gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
এসেছে বৈশাখ নবআনন্দে
প্রকাশ : সোমবার, ৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৫৫:০০ পিএম
মাহমুদা রিনি:
GK_2024-04-08_661413a389193.jfif

বৈশাখ এসেছে মানেই নতুন বছরে পদার্পণ। পিছনে ফেলে আসা সুখ-দুঃখ মিশ্রিত পুরাতন স্মৃতি যত সযত্নে তুলে রেখে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো আবহমান কাল ধরে বাঙালির ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে নানারকম মাঙ্গলিক কার্যক্রম কিম্বা শোভাযাত্রায় বরণ করে নেয়া হাজার বছরের বাঙালীআনার অংশ। গৃহস্থের নিকানো আঙিনা ভরে উঠুক ফলে ফসলে বছরের প্রথম দিনটিতে তেমনই কামনা করা হয়। বাঙালি সংস্কৃতি ঐতিহ্য অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূল থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বসে বৈশাখীমেলা। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বাঙালি সংস্কৃতির পুরাতন ঐতিহ্যকে তুলে ধরে নতুন আঙ্গিকে নতুন প্রজন্মের কাছে এই নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। নতুন পোষাকে সজ্জিত হয়ে নব উদ্যোমে রংবাহারী সব আয়োজনে বরণ করে নতুন বছরকে। শিশুদের আনন্দ, হাসি-গান কলরোলের সাথে সকল বয়সী জনমানুষের উদ্বেলিত পদচারণায় সরগরম হয়ে ওঠে পয়লা বৈশাখের প্রভাতী আয়োজন। বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন, পান্তা-ইলিশ, দই-চিড়া, নানান পদের ভর্তা সহ এই দিনের খাবার তালিকায় বহন করে পুরনো দিনের ঐতিহ্য। মাটির গানে, দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুরে তালে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। সেই সাথে থাকে ব্যবসায়ীদের হালখাতার আয়োজন। পুরাতন লেনাদেনা পরিশোধ করে নতুন খাতা নবায়নের ধুম পড়ে যায়। এসবের ভিতর দিয়ে মানুষের আন্তরিক হৃদ্যতার বিনিময় হয় যেন নতুন করে।
নতুন সুরে বাজে বাঁশি। প্রাণে প্রাণ মিলে গেয়ে ওঠে নতুনের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো---’শিশুর গালে আঁকা হয় শিল্পীর তুলিতে নববর্ষের ছবি। জমে ওঠে মাটির সরায় পান্তা-ইলিশ। বন্ধ জানালা খুলে প্রবেশ করে নতুন আলো। ঝলমলে আলোয় রাঙা প্রভাত বাঙালি জাতির জন্য নিয়ে আসে নতুন বছর।
সত্যি বলতে বাঙালি যেন আজ তার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষায় খানিকটা বিপর্যস্ত। কোথায় যেন ভয়, দ্বিধা ভর করেছে সর্বত্র, বিশেষ করে যখন সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্কৃতিমনা মানুষ যখন নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। একসময় যে গভীর বিভীষিকায় আক্রান্ত হয়েছিল এই জাতি, রমনার বটমূলে বোমা হামলা থেকে শুরু করে যশোর উদীচী বোমা হামলা, বাউলদের উপর হামলা সহ দেশব্যাপী ছোটো বড়ো নানান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড এবং এর সুষ্ঠ, দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় সংস্কৃতি অঙ্গনের স্বতস্ফুর্ততা ব্যহত হতে শুরু করে। বর্তমান সময়ে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠলেও এখনো সাংস্কৃতিক অঙ্গন রাহুমুক্ত নয়। নানান অপসংস্কৃতি, অপপ্রচার, কুসংস্কার দেশজসংস্কৃতির প্রতি অনীহা সৃষ্টি করছে। আমরা বিদেশি সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছি। অথচ আমাদের আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস।
একটি দেশকে বিশ্বে সম্মানিত অবস্থান তৈরি করতে সেদেশের ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইদানিং আমাদের ভিতর পাঁচমিশালি সংস্কৃতির মিশ্রণ মানুষকে দ্বিধান্বিত করে। একশ্রেণী (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) সামান্য শিক্ষা ও সম্পদের দাপটে যথেচ্ছাচার ব্যবহার করে। উগ্রবাদী এই শ্রেণীকে দেখলে ভ্রম হতে বাধ্য যে এরা কোন দেশের নাগরিক ! দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ, মানবিক মূল্যবোধের বালাই না থাকায় এরা শুধু সম্পদ আর প্রাচুর্যের মোহে ছুটে চলে। তা সে অর্থ যে পথেই আসুক। সেখানে না আছে দায়িত্ববোধ, না আছে কর্তব্যনিষ্ঠা। আগামী প্রজন্মের জন্য কতটুকু দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছি তেমন ভাবনা কাজ করে না বিধায় দেশে এত দুর্নীতি, অনাচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
যে তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখবে জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষে দেশকে আলোকিত করার- শোনা যায় সেখানে চলে নেশাদ্রব্যের সয়লাব। মুষ্টিমেয় কিছুর বাইরে সাধারণ যুবসমাজ বিভ্রান্ত বেকারত্ব সহ ভবিষ্যতের স্বপ্নহীনতায়।
ঠিক ততখানিই বিপরীতমুখী সংস্কৃতির উত্থান ঘটেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। যে শিশু বড়ো হয়ে সমাজ বিনির্মান করবে, ধনী গরীব নির্বিশেষে সে শিশুর স্বপ্ন হতে হবে আগামী সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। অনেক জায়গায় ধর্মীয় শিক্ষার নামে তাদেরকে আশাহত ভিক্ষুক মানসিকতায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। নারীদের কর্মক্ষেত্রে অনুৎসাহিত করা, সাংস্কৃতিক কোনো কাজে তাদের সম্পৃক্ত থাকার বিরোধিতা করা ইত্যাদি কারণে আমাদের যুবসমাজে যোগ্য ব্যক্তিত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই জরুরি কিন্তু তা সমাজকে পেছানোর জন্য নয়। একসময় অজগ্রামে থেকেও মানুষ উচ্চশিক্ষিত হতে পেরেছে মানসিক জোরের কারণে। কারণ তারা স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে দায়িত্বশীল একজন মানুষ হবে। কিন্তু আজকাল যেন চিন্তার গণ্ডি একটা শ্রেণী পর্যন্ত বাঁধা। জোরেশোরে চেষ্টা চলছে মানুষ হিসেবে তুমি যেমনই হও, ভিতরে ভিতরে যা-ই করো বাইরে কাজ করো এমন যেন মৃত্যুর ওপারে তোমার জন্য প্রাসাদ তৈরি হয়। দুনিয়ায় জন্য বা মানুষের কল্যাণে কোনো কাজের দায়িত্ব তোমার নয়। এইধরনের একটা প্রহসনমূলক প্রচারণা কাজ করে সমাজের ভিতর। এটা আমার কথা নয় যারা এখনো শিক্ষার আলোবঞ্চিত, নিন্মবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত সমাজে বসবাস করে, ধর্মীয় বিধানের মূল বিষয়বস্তু অনুধাবন করার ক্ষমতা যেখানে কম সেইসব মানুষের বিশ্বাসের গণ্ডি এভাবে বেধে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হয়।
তবু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, কাজ করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী বিনির্মানে। নতুন বছর সকলের জন্য মঙ্গল বারতা বয়ে আনুক এমনই শুভকামনা...
নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।

আরও খবর

🔝