প্রকাশ: বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম |

যশোরের কেশবপুরে মনিরুজ্জামান মনি (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বাগেরহাটে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। ২৪ মে দুপুরে কেশবপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন মনিরুজ্জামান মনির বাবা উপজেলার মাদারডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হালিম গাজী।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুল হালিম গাজী বলেন, তার একমাত্র ছেলে মনিরুজ্জামান মনি পাবনা জেলার আর এম একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে সে তার বড় বোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মনিরা খাতুন শান্তার সঙ্গে থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতো। ফেসবুকের মাধ্যমে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানার বর্ষিবাওয়া এলাকার মিশকাতুল মনির মহুয়া (১৭) নামে একটি মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের পরিচয় হয়। এর সূত্র ধরে গত ঈদুল ফিতরের দিন (২২ এপ্রিল) সে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এলাকায় বেড়াতে যায়। সেখানে মেয়ের পরিবার পরিকল্পিতভাবে তাকে আটক করে জোরপূর্বক ১০০ টাকার স্ট্যা¤েপর মাধ্যমে বিয়ে দেন। মেয়ের বাবা মনিরুজ্জামান রাজি না থাকলেও তার মা নিপা বেগম পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে কাজটি করেন। তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাবনা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মেয়ের পরিবার তার মেয়েকে ছাড়া তাকে আসতে দেবে না বলে জানায়। পরে ২৯ এপ্রিল মনি এবং মিশকাতুল পাবনা ভাড়া বাসায় যায়। তার ছেলে ৬টি বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এরপর ১১ মে মিশকাতুল মনিরুজ্জামানকে তার মা নিপা বেগমের ভাড়া করে দেওয়া বাগেরহাটের হরিণখানা এলাকার বাসায় নিয়ে যায়। মনিরুজ্জামানের ফোন বন্ধ থাকায় মিশকাতুলের মোবাইল নম্বরে অনেক বার ফোন করে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসার জন্য বলা হয়। কিš মেয়ে জানায় ‘আপনার ছেলে আর ফিরে যাবে না’। মেয়েকে অনুরোধ করা হয় মনিরুজ্জামানকে পাবনায় বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপরেও মনিরুজ্জামান ফিরে যায়নি।
এরপর গত ১৮ মে দুপুরে বাগেরহাট সদর থানা পুলিশ তার মেয়ে মনিরা খাতুন শান্তার মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানায় তোমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে তারা স্বজনদের নিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে হাজির হন। এ সময় স্বজনরা মরদেহ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান তার গলাজুড়ে একটা মোটা কালো দাগ, দুই কনুই জখম, নাক ও মুখ ফোলা এবং মুখ দিয়ে রক্ত মিশ্রিত লালা বের হচ্ছে। এ থেকে ধারণা করা হয়, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার স্ত্রী মিশকাতুল মনির মহুয়াসহ তার পরিবারের লোকজন জড়িত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, নিহতের স্বজনদের দাবি মনিরুজ্জামান মনি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তারা এ ধরনের কোন বক্তব্য দেননি। মনিরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলা করতে চাইলে পুলিশ জানায়, এটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হত্যা মামলা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে আব্দুল হালিম গাজী দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছেলে হত্যার সুবিচার পেতে ও সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হালিম গাজীর মেয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরা খাতুন শান্তা এবং আব্দুল হালিম গাজীর ভাই আব্দুল হামিদ গাজী।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম বলেন, মনিরুজ্জামান আত্মহত্যা করতে পারে বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছিলেন। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য মরদেহের ময়না তদন্ত করতে পাঠানো হয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মনিরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কেউ হত্যা মামলা করার বিষয়ে জানাননি।