gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
কাকিনা উত্তরা বাংলা কলেজের অধ্যক্ষের মাদক সেবনের ছবি ভাইরাল : সমালোচনার ঝড়
প্রকাশ : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ০৪:১৩:১১ পিএম
লালমনিরহাট প্রতিনিধি::
1662545611.jpg
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপিঠ লালমনিরহাটের কাকিনা উত্তরা বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য আব্দুর রউফ সরকারের মাদক সেবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে পুরো কাকিনাসহ লালমনিরহাট ও রংপুর অঞ্চলে।এনিয়ে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা জানান, জাতির মেরুদ- বলা হয় শিক্ষাকে। আর জাতির ভবিষৎ তৈরির কারিগর হচ্ছে শিক্ষক। সেই শিক্ষক যদি মাদক সেবনকারী হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ কি হবে ! আমরা অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি করছি। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবো। এছাড়াও লালমনিরহাটের কাকিনা উত্তরা বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাত, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকদের কুপ্রস্তাব দেয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে লালমনিরহাটের কাকিনা উত্তরা বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিদেশী মদ ও মাদক সেবনসহ ফুর্তি করার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। যা পরবর্তীতে লালমনিরহাট ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায় অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার খালি গায়ে কয়েকজনের সাথে বাগান বাড়িতে বসে আছেন। সেখানে তিনি গ্লাসে করে মদ পান করছেন। এসময় সেখানে বিদেশী মদের বোতল, মাংসসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য সামগ্রী দেখা গেছে।কাকিনা এলাকার কয়েকজন বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকার লোকজনের হাতে হাতে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের মাদক সেবন ও ফুর্তি করার বেশ কয়েকটি ছবি ঘুরছে। একজন শিক্ষক যদি মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকালাপের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে সেখানে ছেলেমেয়েদের পড়ানো দুষ্কর।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের মদ খাওয়ার ছবি ও ভিডিও দেখে আমরা লজ্জিত। জাতিগড়ার কারিগর যদি এমন হয় তাহলে কি শিখবো। আমরা তাঁর শাস্তি দাবি করছি।অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার গ্রামের বাড়ি জামায়াত ইসলামী অধ্যুষিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। তার পরিবারও জামায়ত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে জামায়ত-শিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সংক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। পড়ে রংপুর শহরে চলেন আসেন। টিউশন পড়িয়ে কোনমতে জীবন-জীবিকা চালান। এর মধ্যেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার চাকরি করেন। পড়ে শহরের স্বনামধন্য লালকুঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। এরপরেই তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। অল্প কয়েক বছরেই তার জীবনচিত্র পাল্টে যায়। হয়ে যান বাড়ি-গাড়ি, বিগা বিগা জমি ও ইটভাটাসহ কয়েক কোটির টাকার মালিক। তিনি অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে ওই কলেজটিকে অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজে পরিনত করেন। জমি-আসবাবপত্র বিক্রি, নিয়োগ বাণিজ্য, ফান্ডের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অপকর্ম করেন। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের হয়। পড়ে কৌশলে নিজে বাঁচাতে লালমনিরহাটের বিএনপি-জামায়াতের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। এর পরেই তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মোজাম্মেল হকসহ কতিপয় শিক্ষককে নিজের আয়ত্বে নিয়ে কলেজ ফাঁকি দিয়ে নিজের কাজ করাসহ নানা ধরণের অপকর্ম শুরু করেন। নাম প্রকাশে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি যোগদান করার পর থেকে নানা কৌশলে কতিপয় শিক্ষক, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠাতাকে ম্যানেজ করেন। এর পর থেকেই তিনি ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করতে মেতে উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, শিক্ষকদের হয়রানী ও নারী শিক্ষক-ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। চাকরী হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খূলতে চান না বলে তারা জানান।কালীগঞ্জ ও কাকিনার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ উত্তরবঙ্গের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করেন। সেই কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার যদি মাদক সেবনসহ নানা অপকর্মের হোতা হয়। সেটা ভাবার বিষয়! বর্তমান সরকার যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সেখানে একটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রক্যাশে বিদেশী মদ খাচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। তিনি কিভাবে কোন খুঁটির জোরে নিয়োগ পেলেন। সেই বিষয়টি তদন্ত করার দাবি করেন তারা।এদিকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তবে মাদক সেবনের বিষয়টি সঠিক। তিনি আরও বলেন, আমিতো কলেজে মাদক সেবন করি নাই। আর কলেজের বাহিরেতো আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে।কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি ড. মোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল মান্নান বলেন, আমি বিষয়টি মৌখিক শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকার মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সেহেতু কাউকে ছাড়া দেয়া হবে না।লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো: আব্দুল বারী (০১৭৯৩-৫৮৯৯৩৫) নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আরও খবর

🔝