gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৭ জুলাই ২০২৫ ২ শ্রাবণ ১৪৩২
gramerkagoj
পবিত্র আশুরা: ইতিহাস, তাৎপর্য ও ইসলামসম্মত করণীয়-বর্জনীয়
প্রকাশ : শনিবার, ৫ জুলাই , ২০২৫, ১২:০৩:০০ পিএম
ইসলামী জাহান ডেস্ক:
GK_2025-07-05_6868bd2d18cac.jpg

ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসকে আশহুরুল হুরুম বা নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মহররম মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো ১০ তারিখ, যা “আশুরা” নামে পরিচিত। এ দিনটি শুধু শোক কিংবা শোক প্রকাশের দিন নয়, বরং এটি ইবাদত, ধৈর্য ও আল্লাহর রহমত লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।

হিজরতের আগেও কুরাইশরা এ দিনে রোজা রাখতেন, এবং হিজরতের পরেও রাসুল (সা.) মুসলিমদেরকে এ দিন রোজা রাখার আদেশ দেন।

আশুরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো: হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা পান এই দিনেই। হজরত নূহ (আ.)-এর কিশতিও এদিনে জুদি পর্বতে অবতরণ করে। হজরত আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হয়। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত।

তবে ইসলামে কারবালার ঘটনার কারণে শোকানুষ্ঠান, আত্মরক্তপাত বা তাজিয়া মিছিলের অনুমোদন নেই। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে এসব বিদআত ও গোমরাহি।

আশুরার প্রকৃত আমল ও করণীয়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “আশুরার দিনে রোজা রাখলে আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” – (সহিহ মুসলিম)

তবে শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখলে তা ইহুদিদের অনুকরণ হয়ে যায়। এজন্য তিনি বলেছিলেন: “আমরা পরবর্তী বছর বেঁচে থাকলে ৯ তারিখও রোজা রাখব।” – (সহিহ মুসলিম)

সুন্নাহ অনুযায়ী রোজার সঠিক নিয়ম: ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখা – উত্তম। ১০ ও ১১ মহররম – বৈধ (যদি ৯ তারিখ না রাখতে পারেন)। ৯, ১০ ও ১১ – কেউ কেউ এ মতও দিয়েছেন।

নফল ইবাদত ও দান সদকা:
❒ কোরআন তিলাওয়াত।
❒ নফল নামাজ ও দোয়া।
❒ গরিবদের মাঝে খাদ্য বিতরণ।
❒ পরিবারকে ভালো খাবার খাওয়ানো (হাদিস দ্বারা সমর্থিত)।

অনেক মুসলিম সমাজে আশুরাকে ঘিরে এমন কিছু প্রথা ও আচরণ চালু আছে, যেগুলোর কোনো ইসলামী ভিত্তি নেই। বরং তা শরিয়তের দৃষ্টিতে স্পষ্ট বিদআত ও হারাম হিসেবে বিবেচিত।

যেসব কাজ আশুরায় নিষিদ্ধ ও বিদআত
ইসলামে এমন কিছু প্রথা বা রেওয়াজ চালু আছে যেগুলোর কোনো শরিয়তসম্মত ভিত্তি নেই—বরং এগুলো স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। যেমন:

❒ নিজ দেহে ছুরি, চাকু, ব্লেড, লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হওয়া।
❒ রণপ্রস্তুতির মহড়া।
❒ আলোকসজ্জা ও মোমবাতি প্রজ্বালন।
❒ তাজিয়া মিছিল ও শোক মিছিল।
❒ মর্সিয়া বা করুণ সুরে শোকগীতি পাঠ।
❒ আশুরা উপলক্ষে নির্ধারিত নামাজ ও দোয়া।
❒ হালুয়া-রুটি বানিয়ে বিশেষভাবে বিতরণ করা।
❒ মহররমে বিয়েশাদি বন্ধ রাখা।

উল্লেখযোগ্য হলো—২০২৫ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নিজেই আত্মরক্তপাতকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে আশুরা উপলক্ষে ধর্মীয় অনুভূতির নামে এমন কিছু উদযাপন করা হয়, যা মূলত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি। অনেকে রেওয়াজকে ‘সংস্কৃতি’ বলে চালাতে চান, আবার কেউ কেউ দান-সদকার অজুহাতে বিতর্কিত কাজকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু ইসলাম সংস্কৃতির নামে শরিয়তবিরোধী কাজ অনুমোদন দেয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের শরিয়তের বাইরে নতুন কিছু যুক্ত করে, তা প্রত্যাখ্যাত।” – (সহিহ বুখারি)

আশুরা আমাদের যে শিক্ষা দেয়:
⚫ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো
⚫ ত্যাগ ও সবরের মহিমা
⚫ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা
⚫ বিদআত ও অতিরঞ্জিত আচার থেকে দূরে থাকা

ইমাম হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়ে দেয়—বিচারহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই প্রকৃত ইমান।

আমাদের করণীয় কী?
⚫ আশুরার প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করা
⚫ শরিয়তসিদ্ধ আমল পালন করা
⚫ আত্মশুদ্ধি ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া
⚫ শিরক, বিদআত, কুসংস্কার থেকে নিজেকে দূরে রাখা
⚫ আল্লাহর নৈকট্য লাভে প্রতিযোগিতা করা

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবনের তাওফিক দান করুন। কারবালার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শোক নয়, বরং সুন্নাহ অনুসরণ করে ইবাদতের মাধ্যমে আশুরা পালন করার শক্তি দান করুন।
আমিন।

আরও খবর

🔝