gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ পুলিশ ও নেতার নাম ভাঙানো হচ্ছে

বেনাপোল লাউজানী প্রেমবাগে সংঘবদ্ধ তিন সিন্ডিকেট সক্রিয় তিন তাসে লাখ টাকা হাতবদল

❒ অজ্ঞাত কারণে দায়িত্বশীলরা নিরব

প্রকাশ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১২:০৩:০০ এ এম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৪৮:৩০ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-02-13_65cb8f6046836.jpg

কেউ কিছুই বলছেন না। অবাধে তিন কার্ড জুয়ার জমজমাট আসর চলছে তিনটি এলাকার বিভিন্ন স্পটে। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলছে এই অনৈতিকতা।
বেনাপোল, ঝিকরগাছার লাউজানী ও অভয়নগরের প্রেমবাগে অবাধে চলছে এই জুয়োর কোট। ওই তিন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার জুয়াড়িরা এই জুয়ো খেলায় বুদ হচ্ছেন। আর প্রতিদিন হাতবদল হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা।
জুয়ো খেলার পাশাপাশি ওইসব স্পটে চলছে মাদক কারবার। অভয়নগর নওয়াপাড়া এলাকায় হাসান, মাসুদ, লাউজানী এলাকার জাবেদ করিম ও মনিরুল এবং বেনাপোলে সেবা ক্লিনিক মোড় এলাকায় বিদ্যুৎ এই জুয়োর কোট পরিচালনা করছেন। একই সাথে ওই ৩টি এলাকায় ৩ ডজন লোকের ৩টি সক্রিয় সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। কখনও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে, আবার কখনও স্থানীয় কয়েক রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে সিন্ডিকেট ৩টি তাদের অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিদিন ঠকছেন, আর কেউ পকেট ভরেছেন। ওই সিন্ডিকেটে উঠতি যুবক ও কলেজপড়ুয়া ছাত্ররাও বুদ হচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় লোকজন দ্রুত এখানে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে অভয়নগরের প্রেমবাগে কখনও নুরবাগে, আবার কখনও দেয়াপড়ায় জুয়োর আসর বসিয়ে আসছে হাসান ও মাসুদ সিন্ডিকেট। এখানে তিন তাস কাটাকাটিসহ নানা নামে চলে আসছে অবাধ জুয়া। প্রতি কোটে মাথাপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে দান ধরা হচ্ছে। এভাবে এক কোটে ৫০ হাজার টাকার খেলা হচ্ছে। এলাকার উঠতি যুবক, আলোচিত জুয়াড়িরা এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আবার ঝিকরগাছার লাউজানীতে জুয়োর আসর বসিয়ে আসছে জাবেদ, মনিরুল ও করিম সিন্ডিকেট। করিমের বাড়িতে কখনও স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত ভবনে চলছে তাদের কারবার। এছাড়া বেনাপোলের সেবা ক্লিনিকের পাশে জুয়োর বোর্ড বসাচ্ছে স্থানীয় বিদ্যুৎ। ৩টি সিন্ডিকেট এলাকা ও স্থান পাল্টিয়ে প্রতিনিয়ত জুয়োর বোর্ড পরিচালনা করে আসছে। ওই চক্রে রয়েছেন আরো ১০/১২ জন করে। অভয়নগর, নওয়াপাড়া প্রেমবাগ, লাইজানী, ঝিকরগাছা ও বেনাপোলের কয়েকটি এলাকার লোকজনসহ দুর-দুরান্ত থেকে আসা জুয়াড়িরা এখানে লাখ লাখ টাকার হাত বদল করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ওই সব সংঘবদ্ধ চক্র সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চালাচ্ছে নিষিদ্ধ জুয়োর আসর। এই জুয়োকে কেন্দ্র করে সেখানে মাদক বিকিকিনিও চলছে সমানতালে। জুয়া ও মাদকের লোভ সামলাতে না পেরে অনেকে পথে বসছেন। প্রতিদিন এসব চক্রের জালে পড়ে স্থানীয়রা টাকা-পয়সা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশসহ প্রশাসনের অনেকে জানলেও তারা কিছুই বলছেন না। ১২/১৪ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল এলাকার বহু বিতর্কিত লোকজনকে দলে ভিড়িয়ে অনৈতিক জুয়ো চালাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুয়ো খেলা স্পটগুলোতে শ’শ’ বিতর্কিত পরিচিত মুখ আর অপরিচিত অনেক লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ প্রাইভেটে এসে যোগ দিচ্ছে এইসব জুয়ার আসরে। নেশায় বুদ হওয়ার মত হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এই আসরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়িরা এখানে আসছে। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জুয়ার কারবার চলে আসছে। স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি জানলেও নিরবতা পালন করছে বলে অভিযোগ। জুয়ার কারবার চালানোর কারণে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে এমন তথ্য মিলছে বিভিন্ন সময়ে।
একটি সুত্র বলেছে, কয়েকটি মহলকে ম্যানেজ করে অসাধু চক্রটি জুয়ার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এই জুয়ার আসর ওই এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে নানা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বেনাপোল, মাগুরা, ঝিকরগাছা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল থেকেও কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে জুয়াড়িরা আসছে এই ৩টি সিন্ডিকেটে।
সূত্রের দাবি, ওই স্পটগুলোতে যেনো টাকা উড়ছে। কেউ খোয়াচ্ছে, কেই সামান্য লাভবান হচ্ছে। নেশায় বুদ থাকায় খোয়ানো পার্টি বেশি আঁচ করতে পারছে না। তবে বেশিরভাগ জুয়ো খেলতে এসে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে। আর বিষয়টি ওই সব এলাকায় প্রচার হলেও অজ্ঞাত কারণে কেউ কিছু বলছে না। দায়িত্বশীলরাও নিরবতা পালন করছেন। স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত ওই জুয়া বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে এই জুয়া বন্ধের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, অভিযোগের ব্যাপারে ওই জুয়ো সিন্ডিকেটের অভয়নগর নওয়াপাড়ার হাসান ও লাউজানীর জাবেদের সাথে কথা বললে তারা নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। জাবেদ জানান, মূলতঃ চুটিয়ে বহালতবিয়তে বড় বহর নিয়ে জুয়োর বোর্ড চালাচ্ছেন হাসান ও মাসুদ। কিন্তু হাসান বলছেন, লাউজানী ও বেনাপোলে এখন জুয়োর বোর্ড চালাচ্ছে জাবেদ চক্র। তারা বিশাল ব্যবসা করছে, অথচ হাসান ও মাসুদকে দুষছেন। তারা দু’জনের নিজেদের বেলায় বলছেন তারা সিন্ডিকেট এখন চালাচ্ছেন না। নানা সমস্যা হচ্ছে জুয়োর কোট চালাতে।

আরও খবর

🔝