gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
হুমকিতে গ্রামাঞ্চলের রাস্তা উন্নয়ন

❒ বাজার দর থেকে এলজিইডির এলটিএম সিডিউল রেট ৩৫ শতাংশ কম

প্রকাশ : শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ১২:৩৩:০২ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
1662057300.jpg
বর্তমান বাজার দরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সিডিউলে রাস্তা উন্নয়ন ও সংস্কারের টেন্ডার আহ্বান করেছে এলজিইডি যশোর। জেলার ৮ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য কমপকে ৩৫ শতাংশ কম ধার্য্য করে সিডিউল করা হয়েছে বলে দাবি তালিকাভূক্ত ঠিকাদারদের। বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে সিডিউল করে পুনঃটেন্ডার আহ্বান না করলে তারা ওই টেন্ডারে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এলজিইডি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে নানা দাবি তুলে ধরেন তারা। ঠিকাদারদের দাবি, গত ২১-২২ অর্থ বছরে চুক্তিবদ্ধ অনেক কাজে তারা কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতে গ্রামাঞ্চলের রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে শংকা করা হচ্ছে। বিষয়টি উত্তরণে যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকায় কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।  সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৪ সেপ্টেবর দরপত্র ড্রপিং করার জন্য এলজিইডি যশোর ২২ গ্রুপের টেন্ডার আহ্বান করেছে। জেলার ৮ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তা রয়েছে সিডিউলে। কিন্তু যেসব নির্মাণ সামগ্রী সংস্কার ও উন্নয়নে ব্যবহার হবে তার বর্তমান বাজার দর থেকে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কম দর দিয়ে সিডিউল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা। এলজিইডির তালিকাভূক্ত ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে পাথর সিএফটি কিনতে হচ্ছে ২শ’ ৩০ টাকায়। সেখানে সিডিউলে এলজিইডি দর দিয়েছে মাত্র ১শ’ ৯৩ টাকা সিএফটি। বিটুমিন প্রতি ব্যারেলের বর্তমান বাজার  মূল্য ১৩ হাজার টাকা। সিডিইউলে ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৬শ’ টাকা ব্যারেল। সড়কের কাজ করায় অভিজ্ঞ শ্রমিকের মুজরি এখন ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। অথচ, এই সিডিউলে ধরা হয়েছে ৫শ’ টাকা। বর্তমান বাজারে ডিজেল প্রতি লিটার ১শ’ ৯ টাকা। সেখানে সিডিউলে ধরা হয়েছে ৮০ টাকা। বর্তমানে সিডিউলে উল্লেখিত ইটের বাজার মূল্য প্রতি পিস সাড়ে ১২ টাকা হলেও দর দেয়া হয়েছে সাড়ে ৯ টাকা। আবার প্রতি কেজি রড, সাথে রড বাধাইয়ের তার এবং লেবার খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ধরা হয়েছে ৯৯ টাকা, সাথে ভ্যাট ও আয়কর সাড়ে ১৪ শতাংশ। কিন্তু বাজারে শুধু রডের কেজিই ৯৯ টাকা। এর সাথে বাঁধাইয়ের তার, মিস্ত্রি খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি পড়বে ১শ’ ১৩ টাকা। অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দামও অনেক চড়া দাবি ঠিকাদারদের।ঠিকাদাররা জানান, নির্মাণ বিল দেয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাট, আয়কর বাবদ সাড়ে ১৪ শতাংশ কেটে নেয়া হয়। সব মিলিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে তাতে অংশ নিলে প্রতি ১শ’ টাকার  কাজে ঠিকাদারকে কমপক্ষে ৩৫ টাকা করে লোকসান গুণতে হবে। ওই দরে কাজ নিলে কেউই কাজ উঠাতে পারবেন না। চলমান এই এলটিএম লোকাল টেন্ডার মেথডে যে সিইিউল করা হয়েছে  তা হাস্যকর ও বাজার মূল্যায়ন না করেই পুরোনো কোনো ড্রাপ বাস্তায়ন করার চেষ্টামাত্র-উল্লেখ করেছেন ঠিকাদাররা। এদিকে, যশোর জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামে। তারা ওই টেন্ডার ও সিডিউল বয়কট করার ঘোষণা দিয়ে এলজিইডি যশোর অফিসের সামনে অবস্থান নেন। ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়ে জানান, বর্তমান  বাজার দরের চেয়ে দ্রব্যাদি প্রতি ৩৫ শতাংশ কম দর দেয়া হয়েছে। এতে ঠিকাদারদের ভিটেবাড়ি  বিক্রি করে কাজ করলেও রাস্তার সংস্কার বা উন্নয়ন হবেনা। বাজার মূল্য যাচাই করে শক্তিশালী  টেন্ডার কমিটির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। ঠিকাদাররা বলেন, মানসম্মত কাজ পেতে হলে বাজারদর মেনে সিডিউল করতে হবে। ১ সেটেম্বর টেন্ডার বয়কট ঘোষণার সময়  যশোর জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি রেজাউল হক বিন্দু, সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, সহসভাপতি আবু সাঈদসহ অনেকে জানান, একটি মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে বর্তমান বাজার যাচাই করে কেন্দ্র থেকে সংশোধন হয়ে আসতে হবে সিডিউল। তা না হলে যশোর জেলার ৮ উপজেলার ২২ গ্রুপের কাজে ৩ শতাধিক ঠিকাদারের একজনও টেন্ডারে অংশ  নেবেন না। বিশাল লোকসানের বোঝা মাথায় নিতে আর রাজি নন ঠিকাররা। তারা বলেন, গত ২১-২২ অর্থ বছরে অনেকে মুলধন হারিয়ে ফেলেছেন। অনেক ঠিকাদারের অবস্থা শোচনীয়। এ ব্যাপারে তারা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ঠিকাদারদের কঠোর অবস্থানের কারণে যশোর জেলার ৮ উপজেলায় রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। হুমকিতে পড়তে পারে জেলার সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম। এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিসুজ্জামান জানান, এই সিডিউলে তার কোনো  হাত নেই, এটা ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে করা হয়েছে। তিনি আহ্বান করেছেন মাত্র। ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নেবেন না বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি অবগত। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকাতে কথা বলবেন এবং লিখিতভাবেও কেন্দ্রকে জানাবেন বলে উল্লেখ কেেরছেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় প্রধান প্রকৌশলীর হাতে।

আরও খবর

🔝