gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ যশোরের রূপদিয়া-ভাঙ্গা রেলপথ চালু

দক্ষিণ-পশ্চিমের সাথে কমলো ঢাকার দূরত্ব
প্রকাশ : রবিবার, ৩১ মার্চ , ২০২৪, ১২:০১:০০ এ এম , আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৩:০৫ পিএম
রবিউল খান, মহিউদ্দিন সানি ও আব্দুল কাদের:
GK_2024-03-30_660831edcd835.jpg

পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথে যশোরবাসীর রাজধানীতে পৌঁছাতে সময় বাঁচবে কয়েক ঘণ্টা। সড়কপথের পর এবার ট্রেনে সহজে ঢাকায় যাওয়ার আরও এক ধাপ অগ্রগতি হলো। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত গতি পরীক্ষা শুরু করেছে স্পেশাল ট্রায়াল ট্রেনে। এই রুটে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শনিবার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববারও পরীক্ষামূলকভাবে এই রুটে উচ্চগতির ট্রায়াল ট্রেন চলবে।
যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান জানান, সকালে তিনটি ওয়াগন নিয়ে পাথরভর্তি মালবাহী ট্রায়াল ট্রেন ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন থেকে ছেড়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। ভাঙ্গায় ফিরতি পথে যার গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। দুপুরে পাঁচটি কোচ নিয়ে ভাঙ্গা থেকে রূপদিয়া স্টেশনে আসা যাত্রীবাহী ট্রায়াল ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার। ট্রেনটি সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে ভাঙ্গা জংশনে ফিরেছে।
পরীক্ষামূলক যাত্রীবাহী ট্রায়াল ট্রেনের চালক শাখাওয়াত হোসেন জানান,‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের নিয়ে দুপুর ১ টা ১১ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি দুপুর ২ টা ৫ মিনিটে। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ৫৪ মিনিট। এর আগে সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রায়াল ট্রেনের ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
যাত্রীবাহী ট্রায়াল ট্রেনে ছিলেন আব্দুল কাদের শেখ। তিনি ভাঙ্গা-রূপদিয়া রেল প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল ইনচার্জ। তিনি বলেন,‘এতটা পথ আসতে এক ঘণ্টাও সময় লাগেনি। একটি নিরাপদ ট্রায়াল রানের সাক্ষী হলাম। এবার এতদিনের পরিশ্রমের সুফল জনগণ পাবেন। এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার।’
পদ্মাসেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি যশোরের মানুষ। ট্রেনের ট্রায়াল রানের খবর পেয়ে শনিবার সকাল থেকে রূপদিয়া রেলস্টেশনে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমির প্রধান শিক্ষক বিএম জহুরুল পারভেজ আবেগ আপ্লুত হয়ে নিজের মোবাইল ফোনে মালবাহী ট্রায়াল ট্রেনের রূপদিয়া স্টেশনে আসার ছবি তুলছিলেন। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন,‘রূপদিয়া রেলস্টেশন জৌলুস হারিয়ে ফেলেছিল। আজ এই স্টেশনের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন,‘রেল প্রকল্পের কারণে যশোরের মানুষের অভাবনীয় কল্যাণ হবে। যশোরের ফুল, সবজি, মাছ সহজেই ঢাকায় পৌঁছাবে। এ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।’
নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী আনন্দঘন এ মুহূর্তের সাক্ষী হতে দীর্ঘক্ষণ যাত্রীবাহী ট্রায়াল ট্রেনের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছালে তিনি ভেতরে ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এই ট্রেন লাইন চালু হলে আমরা সকালে ঢাকায় গিয়ে জরুরি কাজ সেরে দুপুরেই আবার বাড়ি ফিরতে পারবো। আমরা উন্নত চিকিৎসা, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যখন তখন রাজধানীতে যেতে আসতে পারবো।
জানা যায়, নতুন এ রুটে আগামী জুনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হবে। ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে ছুটবে ট্রেন। রূপদিয়া থেকে ট্রেনের কোনোটির গতিপথ যশোর হয়ে বেনাপোল, আবার কোনোটি খুলনা অভিমুখে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ওই রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্ম বিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হচ্ছে। ঢাকা থেকে লোহাগড়া রেলস্টেশনের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার ও নড়াইলের দূরত্ব ১৩৮ কিলোমিটার। জানা গেছে, ঢাকা-যশোর রেলপথের ভাঙ্গা পর্যন্ত ইতিমধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটি শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটি অনুমোদন হয়। অনুমোদনের সময়ে পুরো প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু ইউছুফ মো. শামীম বলেন, ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। কাজের অংশ হিসেবে ওই দুদিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে। আগামী জুনের মধ্যেই আশা করা যাচ্ছে এ রুটে ট্রেন চলবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরও খবর

🔝