প্রকাশ: শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:৪৭ পিএম |

যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশে তাঁর নীতি এবং কৌশল বাস্তবায়নের জন্য বিএনপিকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে? বিএনপির ঘারে বন্দুক রেখে কি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মার্কিন বলয়ে নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে? এই প্রশ্নটি এখন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের মানবাধীকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এই সংস্থাটি বাংলাদেশে গুম কমেছে বলে উল্লেখ করেছ। এর ফলে গুমের অভিযোগের কারণে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
তাছাড়া, বাংলাদেশে বিভিন্ন মার্কিন কর্মকর্তারা আসছেন এবং তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হলো তিনটি। প্রথমত তাঁরা বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চায়। দ্বিতীয়ত তাঁরা বাংলাদেশকে তাঁদের সামরিক বলয়ে আনতে চায় এবং তৃতীয়ত বাংলাদেশ যেনো কোয়াডে যোগদান করে সেটা নিশ্চিত করতে চায়। দুই দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। লু এর এই সফরের মধ্য দিয়েই বার্তাটা আরো সুস্পষ্টভাবে বলে দিবে বলে জানিয়েছ বিভিন্ন সূত্রগুলো।
গত ৪ মাসে বাংলাদেশে অন্তত ৫ জন মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সফর করে গেছেন। এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান সরকারের ভেতর অনেক দৃঢ়। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর উপর সরকার নির্ভরশীল নয়। আর এ জন্যেই কৌশলগত কারণে বিএনপিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটাই মনে করেন কেউ কেউ। বিএনপিকে দিয়ে এবং সুশীল সমাজকে দিয়ে আন্দোলনের নামে নানা রকম সমালোচনা করে সরকারের উপর এক চাপ সৃষ্টি করে।
গত ২ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোয়াডে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা-তদবির করে যাছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেছেন বাংলাদেশ কোনো জোটে যাবেনা। কোয়াডে যেনো বাংলাদেশ যোগ দেয় সেজন্যই বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাংলাদেশের মানবাধীকার নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে এবং সেই কারণেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের গুম নিয়ে সরব হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই গুমের অভিযোগেই র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাটি আসলে মানবাধিকারের জন্য ছিলোনা, বরং বাংলাদেশের উপর একধরণের
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এই অঞ্চলে কমে যাচ্ছে। আর এ কারণেই চীনের সাথে সম্পর্কের লাগাম যেনো বাংলাদেশ টেনে ধরে সেটিও নিশ্চিত করা তাঁদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কিছু কৌশলগত আগ্রহের জায়গা রয়েছে। আর সেই আগ্রহের জায়গাগুলো পূরণের জন্য এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী নির্বাচিন কিংবা অন্যান্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে সম্পূর্ন ভারতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাংলাদেশ যেনো চীন বলয় থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্বাধীন-সক্রিয় অবস্থান থেকে একটি মার্কিন বলয়ে প্রবেশ করে সেটি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর সেটি নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবে তাঁরা নির্বাচনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
তাঁরা মনে করছে যে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে মাঠে নামানো যায় এবং বিএনপি যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকে তাহলে বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচনের আগে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তখন বাংলাদেশের উপর অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া সহজ হবে, মূলত এই কারণেই বিএনপির আন্দোলনের এত আগ্রহ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এত নির্বাচনের কথা বলছেন বলে জানা গেছে। এখন নির্বাচনে এজ বছরেরও কম সময় বাকি আছে। এর মধ্যে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ করবেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই সাক্ষাতগুলোতেই কূটনৈতিক রহস্যগুলোর বিষয়টি খোলাসা হবে।