gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
আজ চাঁদ দেখার চেষ্টা করবেন অসংখ্য মানুষ পরশু ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:০১:০০ এ এম , আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৩:০৫ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-04-08_66141489334fd.jfif

ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক! এ বছর ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঈদুল ফিতর মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়। ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকেল থেকেই শাওয়ালের চাঁদ দেখার জন্য অসংখ্য মুসলিম আকাশ পানে চেয়ে থাকবেন। যদি আজ চাঁদ দেখা যায় তাহলে তাদের আনন্দের আর সীমা থাকবে না। আর কোনো কারণে যদি আজ চাঁদ দেখা না যায় তাহলে উল্লসিত এসব মানুষ কিছুটা হলেও হতাশ হবেন।
তবে, আবহাওয়া অফিস বলছে, এ বছর ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবার যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে দু’টি ঈদের জামাত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি সকাল ৮ টায় অপরটি ৯ টায়।
ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই শামিল হবেন ঈদগাহে। সেখানে দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সঙ্গে। দোয়া ও মোনাজাতে শরিক হবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামের বিধান সেটি।
এদিকে, এবারই প্রথম ঈদে যশোরসহ বাংলাদেশের সাংবাদিকরা একটানা ছয়দিন ছুটি ভোগ করছেন। তবে, সর্বপ্রথম যশোর সংবাদপত্র পরিষদ ছয়দিন ছুটির ঘোষণা দেয়। এরপর অন্যান্য সংগঠন ছয়দিন ছুটি দিয়েছে।
ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এ ঈদে সেমাইয়ের সাথে থাকে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবার। হাসপাতাল ও এতিমখানায়ও বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকে। এদিকে, কাপড়চোপড়-জুতার মার্কেটে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটার ধুম। তীব্র গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেটে অবস্থান করছে। শেষ সময়ের ভিড় কাঁচাবাজারসহ মাংস, মুরগি, মশলা ও পোলাও-এর চালের দোকানগুলোতে আরও বেশি ভিড় জমে উঠবে।
অপরদিকে, ঈদের আনন্দ পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ ছুটছে নাড়িপোতা গ্রামের দিকে। নানা ধরনের বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। তারপরও আনন্দ, গ্রামে যাচ্ছে!
শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মানুষের বক্তব্য, এ বছর সড়ক ও নৌপথে অনেকটা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন তারা। তবে, বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
ঈদ উপলক্ষে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), ই-পেমেন্ট গেটওয়ে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ (এমএফএস) সব ডিজিটাল সেবায় নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে।
ঈদুল ফিতর বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে উদযাপিত হয়। ঈদের মূল আনুষ্ঠানিকতা এক হলেও ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক কারণে গড়ে উঠেছে এই নান্দনিক বৈচিত্র্য।
মধ্যপ্রাচ্যের ঈদ উদযাপন প্রায় কাছাকাছি ধাঁচের। সৌদি আরবে সূর্য ওঠার একটু পরেই ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সাদা জুব্বার সঙ্গে আরবের ঐতিহ্যবাহী আবায়া পরিধান করতে দেখা যায় তাদের। প্রিয়জনদের সঙ্গে ‘আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। বাড়ির দরজায় অসহায়দের জন্য রাখা হয় শুকনো খাবারের প্যাকেট। ছোটদের ঈদি দেওয়া এবং নানা স্বাদের খাবার রান্নার প্রচলনও রয়েছে সৌদি আরবে।
মিসরে ঈদ উদযাপনে রয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। টানা চারদিন এখানে ঈদ উদযাপন করা হয়। মিসরীয়রা ঈদ উপলক্ষে ‘ফাত্তার’ নামের একটি বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি করে। এ ছাড়া ‘কাহক’ নামে একটি পিঠাও সেখানে বেশ জনপ্রিয়। অসহায় মানুষের মধ্যে ফিতরা বিতরণে মিসরীয়রা বেশ জোর দেয়। নারীরাও ঈদের নামাজ পড়তে বের হয় এখানে। ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানানোর রীতিও রয়েছে।
চীনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা জিনজিয়ান ও নিংজিয়া প্রদেশে ঈদ উপলক্ষে তিনদিন ছুটি থাকে। মুসলিমদের জন্য এখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঈদ উদযাপনের আয়োজন থাকে। ভেড়া জবাই করা হয় তাদের জন্য। ‘জিয়াং’ নামের একধরনের বিশেষ খাবার তৈরি করে তারা। ঈদের দিনের সম্মানার্থে রাস্তায় টোল আদায় বন্ধ থাকে।
