gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
অমর একুশে আজ চেতনা শানিত করার দিন
প্রকাশ : বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১২:০১:০০ এ এম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৪৮:৩০ পিএম
আসাদ আসাদুজ্জামান:
GK_2024-02-20_65d4ca5c079e8.jpg

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। চেতনায় শপথ নেয়ার দিন। চেতনাকে শানিত করার দিন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার জন্য শপথ নেয়ার দিন।
একুশ বাঙালীর অত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার শিরোনাম। যে একুশের পথ ধরেই আসে বাঙালীর স্বাধীনতা। কবি বলেছেন, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা-কারো দানে পাওয়া নয়।’ কারণ, সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিকদের বুকের তাজা রক্তে সৃষ্টি যে একুশ, তার ধারাবাহিকতায় যে স্বাধীনতা বাঙালীকে অর্জন করতে হয়েছে, সেখানে ত্রিশ লাখ শহীদকে অকাতরে উপড়ে দিতে হয়েছে হৃৎপিন্ড। আর তিন লাখ বাঙালী নারীকে দিতে হয়েছে সম্ভ্রম।
‘একুশ আমার অহংকার। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ হচ্ছে চেতনার শিরোনাম।’ এমন অসংখ্য অজস্র কবিতার বাণী লেখার দিন আজ। আজ একুশ, মানে একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ শুধু শোকাবহ ভাষা শহীদ দিবসই নয়, অত্যান্ত গৌরবের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে। এদিনটি এমনই একটা দিন, যে দিনকে ঘিরে বাঙালী লিখেছেন অন্তত কয়েক লক্ষ কবিতা। হোক তিনি বিখ্যাত কিংবা অখ্যাত কবি। আর আব্দুল গফ্ফার চৌধুরীর সেই যে ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতাখানি কবে যে বাঙালী মাত্রই সবার বুকে গেঁথে গেলো! গান হয়ে গেলো প্রভাতফেরীর! সেই প্রভাতফেরীর গান গাইবার দিন আজ।
তৎকালীন পাকিস্তানী শোষকদের যে সাম্প্রদায়িক উস্কানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালীকে কালো রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিতে হয়েছিল, তাতে জন্ম নিয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। আর সে জাতীয়তাবাদের পথে হেঁটে হেঁটে টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান হয়েছিলেন বাঙালীর রাখাল রাজা, হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর বাঙালীর স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে তিনি হয়েছেন জাতির জনক।
সৌভাগ্য যে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভাষাগত পরিচয়ের পাশাপাশি এই ভাষায় কথা বলা মানুষ একটি দেশ পেয়েছে। বিশ্বে ২৫ কোটি বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে। অবশ্য সবাই এক রাষ্ট্রে বসবাস করে না। পশ্চিম বাংলার সবাই তো বাংলাভাষী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের অংশ নয়। তারা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। বাংলা ভাষা নিয়ে বাংলাদেশে যত আবেগ, পশ্চিম বাংলায় তা নেই। সেখানে মানুষ ভাষার ব্যাপারে উদাসীন। সেখানে শহরাঞ্চলের বাঙালীও ঘরের বাইরে হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামাঞ্চলের চিত্র ভিন্ন। তারা বাংলায় কথা বলা অব্যাহত রেখেছেন। পশ্চিম বাংলার সুশীলরা এ নিয়ে কোনও মাতামাতি করে না। অথচ তারা বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন অব্যাহতভাবে। শুধু কবি আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ২০১৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ভাষার জন্য আমাদের নতুন করে শহীদত্ব নেওয়ার সময় এসেছে।’
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কেন ‘উর্দু অ্যান্ড উর্দু শেল বি দ্য স্টেট ল্যা্গংুয়েজ অব পাকিস্তান’ বলেছিলেন জানা নেই। জিন্নাহ ছিলেন ইংলিশ লিবারেলিজম মুভমেন্টের সন্তান। সম্ভবত ইংলিশ সভ্যতার প্রতি আসক্তির কারণে তিনি ভারতের ইতিহাসকে উপেক্ষা করেছিলেন। না হয় আজ থেকে শত শত বছর আগে সুলতানি আমলে সুলতানেরা যে বাংলা ভাষার ওপর হাত দেননি, বরং ভাষা সাহিত্যের উন্নয়নে সহযোগিতা করেছিলেন, সেখানে জিন্নাহ কেন হঠাৎ করে এ কথা বলে বসলেন? অথচ জিন্নাহ নিজেই উর্দু জানতেন না। তিনি তার সারাজীবন বক্তৃতা দিতেন ইংরেজি ভাষায়। সম্ভবত তিনি ইতিহাস থেকে কোনও শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টাই করেননি।
পাকিস্তান সৃষ্টির দাবি ছিলো সাম্প্রদায়িক দাবি। ভাষা আন্দোলনের কারনে বাঙালী জাতি যে ভাষাভিত্তিক একটি স্বতন্ত্র জাতি, এই উপলব্ধির জন্ম নেয় তখনই। বিচিত্র ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তানের জন্মের ঠিকুজিতেই মৃত্যুর তারিখটা লেখা ছিলো। বড় লাট মাউনব্যাটেন বলেছিলেন, পাকিস্তান ২৫ বছর টিকবে। মওলানা আজাদ বলেছিলেন ২৩ বছর, আর নেহেরু বলেছিলেন ১৫/১৬ বছর। তাদের কথাই সত্য হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বিচিত্র ভৌগোলিক রাষ্ট্র শাসকশ্রেণির অদূরদর্শিতার কারণে টিকে থাকতে পারেনি। যে অদূরদর্শিতা প্রথম দেখিয়েছিলেন জিন্নাহ। ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে বাঙালী জাতীয়তাবাদী ধারা উন্মোচিত হয়েছিলো তার পরিচর্যা করেছেন ভাষা আন্দোলনের প্রায় সব নায়ক। দীর্ঘ ২৩ বছরের উত্থান পতনে বহু নায়ক প্রান্তিক ভূমিকায় চলে যান। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান অব্যাহতভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যান। সুশৃঙ্খলভাবে অব্যাহত রাখেন এই সংগ্রাম। যে কারণে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলো। তিনি হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা।
সেই জাতির পিতার হাত ধরে ত্রিশ লাখ কারিগর বুকের পাঁজর দিয়ে বিনির্মাণ করলেন বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি দেশ। যেখানে শোষন, বঞ্চনা থাকবে না। থাকবে সামাজিক ন্যায় বিচার। তেমন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাঁর কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণপন চেষ্টা করছেন স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার। যাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৬ কোটি বাঙালীকে আজ একুশের চেতনাতেই শপথ নিতে হবে।
চেতনা শানিত করার দিন আজ। আজ শপথ নেয়ার দিন।

আরও খবর

🔝