শিরোনাম |
খাদ্য অধিদপ্তরের চেয়ে কি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক-টিসিএফ মনোতোষ মজুমদারের ক্ষমতা বেশি? তা না হলে কোন ক্ষমতা বলে বদলি আদেশের পরও চার মাসের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন? কার ‘আশীর্বাদ’ ছিল সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও তার জামাই মাগুরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগের অত্যন্ত ঘনিষ্ট এই মনোতোষের উপর?
এমন প্রশ্ন এখন খাদ্য বিভাগ জুড়ে। খুলনা বিভাগের খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে যেমন কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে মনোতোষ মজুমদার চলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও একইভাবেই চলছেন। তার এই ধৃষ্টতা দেখে অবাক হচ্ছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আওয়ামী লীগ আমলে খুলনা ডিভিশনে খাদ্য বিভাগে দোর্দন্ড প্রতাপশালী কর্মকর্তা ছিলেন মনোতোষ মজুমদার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যশোর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ওই সময় যশোর শহরের নিরালাপট্টিতে ফ্ল্যাট কিনে আলোচনায় আসেন। এরপর যশোর থেকে বদলি হন বাগেরহাটে। সেখান থেকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সাথে সখ্য গড়ে মাগুরা সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হন। এর কিছুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে মাগুরার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর আঁতাত করেন তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাই মাগুরার জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগের সাথে। এর পাশাপাশি মন্ত্রীর পদবির সাথে ‘মজুমদার’ পদবি মিল থাকায় সোনায় সোহাগা হয় তার জন্য। পরিচয় দেয়া শুরু করেন খাদ্য মন্ত্রীর ‘আত্মীয়’ হিসেবে! আর কথিত এই ‘আত্মীয়’ খাদ্য বিভাগে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। এরপর নানা ধরনের অনৈতিক পন্থায় কোটি কোটি টাকা হাতানো শুরু করেন মনোতোষ। তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করতে থাকেন। এমনকি মনোতোষ মজুমদার খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরও চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মাগুরার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ক্ষুব্ধ লোকজন মনোতোষ মজুমদারের অফিস ভাংচুর করে। আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যান ধূর্ত মনোতোষ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যে যেসব জেলা প্রশাসককে বদলি করা হয় তার মধ্যে মাগুরার জেলা প্রশাসকও ছিলেন। এরপর মাগুরা সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোতোষ মজুমদারকে গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলায় বদলি করে খাদ্য অধিদপ্তর। বদলির ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন খাদ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম।
অথচ চার মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বালিয়াকান্দি উপজেলায় যোগদান করেননি বহুল আলোচিত মনোতোষ। এমনকি তার বদলির আদেশ বাতিলও হয়নি। তাহলে তিনি কীভাবে মাগুরা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে চার মাস বহাল ছিলেন? তার এই বদলি আদেশ কার্যকর করার দায়িত্বটাওবা কার ছিল? কেন চার মাসেও অধিদপ্তরের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। তাহলে কি অনৈতিক সুবিধা দিয়ে অধিদপ্তরের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান?
সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য বিভাগে হৈচৈ বেড়ে যাওয়ায় অতি সম্প্রতি তিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। যদিও চারমাসে কেন যোগদান করেননি তার সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউই।
এ ব্যাপারে জানতে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক-ডিসি ফুড সন্দ্বীপ কুমার দাসকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা-আরসি ফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের বদলি অধিদপ্তরের হাতে। তাছাড়া, মনোতোষ অতি সম্প্রতি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।’