gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
এবার সার সংকটের পায়তারা

❒ দোকানে দোকানে গিয়ে তদারকি করতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মকর্তারা

প্রকাশ : রবিবার, ২১ আগস্ট , ২০২২, ১২:০৭:১১ এ এম
এম. আইউব:
1661018880.jpg
চাল, চিনি, সয়াবিনের পর এবার যশোরে আমনের ভরা মৌসুমে সার সংকটের পায়তারা করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকার কৃষক চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। একইসাথে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ কৃষকের। তবে, অবস্থা খারাপের দিকে যাতে না যায় সেজন্য কৃষিবিভাগ মাঠে নেমেছে। কর্মকর্তারা দোকানে দোকানে গিয়ে তদারকি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন বেশি দামে বিক্রির আশায় যাতে সংকট সৃষ্টি না করেন।কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় যশোর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাকি পাঁচ শতাংশ জমিতে থাকা পাট উঠে যাওয়ার পর ধান রোপণ করা হবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম। এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষ শুরু করতে দেরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির আশায় বসে না থেকে জেলার চার লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৬ জন কৃষক-কৃষাণী সেচের মাধ্যমে চাষ শুরু করেন। এরপর গত কয়েকদিন কমবেশি বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক-কৃষাণী ধানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। বর্তমানে বিভিন্নভাবে আমনের ক্ষেতে সারের ব্যবহার হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে সরকার হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। কৃষি মন্ত্রণালয় ইউরিয়া সারের দাম কৃষক পর্যায়ে বিক্রির জন্য ২২ টাকা কেজি নির্ধারণ করে। এর কয়েকদিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। আর এটি কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, তারা বিসিআইসি ডিলার পয়েন্ট থেকে সরকার নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছেন না। খুচরা সার ব্যবসায়ীদের ২৫ টাকা কেজি দরে সার কিনতে হচ্ছে। আবার অনেক চাষির অভিযোগ, তাদেরকে নির্ধারিত দামে চাহিদামতো সার দেওয়া হচ্ছে না। ডিলার পয়েন্ট থেকে পর্যাপ্ত সার নেই বলে জানানো হচ্ছে। কেবল তাই না, সেখান থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হলেও কোনো প্রকার ক্যাশমেমো দেওয়া হচ্ছে না। কেউ ক্যাশমেমো চাইলে তার কাছে সার বিক্রি করছেন না অনেক ব্যবসায়ী। আব্দুল মজিদ ও আলতাফ হোসেন নামে খোলাডাঙ্গা গ্রামের দু’জন কৃষক সার কেনেন পুলেরহাট থেকে। চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করেছেন।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় চার লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৬ জন কার্ডধারী কৃষক-কৃষাণী রয়েছেন। এরমধ্যে কৃষক চার লাখ ৬৯ হাজার ৫২৭ ও কৃষাণী ২৫ হাজার ৪৯ জন। সদর উপজেলায় ৭৬ হাজার ৪১ জন কৃষক ও দু’ হাজার ৮৩৯ জন কৃষাণী রয়েছেন। এছাড়া, শার্শায় রয়েছেন ৬০ হাজার ৬০ জন কৃষক ও দু’ হাজার ৬৮০ জন কৃষাণী, ঝিকরগাছায় ৫২ হাজার ৯৪২ কৃষক ও সাত হাজার ১৬০ কৃষাণী, চৌগাছায় ৪৩ হাজার ৯৮১ কৃষক ও তিন হাজার ৫৭৯ জন কৃষাণী, অভয়নগরে ৩২ হাজার ৬২০ কৃষক ও এক হাজার ৯৬৯ জন কৃষাণী, বাঘারপাড়ায় ৫১ হাজার ৩৩০ কৃষক ও ৮৫০ জন কৃষাণী, মণিরামপুরে কৃষক ৯৭ হাজার ৮০৮ ও কৃষাণী দু’ হাজার ৭৯২ জন এবং কেশবপুরে ৫৪ হাজার ৭৪৫ কৃষক ও তিন হাজার ১৮০ জন কৃষাণী। তাদের অধিকাংশ আমন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।এদিকে, সারের সংকট হচ্ছে এমন খবরে মাঠে নেমেছে কৃষি বিভাগ। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন শনিবার সকালে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকার সারের দোকান পরিদর্শন করেন। তিনি পুলেরহাট, মাহিদিয়া, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন বাজারের সারের দোকানে হানা দিয়ে সারের মজুত দেখেন। কেনো সংকটের কথা উঠছে তা যাচাই করেন। এবং অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি না করার জন্য সতর্ক করেন বিক্রেতাদের। পরিদর্শন শেষে উপজেলা কৃষি অফিসার গ্রামের কাগজকে বলেন, সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কোনোভাবেই সংকট হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন, চলতি আগস্ট মাসে সদর উপজেলায় এক হাজার ৭১৪ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২৮ টি ডিলার পয়েন্টের অনুকুলে এই বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে প্রথম দফায় ৮৫৭ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার ডিলাররা তুলেছেন। আজ রোববার দ্বিতীয় দফার ৮৫৭ মেট্রিকটন সার তুলবেন তারা। কৃষি অফিসার বলেন, বর্তমানে বাজারে এমওপি সারের একটু ঘাটতি রয়েছে। যা দ্রুত মিটে যাবে। ইউরিয়া সার নিয়ে কোনো রকম কোনো সমস্যা নেই। তবে, সংকটের গুজবে অনেক কৃষক বেশি করে ইউরিয়া সার কিনে রাখছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কেউ যাতে সারের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেইজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, তিনি পুলেরহাট থেকে সার কিনে বিক্রি করেন। তার কাছ থেকে ২৫ টাকা কেজি দাম রাখা হচ্ছে। তাহলে তিনি কৃষকের কাছে ২২ টাকা কেজি দরে কীভাবে বিক্রি করবেন। ওই বিক্রেতা বলেন, যদি ইউরিয়া সার না থাকে তাহলে অন্যান্য সার ও কীটনাশক বিক্রি হবে না। আবার বেশি দামের সারে কোনো রশিদ দিচ্ছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় প্রশাসন থেকে যদি তাদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে জানতে চান তাহলে তারা কী জবাব দিবেন?      যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে দুয়েকজন সাংবাদিক বলেছেন। এরপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিসিআইসি ডিলারের ঘরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকছেন। বিক্রি রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ মাঠে আছে। কোনো রকম সংকটের চেষ্টা এবং বেশি দামে বিক্রি করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। যাতে অন্যরা শিক্ষা পায়।  

আরও খবর

🔝