gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাসের প্রয়াণ দিবস আজ
প্রকাশ : শুক্রবার, ১২ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:০০:০০ পিএম , আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৫২:৪২ পিএম
কাগজ সংবাদ:
GK_2024-04-12_661922c333653.jpg

যশোরের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সুকুমার দাসের প্রথম প্রয়াণ দিবস আজ (১২ এপ্রিল)। ২০২৩ সালের এ দিনের রাত ৯টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ৬৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। পারিবারিক ও সাংগঠনিক আয়োজনে দিনটি পালন হচ্ছে।
আজ (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টায় পারিবারিক আয়োজনে নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে সুকুমার দাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে আলোক প্রজ্জ্বালন করা হয়। এছাড়াও বিশেষ পূজা ও ভাগবত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে পুনশ্চের উদ্যোগে ১৩ এপ্রিল বিকেল ৫ টায় টাউনহল মাঠে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। পুনশ্চের বাংলা বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত হবে এ শ্রদ্ধা নিবেদন।

সুকুমার দাস মৃত্যুকালীন যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পুনশ্চ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা এ সংগঠক যশোর শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতিরও দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি দেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী যশোরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে উদীচী থেকে বের হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পুনশ্চ যশোর।
সুকুমার দাসকে যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিশেষ করে গানের শিক্ষার্থীরা 'স্যার' হিসেবে সম্মান জানাতেন। তিনি ছিলেন কলেজ শিক্ষক। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ছিলেন গানের শিক্ষক। বিশেষ করে গণসংগীতে তিনি ছিলেন এক ও অনন্য। তাঁর কণ্ঠে ভূপেন হাজারিকার গানও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন শ্রোতা। একাধারে তিনি ছিলেন তুখোড় সংগঠকও।
১৯৫৭ সালের ২৭ শে নভেম্বর (১৩৬৪ সনের ১৩ অগ্রহায়ন) শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা বিনয় কৃষ্ণ দাস এবং মা রেনু বালা দাস। সুকুমার দাস চুড়িপট্টি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন । ১৯৭৩ সালে সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭৫ এ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৭৯ তে সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স আর ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
১৯৭২ সালে ছাত্র রাজনীতিতে ( বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) যুক্ত হন। আর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দান করেন। ৭ সেপ্টম্বর ২০১৭ সালে ৩৩ বছরের চাকরী শেষে অবসর নেন তিনি। তিনি দৈনিক স্ফুলিঙ্গে, ব্র্যাক, নিজেরা করি, ডিডিপিতেও কিছুদিন কাজ করেছেন।
১৯৭৩ সালে যশোর উদীচীর সাথে যুক্ত হন এবং ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত একাধিকবার এ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে তিনি গড়ে তোলেন আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। যশোরে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলনী পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পদ্ধতিগত সঙ্গীত শিক্ষার বেসরকারি সঙ্গীত শিক্ষা বোর্ড ধ্রুব পরিষদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরে দীর্ঘ ২৮ বছর তিনি মূল দায়িত্বে ছিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্যসহ যশোরেরর সভাপতি এবং খুলনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। ধ্রুব পরিষদের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন । এছাড়া টিআইবি যশোর সনাকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পালন করেছেন যশোর শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতির দায়িত্ব ।
তার সুরকরা গান 'আয় আয় দিন বদলের প্রত্যয়' গানটি যশোর জেলা প্রশাসনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারই সুর করা আরেকটি গান 'আরশীর সামনে একা একা দাঁড়িয়ে' উদীচীর সংগঠন সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে
তার সুর করা মাইকেল মধূসূদন দত্তের রচিত ব্রজাঙ্গনা কাব্য সনেট ও নাটকের অসংখ্য গান বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার পরিবেশিত হয়েছে ও হচ্ছে । তিনি অসংখ্য দেশের গান, গণসঙ্গীত, ছড়া গান ও আধুনিক গানের সুর করেছেন। গণসঙ্গীতের প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ সারাদেশে কাজ করে চলেছেন।
তার নেতৃত্বে বাংলা ১৪০০ সনে যশোরে জাতীয় পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী লোকসঙ্গীত উৎসব, ১৯৯৯ সালে উদীচীর জাতীয় সম্মেলন, ২০১০ সালে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলনী পরিষদের জাতীয় সম্মেলন, ১৯৯১ সালে ৮ দিনব্যাপী বিজয়ের বিশ বছর পালন হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ৭ দিনব্যাপী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, শান্তি নিকেতনসহ নানা অঞ্চলে গণসঙ্গীতের দল নিয়ে যান। যশোরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা উন্নয়নের সাথে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।
প্রয়াণ দিবসে তার আত্মার সদগতি কামনায় সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছেন তার স্ত্রী শুক্লা দাস ও মেয়ে সিঁথি প্রষা দাস।
এদিকে আগামীকাল (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৫ টায় টাউনহল মাঠে সুকুমার দাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য বিনম্র আহবান জানিয়েছেন পুনশ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্নালাল দে।

আরও খবর

🔝