শিরোনাম |
❒ জগন্নাথের রথযাত্রা:
“রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম। পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।” — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জগন্নাথ দেবের রথ বানানো হয় ২০৬টি কাঠ দিয়ে—যা মানুষের দেহের ২০৬টি হাড়ের প্রতীক। রথের ১৬টি চাকা প্রতীক ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়, ৫টি কর্মেন্দ্রিয় এবং ৬টি রিপুর।
রথের রশি হলো মন, বুদ্ধি হলো সারথি আর ঈশ্বর স্বয়ং রথি—এই বার্তাই দেয়, মানুষের জীবনরথ চালায় পরমাত্মা, মানুষ নয়।
রথের প্রতিটি অংশে নাকি বাস করেন তেত্রিশ কোটি দেবতা। তাই রথের দড়ি স্পর্শ মানেই তেত্রিশ কোটি দেবতার আশীর্বাদ!
জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দিঘোষ, এই রথের দড়ির নাম শঙ্খচুড় নাগিনী, বড় ভাই বলরামের রথের নাম তালধ্বজ, এই রথের দড়ির নাম বাসুকি নাগ, ও বোন শুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন, এই রথের দড়ির নাম স্বর্নচুড় নাগিন।
আরও পড়ুন...
শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের নয়দিনব্যাপী মহোৎসব শুরু
কবি বন্দে আলী মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ
রথযাত্রার শোভাযাত্রা শুরু হয় বলরামের রথ দিয়ে, মাঝে সুভদ্রা, শেষে জগন্নাথের রথ। রথযাত্রার পথে পড়ে তিনটি রেখা, যা গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর প্রতীক।
উল্টো রথের পরে জগন্নাথ ওই রথে আর ওঠেন না—রথ ভেঙে কাঠ পুড়িয়ে হয় প্রসাদ রান্না।
ওড়িশার পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান নয়, বরং অলৌকিক ও রহস্যময় ঘটনার কেন্দ্র। বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথ মূর্তিতে আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় (হৃৎপিণ্ড)। মূর্তিগুলো অর্ধসমাপ্ত, যা কৃষ্ণের মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত হাড় দিয়ে নির্মিত।
আরও পড়ুন...
একই রাতে খুলনায় দুই খুন, দুইজন গুলিবিদ্ধ
আজ কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার চার্লি ম্যাককার্টনির জন্মদিন
মন্দির ঘিরে ৮টি অলৌকিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিহীন ঘটনা: মন্দিরের ওপর দিয়ে পাখি বা বিমান উড়ে না। পতাকা সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে। সিংহদ্বারে ঢুকলেই সমুদ্রের গর্জন বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরে কোনও সময় ছায়া পড়ে না। রান্নার হাঁড়িতে উপরের খাবার আগে, নিচেরটা পরে রান্না হয়। প্রতিদিন যত ভক্তই আসুক, প্রসাদ কখনো বেশি বা কম হয় না। ১২–১৯ বছর পর দেবতাদের মূর্তি পাল্টানো হয়। এই সময় মধ্যরাতে চোখ বাঁধা পুরোহিতরা গোপনে মূর্তির ‘চোখ’ স্থাপন করেন। কেউ যদি দেখেও ফেলেন, বিশ্বাস করা হয় তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। পতাকা পরিবর্তন বন্ধ হলে মন্দির ১৮ বছর বন্ধ! মন্দিরের চূড়ায় প্রতিদিন একজন বিশেষ মানুষ (নিয়োগপ্রাপ্ত সেবক) চূড়ায় উঠে পতাকা বদলান। যদি একদিনও পতাকা না পাল্টানো হয়, তাহলে ১৮ বছর মন্দির বন্ধ হয়ে যাবে এমন বিশ্বাস। সমুদ্র থেকে ভেসে আসা অলৌকিক কাঠ। দেবতাদের নতুন মূর্তি তৈরির জন্য “দারু ব্রহ্ম” (ঈশ্বরীয় কাঠ) সমুদ্র থেকে নিজে থেকেই ভেসে আসে। সেই কাঠে থাকে চিহ্ন কেউ তা খুঁজে পায় না, শুধু নির্দিষ্ট সেবাইতরাই চিনতে পারেন।
বাংলা থেকে চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন জগন্নাথের পরম ভক্ত। আজও ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে জগন্নাথ উপাসনা।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির শুধুই স্থাপত্য নয়, এটি বিশ্বাস, ভক্তি এবং অলৌকিকতার মিলনক্ষেত্র। ধর্মবিশ্বাসী হোন বা নন, এই মন্দিরে প্রবেশ করলেই অনুভব করা যায় এক অতিমানবিক শক্তির স্পর্শ।
জয় জগন্নাথ!