gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কেশবপুরে শিক্ষক সমিতির কথায় চলে শিক্ষা অফিস!

❒ বাবুর ১৩ ‘সেনাপতির’ নিয়ন্ত্রণে গোটা উপজেলা

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১১:০১:০০ পিএম , আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৩:০৫ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-02-13_65cb9069090c5.jpg

বদলি, উচ্চতর গ্রেড প্রদান, জিপিএফ লোন, ডিপিএড ডেপুটেশন, পিআরএল-পেনশন, হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে স্লিপ, রুটিন কার্যক্রম, শিক্ষা উপকরণ কেনা ও বিদ্যালয় মেরামতের বিল ছাড় করা-কোথায় নেই নাজমুল হুদা বাবুর হাত! এসব কাজে বাবুই যেন সর্বেসর্বা। বাবুর বাইরে এসবের কোনোটিই হয় না কেশবপুরে। এমন কথা শিক্ষকদের মুখে মুখে। বাবুর এই সাম্রাজ্য দেখভালের জন্য রয়েছেন ১৩ সেনাপতি! এদের মধ্যে ১০ ইউনিয়নে ১১ জন, বাকি দু’জন সমন্বয়কারী।
দশ ইউনিয়নে যে ১১ সেনাপতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবুর সাম্রাজ্য সামলাচ্ছেন তারা হলেন, ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে হুমায়ুন কবির, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে আবুল কালাম আজাদ, মজিদপুরে আমির হোসেন, বিদ্যানন্দকাটিতে আসাদুজ্জামান, মঙ্গলকোটে আমজাদ হোসেন ও আলী রেজা, সদর ইউনিয়নে ফিরোজ সুলতান সবুজ, পাঁজিয়ায় হুমায়ুন, সুফলাকাটিতে আবু হাসান, গৌরীঘোনায় রফিকুল ইসলাম ও সাতবাড়িয়ায় গোলাম হোসেন। এদের বাইরে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দু’জন। এদের একজন আব্দুল আজিজ। অপরজন হচ্ছেন সহকারী শিক্ষক সমাজের যশোর জেলা শাখার এক শীর্ষ নেতা। সহকারী শিক্ষক সমাজের জেলা পর্যায়ের নেতা হয়েও তিনি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারির ধামাধরা লোক হওয়ায় সমালোচনাও রয়েছে বেশ।
একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, কেশবপুরে বাবু সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, বাবু যা বলবেন সেটি করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একপ্রকার বাধ্য। এটি এখনকার কথা না, বছরের পর বছর এই অবস্থা চলছে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে সবকিছু হয় বাবুর নির্ধারিত লোকের মর্জির উপর। তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজ হয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। সব ধরনের তদবির হয় অর্থের বিনিময়ে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সিন্ডিকেট সদস্যরা বাবুর জোরে স্কুল করেন ইচ্ছেমতো। বিশেষ করে ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজ বেশিরভাগ সময় কেশবপুরেই থাকেন। তিনি পরচক্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। উপজেলা সদর থেকে বিদ্যালয়টি দূরে হওয়ায় ইচ্ছেমতো স্কুলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালের বড় একটি সময় নাজমুল হুদা বাবু ছিলেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। এরপর তাকে উপজেলা সদরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাহলে স্কুল করেছেন কখন-এই প্রশ্ন ছিল স্থানীয় কয়েকজনের।
আর সহকারী শিক্ষক সমাজের জেলার ওই শীর্ষ নেতাও ঠিকমতো স্কুল করেন না বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। তারও খুঁটির জোর নাজমুল হুদা বাবু। বাবু সিন্ডিকেটের কারণে কেশবপুরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম একপেশে হয়ে পড়েছে। শিক্ষক সমিতির অন্যান্য নেতারা বিষয়গুলো নিয়ে বিব্রত-বিরক্ত। সভাপতিসহ অন্যান্যরা সমিতির তেমন কোনো খোঁজখবর নেন না বলে সূত্রের দাবি।
ঠিকমতো স্কুলে না যাওয়া প্রসঙ্গে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি স্কুলে যাই না যাই তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসার, টিইও এবং ডিপিইও’র। তারাই দেখবেন।’ এরপর ব্যস্ত আছি বলে লাইন কেটে দেন।
ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্তোষ কুমার বলেন, ‘আমাকে ৫৩ টি স্কুল দেখতে হয়। আব্দুল আজিজের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, সকাল-বিকাল তাকে কেশবপুরে দেখি।’ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো দায়িত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তর দেন।
এসব বিষয়ে নাজমুল হুদা বাবু বলেন, ‘ভাই যাদের নাম বলেছেন তারা সবাই শিক্ষক। ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের কোনো কাজ দিলে তারা সেগুলো করেন। এছাড়া, কেউই বলতে পারবে না আমি টাকার বিনিময়ে কাজ করি।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আব্দুল আজিজকে চিনি না। তবে, খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি অফিসে এসে পড়ে থাকে তাহলে নিষেধ করবো।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ‘স্কুল ফাঁকি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যারা এটি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও খবর

🔝