প্রকাশ: বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩, ১০:৫১ পিএম |

যশোরের কেশবপুরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ প্রায় দুই যুগ আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েছে। ২৫ বছর সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক নেতা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ অনেকেই রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
১৯৯৩ সালের ৯ মে কেশবপুর উপজেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান সভাপতি এবং বর্তমান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দ্বিতীয় মেয়াদে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক ও ইকবাল হোসেন খান সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য হওয়ার অভিযোগ তুলে ১৯৯৮ সালের ৩ মার্চ যুবলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ২৫ বছরেও উপজেলা যুবলীগের আর কোন সম্মেলন হয়নি। কমিটি ভেঙে দেয়ার ৫ বছর পর ২০০৩ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন ছাত্রদল নেতা তরুণ অধিকারীকে আহ্বায়ক ও তৎকালীন ছাত্র সমাজ নেতা শাহাদাৎ হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০০৬ সালের ২৯ মে তরুণ অধিকারী মৃত্যুবরণ করায় শাহাদাৎ হোসেন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেস।
সংগঠনের অনেক নেতা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সুবিধাবাদি নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ২০০৯ সালের ৯ আগস্ট তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুর রহমানের বাসায় চাঁদা আনতে যেয়ে কতিপয় যুবলীগ নেতাকর্মী র্যাবের হাতে আটক হন। এছাড়া, প্রভাবশালী কর্মীরা বাড়ি ও জমি দখল, পাওনা টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে যশোর জেলা যুবলীগ ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এরপর ৪ বছর কোন কমিটি গঠন না হওয়ায় যুবলীগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে ২০১৩ সালের ১৬ অক্টোবর ৩ মাসের মধ্যে সম্মেলন করার দায়িত্ব দিয়ে কাজী মুজাহেদুল ইসলাম পান্নাকে আহ্বায়ক ও শহিদুজ্জামান শহিদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে আরও একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেও ৪ বছরের মধ্যে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ ২০১৭ সালের ২০ জুলাই আবারও একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এতে আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পৌরসভার কাউন্সিলর শহিদুজ্জামান শহিদকে আহ্বায়ক এবং পাঁজিয়ার আবু সাঈদ লাভলু ও গৌরীঘোনার এস এম সোহেল রানাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এ সময় আহ্বায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে শহরে আনন্দ মিছিল-সমাবেশ হতে থাকে।
নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তি ও বিএনপি জামায়াতের সক্রিয় কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে অভিযোগ তুলে বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি কমিটির বিতর্কিতদের ফিরিস্তি তুলে ধরে অবিলম্বে এ কমিটি বাতিলের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বাড়ি ফেরার পথে মারপিটের শিকার হন। এরপর যুবলীগের পান্না গ্রুপ ও শহীদ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। এরই মধ্যে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সোহেল রানা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে শহিদ ও লাভলুর নেতৃত্বে প্রতি ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ চলতে থাকে। এসময় ব্যাপকভাবে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে এবং এ সংক্রান্ত অডিও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের পক্ষে গত ৬ বছরেও উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি শহিদ ও লাভলুর মধ্যে গ্রুপিং প্রকাশ্যে রূপ নিয়ছে। যা গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ফুল দেওয়ার সময় সামনে আসে।
সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ আহ্বায়ক কমিটির গঠনের পরই নেতারা সরকারি দলের ‘স্বাদ-আশ্বাদনে’ ব্যস্ত থাকেন। ফলে প্রায় দুই যুগ সম্মেলন না হওয়ায় পদ-পদবী প্রত্যাশী ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক, যুগ্ম আহ্বকায়ক পলাশ মল্লিক, খন্দকার আজিজুল ইসালাম ও হাবিবুর রহমান খান মুকুলসহ বহু নেতা কয়েক বছর ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে প্রবেশের জন্য বসেছিলেন। এছাড়া ছাত্রলীগের কমপক্ষে ৩০ নেতাকর্মী যুবলীগে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে পলাশ মল্লিক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও খন্দকার আজিজ জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যরা বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে ফেস্টুন টাঙিয়ে নেতৃত্ব প্রত্যাশার জানান দিলেও হতাশায় ভুগছেন।
উপজেলা ছাত্রীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বর্তমান যশোর জেলা পরিষদের সদস্য খন্দকার আজিজুল ইসলাম গ্রামের কাগজকে বলেন, যথা সময়ে যুব লীগের সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ায় আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শহীদুজ্জামান শহীদ তার ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে জানান, কেশবপুর উপজেলার কোন শাখায় যুবলীগের মধ্যে কোন গ্রুপিং ছিল না, এখনো নেই। জেলা নেতৃবৃন্দকে বারবার সম্মেলনের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ার কারণে জেলার ৮ উপজেলার কোনটিতেই সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি।