার্সি-সদৃশ ফুলের তোড়া হাতে শেষবারের মতো চোখের জলে বিদায় জানান প্রিয় সতীর্থকে।
জোতার সঙ্গে লিভারপুলের চুক্তি ছিল ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে ১ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড আয় করতেন তিনি। সেই হিসাবে বাকি দুই বছরে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯০ কোটি টাকা) পাওয়ার কথা ছিল তার।
অনেক ক্লাবই হয়তো খেলোয়াড় মারা গেলে চুক্তি বাতিল করে দিত। কিন্তু লিভারপুল করল এক ব্যতিক্রমী ঘোষণা—জোতার চুক্তির বাকি বেতন পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে তার পরিবারকে। শুধু তা-ই নয়, ক্লাব স্থায়ীভাবে অবসর দিচ্ছে জোতার পরিধান করা ২০ নম্বর জার্সি।
আরও পড়ুন...
রাত আড়াইটায় ঋতুপর্ণাসহ পুরো দলকে হাতিরঝিলে সংবর্ধনা
এই পদক্ষেপ শুধু একটি ক্লাবের নয়, একটি পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার সংকল্প। এটি দেখিয়ে দিল, প্রফেশনাল ফুটবল জগতেও এখনো মানবিকতার জায়গা আছে।
দিয়োগো জোতা শুধুই একজন ফুটবলার ছিলেন না। লিভারপুলের জার্সিতে ২০২০ সালে উলভারহ্যাম্পটন থেকে যোগ দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের অন্যতম আস্থার প্রতীক। গোল করার দারুণ দক্ষতা, ট্যাকটিক্যাল বুদ্ধি আর কঠোর পরিশ্রম তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ক্লাব ও জাতীয় দলের সতীর্থদের মাঝেও।
মাত্র ২৭ বছর বয়সেই থেমে গেল তার সব স্বপ্নের যাত্রা। কিন্তু যে ভালোবাসা তিনি রেখে গেলেন, তা হয়তো বছরের পর বছর ধরে স্মরণে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।
সময়ের সঙ্গে হয়তো শোক কমে যাবে, চোখের জল শুকিয়ে যাবে। কিন্তু ফুটবলবিশ্ব মনে রাখবে, যখন এক তরুণ প্রাণ অকালে থেমে গেল, তখন তার ক্লাব পরিবারকে একা ফেলে দেয়নি। দিয়োগো জোতা নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া মানসিকতা, ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা আর ক্লাবের মানবিকতা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বারবার।