gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
একুশ আমাদের অস্তিত্বের অহংকার
প্রকাশ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১০:৪৩:০০ এ এম , আপডেট : শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৩:১৯:৩৬ পিএম
কাগজ সংবাদ:
GK_2024-02-13_65cb5353040b2.jpg

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, সেই শহীদদের আত্মত্যাগ ও মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালীর সংগ্রামের স্মারক হিসেবে মাত্র দু’দিন পরই, ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে তৈরি হয়েছিল একটি ‘শহীদ মিনার’। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাই ২২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ এবং পরদিন সকালে কাজ শুরু করেন। ঢাকার পিরু সরদার এ ক্ষেত্রে ইট সিমেন্ট দিয়ে সহায়তা করেন। ওইদিন বিকেল থেকে সারারাত কারফিউর মধ্যে নির্মাণকাজ চলে। ১০ ফুট বাই ৬ ফুট স্তম্ভটিতে লাগানো হয় কাগজে লেখা ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ শব্দ দুটি। শহীদ সফিউরের বাবা এই মিনার উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানী পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়।
তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কবি ও কথাসাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ কবিতা লেখেন, ‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?/ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো/চার কোটি পরিবার/খাড়া রয়েছি তো! যে ভিত কখনো কোনো রাজন্য/পারেনি ভাঙতে/...ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক। একটি মিনার গড়েছি আমরা/চার কোটি কারিগর/বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়।’ প্রথমটি গুঁড়িয়ে দেয়ার দুই বছর পর ১৯৫৪ সালে একই স্থানে নতুন শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নাট্যগুরু নুরুল মোমেন এর উদ্বোধন করেন। এক বছর পর সেখানেই স্থপতি নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রহমানের নক্সা ও তত্ত্বাবধানে এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহত্তর শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু সামরিক শাসকের চোখ রাঙানিতে বিলম্বিত হতে থাকে নির্মাণকাজ। অবশেষে ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়, তবে নক্সার অনেক কিছু অসম্পন্ন রেখে। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম এর উদ্বোধন করেন।
শহীদ মিনার দ্বিতীয়বার অগণতান্ত্রিক, বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতিবিদ্বেষী শক্তির কোপানলে পড়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রির পর। রাতের আঁধারে এ কাজ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা। তাদেরই কেউ হয় তো গিয়ে মিনারের বেদিতে লিখে দিয়ে আসে ‘মসজিদ’। অবরুদ্ধ ঢাকায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও বাঙালী শহীদ মিনারের অবমাননা মেনে নিতে পারেনি। কেউ একজন জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে শহীদ মিনারের ধ্বংসস্তূপে লিখে দিয়ে আসেন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।
পোস্টারটি লেখা হয়েছিল একটি সংবাদপত্রের পাতায়। এর স্বল্প সময়ের মধ্যে অবশ্য পাকিস্তানী বাহিনী ওই পোস্টারও সক্রোধে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ছুটে যান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। মুক্ত স্বদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে গড়ে তোলার শপথ নেয়ার উপযুক্ত স্থান তো এটাই! ১৯৭২ সালে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গুঁড়িয়ে দেয়া শহীদ মিনার পুননির্মাণের কাজ শুরু করে। অবশ্য ১৯৬৩ সালের মূল নক্সা ও ম্যুরালগুলো অনুসরণ ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আরও খবর

🔝