gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কেশবপুরে টেন্ডারের বাইরে কাটা হচ্ছে সড়কের অসংখ্য সরকারি গাছ

❒ ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর বাগবিতন্ডা

প্রকাশ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ০৯:৩০:০০ পিএম , আপডেট : সোমবার, ১৫ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:৫৯:৩২ পিএম
কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর):
GK_2024-02-14_65ccdccf1a8c5.jpg

যশোরের কেশবপুরে বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের পাশাপাশি ঠিকাদারের লোকজন জীবিত এবং ভালো গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দু’দিনে উপজেলার সাগরদাঁড়ি সড়কের বাগদা ঈদগাহ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ছয়টি গাছ মারার কথা থাকলে প্রায় ৪০টি গাছ কেটে ফেলে। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন বাধা দিলে তাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। টেন্ডারবহির্ভূত কেটে ফেলা এসব গাছ সড়কের পাশে ফেলে রাখলেও পরে গোপনে সেগুলো জেলা পরিষদের সাইনবোর্ড লাগানো গাড়িতে করে নিয়ে গেছে।
উপজেলা বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খসড়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে ১৯৫টি। এর মধ্যে উপজেলার কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কে ২১টি, হাসানপুর-বগা সড়কে ৫৭টি, কেশবপুর-কলাগাছি সড়কের দু’পাশে ২১টি, চুকনগর-সন্ন্যাসগাছা ও ভেরচি-কলাগাছি বাজার সড়কে ৮৯টি, সন্ন্যাসগাছা-ভরতভায়না সড়কে ৭টি গাছ মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজকে গাছগুলো কাটার কার্যাদেশ দেয়।
সরেজমিন কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কের দেউলি এলাকায় গেলে দেখা যায়, সড়কের পাশের অসংখ্য মরা গাছের সঙ্গে ভালো গাছও কেটে রাখা হয়েছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, সড়কের পাশে জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের গাছ রয়েছে। বনবিভাগের গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের নিয়ে দল গঠন করা হয়। বনবিভাগ তাদের গাছ বিক্রির পর ৪০ শতাংশ টাকা দলভুক্ত কৃষকদের দিয়ে থাকে। কিন্তু সোম ও মঙ্গলবার বাগদা ঈদগাহ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত জেলা পরিষদের টেন্ডারকৃত ৬টি গাছ মারার কথা থাকলেও প্রায় ৪০টি গাছ কেটে ফেলে। এ সময় কৃষকরা বাধা দিলে গাছ কাটা কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। তখন টেন্ডারবহিভূত কেটে ফেলা গাছ সড়কের পাশে রেখে দিলেও সুযোগ বুঝে জেলা পরিষদের সাইনবোর্ড লাগানো করিমনে (স্থানীয় বাহন) করে ওই কাঠ নিয়ে গেছে।
প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আতিয়ার গাজী বলেন, রেইনট্রি-মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছ কাটার সময় সড়কের পাশের ক্ষেতে পড়ে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করলে ইয়াসিন নামে ঠিকাদারের একজন প্রতিনিধি যান্ত্রিক করাত নিয়ে তার দিকে তেড়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকার কৃষদের ভেতর ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিতি দাবি জানান গাছ কাটার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ঠিকাদারের লোক। যে গাছ তারা কিনেছেন, সেগুলো কাটা হচ্ছে। বাদবাকি কথা ঠিকাদারের সঙ্গে দেখা করে বলেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা হাবিবুজ্জামান বলেন, ‘খসড়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে জেলা পরিষদের মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে ১৯৫টি। এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে জেলা পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। কেশবপুর-সাগরদাঁড়ির ওই সড়কের পাশের গাছ কাটার সময় অফিস থেকে লোক পাঠিয়েছিলাম, ঠিকাদারের লোকজন কতটি গাছ কাটতে পারবে তার ওয়ার্ক অর্ডার বা সংখ্যা দেখাতে পারে নাই। তারা (ঠিকাদারের লোকজন) বেশি গাছপালা কেটে ফেলাচ্ছে।’
যশোর জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার আল আমিন বলেন, কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি সড়কে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি গাছ কাটার টেন্ডার হয়েছে। এ গাছ কাটার টেন্ডার পেয়েছে রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজ।
রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজের পক্ষে গাছ কাটার দায়িত্বে থাকা হারুনার রশিদ বলেন, মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোই অপসারণ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের হাবিবুর রহমান যে গাছগুলো দেখিয়ে দিচ্ছেন সেগুলো কাটা হচ্ছে। কোন জীবিত গাছ কাটা হচ্ছে না।
জেলা পরিষদের কর্মচারী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চিঠি অনুযায়ী সড়কের পাশের মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটা হচ্ছে। মঙ্গলবার সাগরদাঁড়ি সড়কের ২৭টি গাছ কাটা হয়েছে। তবে কোনো গাছগুলো কাটতে হবে তার তালিকা (ওয়ার্ক অর্ডার) আমার কাছে নেই।’
এ ব্যাপারে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ‘মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের টেন্ডার হয়েছে। এর বাইরে কোনো গাছ কাটা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও খবর

🔝