gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৭ জুলাই ২০২৫ ২ শ্রাবণ ১৪৩২
gramerkagoj
সাতক্ষীরায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, চরম ভোগান্তিতে পৌরবাসী
প্রকাশ : শনিবার, ৫ জুলাই , ২০২৫, ০২:৩২:০০ পিএম
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
GK_2025-07-05_6868e31c6a994.jpg

সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় টানা বৃষ্টি, অপরিকল্পিত খনন এবং নদী-খাল দখলের কারণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, এমনকি টয়লেট পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। দূষিত পানি ও স্যানিটেশন সমস্যার কারণে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবার (৫ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত আরও দুই-একদিন চলবে বলেও জানান তিনি। তবে আগামী সোমবার (৭ জুলাই) থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

শহরের কুখরালী এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন, তৌহিদুর রহমানসহ স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার কুখরালী উত্তরপাড়ার সড়কে প্রায় একমাস ধরে জলাবদ্ধতা রয়েছে। প্রায় ১০০ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ সেখানে পানিবন্দি। ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়ার পানি যে বিলে জমে, সেই বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজমান।

আরও পড়ুন...

আগামী পাঁচ দিন টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস

যেসব খাবার রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়

পবিত্র আশুরা: ইতিহাস, তাৎপর্য ও ইসলামসম্মত করণীয়-বর্জনীয়


তারা আরও বলেন, প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ মাস এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে থাকে। চলাচলের রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। পচা পানির কারণে চর্মরোগে ভুগছেন অনেকে। রান্না, গোসল, পানীয় জলের জন্য চরম দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। শিশুদের স্কুলে যাওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।

একই অবস্থা সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পূর্বপাশেও। রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে মানুষের আঙিনায়। অর্ধশতাধিক বাড়ি ও উঠোন পানিতে তলিয়ে আছে। নারী ও শিশুরা রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী ও খালগুলোর প্রকল্পে রয়েছে ভয়াবহ অনিয়ম। খালের তলদেশ না কেটে শুধুমাত্র পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে। প্রশস্ততাও কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে না গিয়ে লোকালয়ে জমে থাকে দীর্ঘদিন। কখনো কখনো নদীর পানি উল্টো লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
পুরাতন সাতক্ষীরাসহ একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা

পানিবন্দি এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা গণফোরামের সভাপতি আলীনুর খান বাবুল বলেন, “প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত করে পানি নিষ্কাশনের পথ খুলে দিতে হবে। নদী-খাল খননে প্রকৃত গভীরতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক ম্যাপ অনুসরণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “অবৈধ দখল, নেট-পাটা উচ্ছেদ, পরিবেশবান্ধব জলব্যবস্থাপনা ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। অকেজো স্লুইস গেট ও বাঁধ দ্রুত সংস্কার করতে হবে।”

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কিছুটা উন্নতি হবে।”

আরও খবর

🔝