প্রকাশ: বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৪ এএম |

১৯৬২ সালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ছাড়াও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এখন ৮০ বছর বয়সে নানা রোগ শোকে শয্যাশায়ী। কিন্তু এ বয়সেও তাকে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় হতে হয়েছে আসামি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম নূরুল ইসলাম।
অন্যের জমিতে প্রবেশ করে গাছ কাটা, অস্ত্র প্রদর্শন করে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো, নারীর শ্লীলতাহানি ও সোনার গহনা ছিনতাই মামলার তিনি প্রধান আসামি। মিথ্যা অভিযোগের এ মামলাটি যশোর কোতোয়ালি থানা রেকর্ড করায় বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশসহ নিন্দা জানিয়েছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বৃহত্তর যশোর জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন যশোর চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ছিলেন যশোর উদীচীর প্রথম সভাপতি। তিনি আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। তার সন্তানেরাও দেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে সম্মানজনক পেশায় রয়েছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এবং বিভিন্ন মামলার কাগজপত্রের সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, তিনি যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর মৌজায় বিশাল সম্পত্তির একটি অংশ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক) বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করে জেস ডাক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে নানা কারণে জেস ডাক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং তিনি নির্ধারিত সময়ে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ব্যাংক তার বন্ধকী সম্পত্তিটুকু নিলামে তোলে। কিন্তু সেই নিলামে ব্যাংকের দায় পরিশোধ না হওয়ায় তার বাকি জমিও নিলামে তোলা হয়। পরবর্তীতে নূরুল ইসলাম ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করায় সেই নিলাম স্থগিত করা হয়। ২০২০ সালের ১০ মার্চ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার এবং ঋণ হিসাব অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। যা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ব্যাংকের মামলাকৃত জমি ফেরৎ দিতে ২০২০ সালের ২২ মার্চ যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
কিন্তু এখানেই সমস্যার শেষ না। বিভিন্ন মামলার কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পূর্বের নিলামে সম্পত্তির ২.৯৭ একর জমির ক্রেতা আসাদুজ্জামান হামিদপুর বাওড়ের ৫.৯৪ একর ও জেস ডাক প্রাইভেট লিমিটেডের ১০.১৮৮০ একর জমিসহ সমুদয় সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন। পরবর্তীতে মামলা মোকদ্দমা করে ওই সম্পত্তি জেস ডাকের পক্ষে পান নুরুল ইসলাম। এরপরও আসাদুজ্জানের ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকে। দফায় দফায় পরিদর্শনে আসাদুজ্জামানের বিপক্ষে প্রতিবেদন গেলেও তিনি থাকেন বহাল। সেসব ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই গত ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর যশোর কোতোয়ালি থানায় বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, নারীদের গলার সোনার গহনা ছিনতাই, মারপিট, নারীকে শ্লীলতাহানি, অস্ত্র প্রদর্শনসহ নানাবিধ অপরাধের অভিযোগ দেন আসাদুজ্জামান। যা ৭ ডিসেম্বর মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অথচ এসব ন্যাক্কারজনক অভিযোগ যার বিপক্ষে তোলা হয়েছে, সেই নূরুল ইসলাম ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ, রোগে শোকে কাতর ব্যক্তি। তাকে করা হয়েছে এক নম্বর আসামি। যা মেনে নিতে পারছেন না যশোরের অপরাপর বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ সুশীল সমাজের লোকজন। এ নিয়ে তারা নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।