gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৭ জুলাই ২০২৫ ২ শ্রাবণ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ বিএনপির ভেতরে শুদ্ধি অভিযান

অপকর্মে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
প্রকাশ : রবিবার, ৬ জুলাই , ২০২৫, ১১:৩০:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2025-07-06_686a09ec1224d.jpg


বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলায় ব্যস্ত। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, গ্রুপিং এবং কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছেন কিছু নেতা-কর্মী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোথাও কোথাও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে।

বিশেষ করে দলের তথাকথিত ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপি’ নামধারী এক শ্রেণির নেতা-কর্মী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা শুধু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেই জড়াচ্ছে না, বরং তৃণমূল রাজনীতিতেও বিভাজন সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন এদের শনাক্ত করে দলে শুদ্ধি আনার কাজে নেমেছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কমিটির সদস্যদের যাচাই-বাছাই চলছে। এই যাচাইয়ের মূল লক্ষ্য—যারা দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন, জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছেন, তাদের তালিকাভুক্ত করা এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে অপকর্মে জড়িতদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের সরাসরি বহিষ্কার, শোকজ ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির মতো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন...

ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল 'আমেরিকা পার্টি' গঠনের ঘোষণা


বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, দল এবং দেশের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার তাই করবে। যারা দলের ইমেজ নষ্ট করবে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তালিকা করেই একের পর এক সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের ভেতরে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ৫ আগস্টের আগের ও পরের রাজনীতির মধ্যে স্পষ্ট ফারাক রয়েছে। এখন আর অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

দলীয় তথ্যমতে, শুধু গত ১১ মাসেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫,০০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার এবং ১,০০০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত দুটি ঘটনা ঘটেছে ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। ওই দুটি এলাকায় দলীয় কোন্দল রূপ নেয় সংঘর্ষে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির হাইকমান্ড আরও দাবি করছে, দলের ভেতরে ঢুকেছে এক শ্রেণির ‘সাইলেন্ট গ্রুপ’, যাদের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের সহায়তা। উদ্দেশ্য—বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং বিভ্রান্তি তৈরি করা। এদের কেউ কেউ দলের নেতা-কর্মীদের টাকা দিয়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে বলেও অভিযোগ আছে।

আরও পড়ুন...

রাত আড়াইটায় ঋতুপর্ণাসহ পুরো দলকে হাতিরঝিলে সংবর্ধনা


তদন্তে এসব ‘পুশ-ইন চক্র’ ও ‘হাইব্রিড’ নেতাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করা হলেও তারা অনেক সময় এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয়, দলের পক্ষ থেকে এসব অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির নিজস্ব আইনি টিম কয়েকটি জেলায় অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫ আগস্টের পর আমরা বারবার বলে আসছি, আমাদের নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অপকর্ম না করে।”

তবে তিনি বলেন, বাস্তবে যেটুকু ঘটনা ঘটছে, তার চেয়ে অপপ্রচারের মাত্রা অনেক বেশি, যা একটি বিশেষ মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।

বিএনপির হাইকমান্ডের বার্তাটি এখন স্পষ্ট—দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেউই অপরিহার্য নয়। 'হাইব্রিড', 'পুশইন', কিংবা 'নব্য বিএনপি'—নাম যাই হোক না কেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলে শাস্তি নিশ্চিত। এই অভিযানের ফলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগামী নির্বাচনের জন্য দলের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও খবর

🔝