gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
বাগেরহাটে বেপরোয়াভাবে চলছে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন, হুমকিতে জমি
প্রকাশ : রবিবার, ২৮ আগস্ট , ২০২২, ০৩:৫৪:৪১ পিএম
বাগেরহাট প্রতিনিধি::
1661680542.jpg
বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি খাল, নদী ও জলাশয় থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিনকে রুপান্তরিত করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন নিরবিচ্ছিন্ন বালু উত্তোলন করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমিতে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি বিকট শব্দে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হয় সংশ্লিষ্ট স্থানীয় বাসিন্দারা।অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এসব বালু উত্তোলন ব্যবসা করা হয়। বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের বড়বাশবাড়িয়া এলাকার পিচঢালা রাস্তা সংলগ্ন খালে দুটি ড্রেজার দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। আব্দুল রসুলপুর গ্রামের ছ-বাকি খালে বসানো ড্রেজার দিয়ে খুশি মত বালু উত্তোলন চলছে। একই এলাকার আন্ধারিয়া নদীর শাখা খালে বসানো ড্রেজারটির মালিক রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকার পলাশ নামের এক ব্যক্তি। এই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন। শুধু ডেমা ইউনিয়ন নয়, বাগেরহাট পৌরশহর থেকে শুরু করে জেলার ৭৫টি ইউনিয়ন পৌরসভাসমূহের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশেষ করে মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সব থেকে বেশী হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ এসব বালু দিয়ে বেশিরবাগ ক্ষেত্রে নিচু জমি ভরাট করে উচু করা হচ্ছে। স্থান, এলাকা ও দূরত্ব ভেদে প্রতি ফুট বালু ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বালু বিক্রি থেকে প্রাপ্ত টাকার একটা অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে ড্রেজার মালিকদের। এছাড়া জনগনের যাতায়াত রাস্তার উপর পাইপ বসিয়ে বালু সরবারহ করায় জনভোগান্তি করা হয়। অথচ, আইন প্রয়োগকারীরা নীরব দর্শক।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেমা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, শুধু আব্দুল রসুলপুর ও বড়বাশবাড়িয়া নয়, আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়ে কথা বললে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। তাই ক্ষতি হলেও মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।বালু উত্তোলনকারী ও ড্রেজার মেশিনের মালিক ইউপি সদস্য রিপন কুমার মসিদ বলেন, সবাই উত্তোলন করে তাই আমিও মেশিন বানিয়েছি। চুক্তি করে বালু উত্তোলন করছি। সামান্য লাভ হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার ফোন দিয়েছিলো বন্ধ করে দিয়েছি।ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এই বালু দিয়ে আমার বাড়ি উচু করছি না। বালু দিয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারে। মাঠ ভরাট হলে মেশিন বন্ধ করে দিবো।এদিকে বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশবাদীরা বলছেন, বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের নানা ক্ষতি হয়। এর মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়ুদূষণ হওয়ার মত ঘটনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের সময় সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের সব থেকে বড় যে ক্ষতি হয় সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূচিত্র নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ওই এলাকার জনজীবনের উপর স্থায়ী বিরুপ প্রভাব পড়ে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেন তিনি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও খবর

🔝