প্রকাশ: বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ৩:০৩ পিএম |

১৪ দলের অন্যতম নেতা দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন যে ১৪ দল এখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে, আস্তে আস্তে মৃত্যুবরণ করবে। বিবিসি বাংলায় তার সাক্ষাৎকারের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য ১৪ দলের শরিকরা। তবে ১৪ দলের শরিকদের মন ভালো নেই, তাদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ ক্রমশ প্রকাশ হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ১৪ দলের অনেক নেতাই প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন নীতি-কৌশলের সমালোচনা করছেন। একমাত্র হাসানুল হক ইনু ছাড়া ১৪ দলের অন্য কোন শরিকই সরকারের প্রতি সমর্থন সূচক কোন বক্তব্য রাখছেন না। তাই প্রশ্ন উঠেছে যে, ১৪ দলের ভবিষ্যৎ কি? ১৪ দল কি মৃত্যুবরণ করবে? আওয়ামী লীগ জোটবিহীন ভাবেই কি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে যাচ্ছে?
বাংলাদেশ রাজনীতিতে ১৪ দলের একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির দাপট রাজনীতিতে সুস্পষ্ট হয় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে থাকে, ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এবং সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়। ২০০৮ এর নির্বাচনের সময় ১৪ দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মহা জোট গঠন করে। মহাজোটের অন্যতম শরিক ছিল জাতীয় পার্টি।
১৪ দল আওয়ামী লীগের আদর্শিক, যেখানে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুতে বিশ্বাস করে এবং স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদেরকে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত করতে চায় তাদেরই রাজনৈতিক জোট হল ১৪ দল। ২০০৮ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে নিয়ে এগোতে থাকে। সেই সময় ১৪ দলের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়। এছাড়াও ২০০৯ সালের শেষদিকে ১৪ দলীয় জোট থেকে হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ নির্বাচনের সময় রাশেদ খান মেননও ১৪ দলের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় হাসানুল হক ইনু এবং রাশেদ খান মেনন ১৪ দল থেকে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর একলা চলো নীতি অনুসরণ করতে থাকে। ১৪ দলকে এড়িয়ে যায়।
১৪ দলের সে সময় সমন্বয়ক ছিলেন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যুর পর ১৪ দলের কার্যক্রম একেবারেই স্তিমিত হয়ে পড়ে। এই সময়ে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুকে। কিন্তু আমু দায়িত্ব গ্রহণের পর সক্রিয় হয়নি। বরঞ্চ ১৪ দলকে এক ধরনের উপেক্ষার নীতি অনুসরণ করতে থাকে সরকার। এই ধারাবাহিকতায় এখন ১৪ মৃত প্রায়। ১৪ দলের শরিকরা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট নন। এবং তারা এখন প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত তার রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করেনি। একলা চলো অবস্থান থেকেও সরে আসেনি। নির্বাচনের এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি আছে এই সময়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ কি একলাই চলবে? ১৪ দল কি মৃত হয়ে যাবে? ১৪ দলের নেতারাও ১৪ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার কথা বলছেন।