
করোনা অতিমারির দীর্ঘ ২৭ মাস পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম জনসভা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের প্রচারণায় প্রথম জনসভায় যশোরকে বেছে নেওয়ায় আগে থেকেই উদ্বেলিত ছিল যশোরবাসী। এই জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে নেতাকর্মীদের ছিল নানা প্রস্তুতি। ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত যশোর স্টেডিয়ামের স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই স্মৃতিচারণে আবেগ আপ্লুত হয় নেতাকর্মীরা। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের প্রচারণায় ব্যবহৃত মাইক কলরেডিকে আনা হয় ঢাকা থেকে। সবমিলিয়ে স্মরণযোগ্য একটি জনসভা আয়োজনে প্রস্তুত ছিল যশোর।
দুপুর দুটোয় প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন এমন প্রচার প্রচারণার পরও নেতাকর্মী আর দর্শনার্থীরা কাকডাকা ভোর থেকে দলে দলে জড়ো হতে থাকেন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখর ছিল যশোরের পথঘাট। শহরের পালবাড়ি, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, মণিহার বাসস্ট্যান্ড, মুড়লি, শংকরপুর বাসটার্মিনাল, চাঁচড়া, ধর্মতলা, আরবপুর থেকে মিছিলের জন¯্রােত ঢুকছিল শহরে। সব জনস্রোতের মোহনা ছিল যশোর স্টেডিয়াম। রং বেরংয়ের পোশাক, টুপি আর স্লোগানে স্লোগানে মুখর জন¯্রােত আছড়ে পড়ছিল যশোর শহরে। দুপুরের আগ থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় যশোর স্টেডিয়াম, ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠ, পৌরপার্কসহ আশপাশের এলাকা। অনেকে ঢুকতে না পেরে যে যেখানে পেরেছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে শুনেছেন প্রিয় নেত্রীর ভাষণ।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্ততৃা করেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। উজ্জীবিত ছিলেন মাঠে আগত দর্শক শ্রোতা। বাংলাদেশ ধন্য, শেখ হাসিনার জন্য স্লোগানে মুখর ছিল যশোর স্টেডিয়াম।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ২ টা ৩৬ মিনিট। মঞ্চে বক্তৃতা করছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক। বক্তৃতায় তিনি বলেন ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় তিনি যশোর এসেছেন পদ্মা সেতুর বদৌলতে। তার এই বক্তৃতার সাথে সাথে করতালি এবং হর্ষধ্বনি দেয় মাঠের নেতাকর্মী ও দর্শনার্থীরা। এমএম কলেজের আসাদ গেটের বিপরীতে আমেনা খাতুন গ্যালারির পূর্বপাশের গেট দিয়ে গাড়িতে করে মাঠে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। লাল সাদা কম্বিনেশনের তাঁতের শাড়িতে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে যেন জেগে উঠে গোটা স্টেডিয়াম। যশোরের এমপিরা তখন মাইকে স্লোগানে স্লোগানে প্রিয়নেত্রীকে বরণ করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর আসন গ্রহণের পর বাগেরহাটের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন আর সড়ক ও সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ‘খেলা হবে’ আর ‘অন্তর জ্বালা’ বক্তৃতায় নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেন।
এরপর দাঁড়াও পথিক বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে, জাগরণের এই গানের সাথে সমবেত নৃত্য শিল্পীদের করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান খোদ প্রধানমন্ত্রী। এরপর গীতিকাব্যে উঠে আসে পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর একুশে আগস্টসহ দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার নানা অপতৎপরতার ইতিকথা।
বক্তৃতার শুরুতেই যশোরের সাথে তার নিবিড় সম্পর্কের কথা বলে যশোর থেকে জনসভা শুরুর ঘোষণা দিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। এরপর তিনি যশোরের নানা উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা বলতে থাকেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি মজা করে বলেন, এতো কাজ করেছি যে বলেও শেষ হচ্ছে না। এ সময় তিনি উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৩টা ৪৮। কবিতার ছন্দে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেয়ার কিছু নাই, আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’ এরপরই তিনি সবার কাছ থেকে বিদায় নেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি মঞ্চ ত্যাগ করেন। আস্তে আস্তে ভাঙতে থাকে বহুদিনের প্রত্যাশিত মিলন মেলা। ফেরার সময়ও দূর দূরান্ত থেকে আগত নেতাকর্মীরা ফিরে যান প্রিয় নেত্রীকে দেখার সুখানুভূতি নিয়ে।