
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছিলেন, ‘কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। ফুটবল খুব সুন্দর, খুব নিষ্ঠুর!’ সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে আর্জেন্টাইনদের সামনে প্রকট হলো সেটা। হারের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে পুরো দল। ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন না। একসঙ্গে খেতে নামেননি মেসিরা। থমথমে পরিবেশ আর্জেন্টিনা শিবিরে। ম্যাচ শেষে বাসে ওঠার আগে মেসি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা মারা গিয়েছি।’ হতাশায় নিমজ্জিত আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকরাও। উল্টো চিত্র চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-সমর্থকদের। আর্জেন্টিনার হার বেশ উপভোগ করছেন তারা। আর্জেন্টিনা নিয়ে ট্রল ও খোঁচা মেরে যাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মেসিদের ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই ব্রাজিলে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে উঠে যায় ‘আর্জেন্টিনা’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ব্রাজিলভক্ত লিখেছেন, ‘তিনটি কারণে যেকোনো ব্রাজিলিয়ান খুশি হয়। এক. বারবিকিউ, দুই. ছুটির দিন, তিন. আর্জেন্টিনার কান্না।’ নীল-সাদা ফুটবল সমর্থকদের খোঁচা দিতে ভুলছেন না বাংলাদেশের সেলেসাও ভক্তরাও। তবে ভিন্ন উদাহরণও আছে। আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কেউ কেউ ব্রাজিলের কথা ভেবে সাবধানও। তেমনই একজন আর্জেন্টাইন ট্রলকারীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘এবার থামো, শান্ত হও। আগামীকাল ব্রাজিল খেলবে। ওরাও কিন্তু ফেভারিট!’
টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে এবারের বিশ্বকাপ মঞ্চে পা রাখে আর্জেন্টাইনরা। বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তাদেরই মাঠে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লিওনেল মেসি অ্যান্ড কোং। তাহলে সৌদি আরবকে কি হাল্কাভাবে নিয়েছিল স্কালোনির দল? র্যাঙ্কিংয়ে ৪৮ ধাপ পিছিয়ে থাকা দলের কাছে হারের ধাক্কাটা জোরেশোরেই লেগেছে আর্জেন্টিনা শিবিরে। আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র ‘ক্ল্যারিন’ জানিয়েছে, হারের পরে স্টেডিয়ামের টানেল দিয়ে ঢোকার সময় আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেননি। লুসাইল স্টেডিয়ামের ড্রসিংরুমে প্রায় ১ ঘণ্টা বসেছিলেন ফুটবলাররা। সেখানে মেসি মুখ খোলেননি। কিন্তু বাসে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সামনে মেসি বলেন, ‘আমরা মারা গিয়েছি। এটাই সত্যি। কারণ, আমরা ভাবতে পারিনি এভাবে হারবো। তিন পয়েন্টের আশায় মাঠে নেমেছিলাম। সামনে যা আসবে তার জন্য তৈরি থাকতে হবে। আমাদের জিততেই হবে। তবে সবটা আমাদের ওপরই নির্ভর করছে।’
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পে ফেরার পথে বাসের মধ্যেও মুখ খোলেন অধিনায়ক মেসি। বাসে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা জানি এই দলটা কী দিয়ে তৈরি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। সামনের দিকে তাকাও।’ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পরে নিজের ঘরে চলে যান মেসি। বাকি ফুটবলাররাও নিজেদের ঘরে যান। একসঙ্গে খেতে নামেননি তারা। ঘরে থেকে পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস তুলে ধরতে মঙ্গলবার রাতেই একটি বৈঠক ডাকেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনা দলে বেশির ভাগ ফুটবলার তরুণ। তারা এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলছেন। এই হারের ধাক্কায় তাদের মনোবল তলানিতে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কা কোচের। তাই সবাইকে ডেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেখানে কথা বলেছেন মেসিও। গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে তাদের কেমন খেলতে হবে সে বিষয়ে কথা বলেছেন মেসিরা।
জানা গিয়েছে, নৈশভোজেও খুব একটা কথা বলছিলেন না ফুটবলাররা। তবে তার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটবলাররা একে অপরকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। এক হারের ধাক্কায় বদলে গিয়েছে আর্জেন্টিনার অনুশীলনের সময়ও। আগে সন্ধ্যা ৬টা বা কখনো দুপুর ৩টা থেকে অনুশীলন করতেন মেসিরা। কিন্তু গতকাল বেলা ১১টা থেকে অনুশীলন করেছেন তারা।
সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হার বড় দলগুলোর প্রতি একটা সতর্ক বার্তা। ফেভারিট দলগুলো এখন বাড়তি হিসাবনিকাশ কষছে। আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। গত মঙ্গলবার এ মাঠেই আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে সৌদি আরব। এশিয়ান দলটির তুলনায় সার্বিয়া আরও গোছানো আর শক্তিশালী দল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২১ নম্বরে সার্বিয়া। র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা ব্রাজিল তাদের সমীহ করছে। গোলরক্ষক আলিসন বেকার বলেছেন, ‘জিততে হলে নিখুঁত ফুটবল খেলতে হবে। কারণ, প্রতিটি দলই যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অন্যরকম প্যাশন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসে।’
সতর্ক ব্রাজিলের ভক্ত-সমর্থকরাও। নিকট অতীতে বিশ্বকাপে অঘটনের শিকার হওয়ার যন্ত্রণা ব্রাজিলেরও আছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিজ ঘরে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্রাজিল। সেই ম্যাচের দিকে ইঙ্গিত করে এক ব্রাজিলিয়ানের টুইট, ‘আর্জেন্টিনার হার বড় অঘটন হতে পারে, কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় লজ্জার ঘটনা তো স্মরণও করা যায় না, তাই নয় কি!