মরক্কোতে ঈদগাহকে বলা হয় ‘মুসাল্লা’। ঈদের নামাজ আদায় করতে তারা মুসাল্লায় সমবেত হয়। নামাজ শেষে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটায়। বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন তৈরি করা হয় এই দিনে। এর মধ্যে কাব ঘাজাল, মাহাঞ্চা, ঘ্রিবা অন্যতম। ঈদ সালামির প্রচলনও রয়েছে এখানে।
তুরস্কে অত্যন্ত জমকালোভাবে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঈদের দিনকে তুর্কিরা ‘রামাদান বেরামি’ বা রামাদান উৎসব ও ‘সেকার বেরামি’ বা মিষ্টি উৎসব বলে আখ্যায়িত করে। শিশুরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বাড়ি-বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। ‘বাকলাভা’ তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এই দিনে বড়দের ডান হাতে চুম্বনের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে তারা।
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদের দিনকে বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতরি’। এ দিনটি ‘লেবারান’ হিসেবেও পরিচিত। ঈদের দিনে তারা বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চায়। ঈদের এই বিশেষ দিনটিতে নারীরা ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ এবং পুরুষেরা ‘বাজু কোকো’ নামের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে।
ঈদের দিনে আফগানরা অতিথিদের ‘জালেবি’ খেতে দেন। ‘তখম জাঙ্গি’ আফগানদের ঈদ উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ‘তখম জাঙ্গি’ হলো পুরুষেরা ফাঁকা ময়দানে একত্র হয়ে একজন আরেকজনের দিক সিদ্ধ ডিম ছোড়া। ছোটরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এ সময় তারা বলতে থাকেন, ‘খালা ঈদেত মোবারক’।
আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় বেশ ঘটা করেই ঈদ উদযাপন করা হয়। নতুন পোশাক পরে প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ- ছেলে-বুড়োসবাই মিলে ঈদের সকালে ঈদগাহে যায়, যা স্থানীয় ভাষায় ‘দুরবা’ নামে পরিচিত। মাঝে সুয়া, জল্লফ রাইস ও মইন মইন দেশটির জনপ্রিয় ঈদ রেসিপি বলে জানা যায়।
অপরদিকে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, ‘পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখুন। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দেবেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করবেন না।
বিজ্ঞপ্তিতে বাস মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে না দেওয়া। চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করে সে জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না।
বাস চালকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ওভার স্পিডে গাড়ি চালাবেন না, ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং করবেন না। ক্লান্তি বা অবসাদ বা অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব সময় সঙ্গে রাখুন। আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলুন।
লঞ্চ, স্টিমার ও স্পিডবোটের যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে, বলা হয়েছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে উঠবেন না। নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করবেন না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। যাত্রাপথে ঝড় দেখা দিলে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে নিজের জায়গায় অবস্থান করুন। স্পিডবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।
লঞ্চ, স্টিমার ও স্পিডবোট মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সংখ্যক ও নির্ধারিত গ্রেডের মাস্টার ও ড্রাইভার দ্বারা নৌযান পরিচালনা করুন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখুন। নৌযানের মাস্টার ব্রিজে যাত্রী সাধারণের অবাধ চলাচল বন্ধ করার জন্য দু’পাশ অস্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। লঞ্চে পর্যাপ্ত বয়া রাখুন।
লঞ্চ, স্টিমার, স্পিডবোট চালকদের প্রতি নির্দেশনা হচ্ছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান নিয়ে বন্দর ত্যাগ করুন। ডেকের ওপর যাত্রীদের বসার স্থানে মালামাল পরিবহন থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত সংখ্যক বয়া ও লাইফ জ্যাকেট নৌযানে রাখুন। নৌযানে মোবাইল ফোন ও রেডিও রাখুন এবং নিয়মিত আবহাওয়ার বুলেটিন শুনুন। প্রয়োজনে আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করুন।
ট্রেন যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রেনের ছাদে, বাফারে, পাদানিতে ও ইঞ্জিনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণকালে মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন। বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পুলিশকে অবহিত করুন। জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করুন।

আরও খবর

🔝