gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
ওষুধের দাম বেড়ে গেলো যশোরে

❒ এমআরপি বাস্তবায়নে সমিতির চাপ

প্রকাশ : শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ১২:৩৫:৫৩ এ এম
শিমুল ভুইয়া:
1662057446.jpg
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে যশোরের ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জীবন রক্ষাকারী ওষুধে আরো লাভ খুঁজছেন। তারা এমআরপি বাস্তবায়নের নামে ফের জুলুম শুরু করেছেন। যার প্রভাব পড়ছে ক্রেতাদের উপর। বিভিন্ন দোকানি ছাড়ে ওষুধ বিক্রি করলেও সমিতির কারণে তারা আর পারবেন না। বিষয়টি ক্রেতাদের ক্ষুব্ধ করে তুলছে। গতকাল পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সমিতির নেতৃবৃন্দ সিন্ডিকেট করে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) বাস্তবায়ন করা শুরু করেছেন। এমআরপি বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের অধিক লাভের সুযোগ থাকলেও কেউ  কেউ কমিশন দিয়ে ভোক্তাদের কাছে কমদামে ওষুধ বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু দোকানিকে জরিমানা করার নিয়ম কড়াকড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমিতি। ফলে, মানবিকতা দেখানোরও সুযোগ থাকছে না ওষুধ দোকানীদের। এমআরপি বাস্তবায়নের নামে যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি যশোর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুস শহীদ চাকলাদার পান্নু স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি সমিতির সদস্যদের দেয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে,বাজার নির্ধারিত (এমআরপি) মূল্যে সকল ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করতে হবে; যা পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এমআরপির কমে কেউ ওষুধ বিক্রি করলে প্রথম ও দ্বিতীয়বার এক হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। ৩য় বার একই কাজ করলে একদিন ওই দোকান বন্ধ রাখা হবে। এরপরও যদি একই ভুল করা হয় তাহলে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সমিতির এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার থেকে বক্সের গায়ে লেখা দামেই ওষুধ বিক্রি শুরু করেছেন দোকানিরা। বৃহস্পতিবার শহর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এতে ক্রেতারা বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে যেসব পরিবারে ডায়াবেটিস, কিডনি ও হার্টের রোগী রয়েছে তাদের ওষুধ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে। শনিবার যশোরের দড়াটানা হাসপাতালের সামনে কথা হয় আশরাফুল আজাদ নামে একজন ক্রেতার সাথে। তিনি জানান, ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার জন্য প্রতিমাসে তার ২২ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। প্রতিমাসের শুরুতে তিনি ওষুধ কিনে নিতেন। আগে কিছু টাকা ছাড় পেতেন। কিন্তু এ মাসে আর তা হলোনা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কথা হয় রেলগেট এলাকার মুক্তি রহমানের সাথে। তিনি বলেন, তার এক আত্মীয়ের দোকান রয়েছে হাসপাতাল গেটে। আত্মীয়তার খাতিরে তিনি ওষুধের দামে কিছুটা কমিশন ছেড়ে দিতেন। অথচ এবার তার কাছ থেকে এমআরপি রেট নেয়া হয়েছে। তিনি অনেকটা অবাক হয়েছেন বলে জানান। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রেসারের ওষুধ ওসারটিল ও এনজিলক ৯০ টাকার পরিবর্তে ১০০,  হার্টের ওষুধ ক্লোপিডগরেল ৭৫ এমজি ১৫৫ টাকার জায়গায় ১৬৮, ডাইবেটিসের ওষুধ   সেক্রিন-২ এমজি ৮৫ টাকার জায়গায় ৯০, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সার্জেল ২০ এমজি ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৭০, সেকলো-২০ এমজি ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৬০, ফিনিক্স-২০ এমজি ১৩০ টাকার পরিবর্তে ১৪০, ঠান্ডা-কাশির জন্য মোনাস-১০ এমজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ১৬০ ও জ্বরের ওষুধ নাপা সিরাপ ৩০ টাকার জায়গায় ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতো গেলো কমন ওষুধের অবস্থা। এর বাইরে অন্যসব ওষুধের অবস্থাও একই।   এ বিষয়ে সাতজন দোকানির সাথে কথা বললে তারা জানান, নিত্যপণ্যের দামের সাথে তাদের নিত্যদিনের খরচও বেড়েছে। আগে কমিশন সিস্টেম চালু থাকায় ক্রেতারা নিজেরাই হিসেব করে দাম কম দিতেন। সেক্ষেত্রে কিছুই বলার থাকতো না। তারা পান ১২% থেকে ১৪% কমিশন। তার মধ্যে ৮% থেকে ১০% ক্রেতাকে দিলে তাদের লাভ হতোনা বললেই চলে। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এমআরপি সিস্টেম চালু করায় তাদের জন্য ভালো হয়েছে। যদিও কোনো কোনো দোকানি নেতিবাচক বক্তব্যও দিয়েছেন। তারা বলেন, অনেক সময় অসহায় মানুষ আসেন। যাদের ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকেনা। সেক্ষেত্রে সামান্য লাভ রেখে তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করা হয়। কিন্তু এ সিস্টেম চালু করায় সেই সুযোগ আর নেই। এতে করে গড় সেলস কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ এ জরিমানার টাকা কোন্ খাতে ব্যয় হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়ে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির জেলা শাখার সভাপতি আব্দুস শহীদ চাকলাদার পান্নু বলেন, দোকানিদের দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছে। নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করছে চড়া দামে। সেসব রোধে একদামে ওষুধ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা তদারকির জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কিছু ইনসুলিন এমআরপি থেকে কমদামে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যা দোকানিরা ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করতেন।

আরও খবর

🔝