gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ভৈরব নদ দূষণের তালিকায় থাকা ১৩ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ প্রকাশ

❒ টাকার বিনিময়ে অপসারণ করা হচ্ছে বর্জ্য

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই , ২০২২, ০১:৩৩:২৮ এ এম
এম. জিহাদ:
1658172843.jpg
ভৈরব নদ দূষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় যশোর শহরের ১৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মালিকপক্ষ। পাউবো কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কাছে মনগড়া তালিকা দিয়েছেন বলে দাবি তাদের। রোববার সকালে কালেক্টরেট সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভৈরব নদ দূষণকারী একশ’৬ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামের তালিকা উপস্থাপন করে। তাতে দড়াটানার ভৈরব নদ সংলগ্ন ১৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের নাম উঠে আসে। অভিযোগে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সেপটিক ট্যাংক নেই। এমনকি হাসপাতালে ব্যবহৃত প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য নদে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্যুয়ারেজ লাইন ভৈরব নদের সাথে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করেন পাউবো কর্মকর্তারা। তবে, সোমবার সরেজমিনে কয়েকটি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাউন্ড ফ্লোরে সেপটিক ট্যাংক রয়েছে। তবে, দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সেপটিক ট্যাংকের একটি অংশ নদের পাশের রাস্তায় ড্রেন করার সময় ভেঙে ফেলা হয়। যা সেই অবস্থায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঁচ-ছয়টি আলাদা ড্রামে বর্জ্য রাখা হয়, যেগুলো মাসিক চুক্তিতে প্রিজম বাংলাদেশ ও পৌরসভা কর্র্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায়। একাজে প্রতিটি হাসপাতালের মাসে আড়াই থেকে আট হাজার টাকা গুণতে হয় বলে মালিকরা জানিয়েছেন। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসপাতাল পরিচালক ও বিল্ডিং মালিকরা। স্ক্যান হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের মালিক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম বলেন, ২০১০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড তার নিজের জায়গায় করা সেপটিক ট্যাংক ও ঘর ভেঙে দেয়। এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলাও করেন তিনি। যা চলমান রয়েছে। হাসপাতালের নীচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটি বড় অংশ নিয়ে তিনি সেপটিক ট্যাংক করেছেন। সাধারণ বর্জ্য যশোর পৌরসভা ও প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য প্রিজম বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়িতে করে প্রতিদিন নিয়ে যায়। পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি মাসে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্যে সাড় পাঁচ হাজার টাকা গুণতে হয় তাকে। বর্জ্য ভৈরব নদে ফেলা হলে এতো টাকা কেন খরচ করছে তার প্রতিষ্ঠান-প্রশ্ন করেন তিনি। একতা হাসপাতালের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মোহন পাউবোর অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, তাদের নিজস্ব সেপটিক ট্যাংক রয়েছে। প্রতি মাসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আট হাজার টাকা খরচ করেন তারা। এরমধ্যে চার হাজার টাকা পৌরসভা ও চার হাজার টাকা প্রিজম বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। এরপরও পাউবো কোন হিসেবে দূষণকারীদের তালিকায় তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছে সেটি তার অজানা।  এর আগে ভৈরব নদের পাশের রাস্তায় ড্রেন করতে গিয়ে নদের জমিতে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের সেপটিক ট্যাংকের একটি অংশ ভেঙে দেয়া হয়। যা এখনো সেই অবস্থায় রয়েছে। দেশ ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সেপটিক ট্যাংকের একাংশ ভাঙা। পাশে ড্রেনের দেয়াল রয়েছে। এ কারণে নদে কোনো বর্জ্য যাচ্ছে না। যদিও নদের কাজ শেষ না হওয়া ও পাউবোর অনুমতি না পাওয়ায় এখনো সেপটিক ট্যাংক মেরামত করেননি বলে দাবি তাদের।  অসীম ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বিল্ডিংয়ের মালিক আব্দুল্লাহ আল আমিন বাচ্চু বলেন, ড্রেন করতে গিয়ে শ্রমিকরা তাদের সেপটিক ট্যাংকের এক কোণা ভেঙে ফেলে। পরে কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে সংস্কার করতে চাইলে তারা পরে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। এখনো অনুমতি না পাওয়ায় সেটি সংস্কার করা হয়নি। নিয়ম মেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাসহ একটি বড় বিল্ডিংয়ে বসবাসরত মানুষের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আজীবন সেপটিক ট্যাংক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পাউবোর অভিযোগ একেবারেই মনগড়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদ দূষণে ভূমিকা থাকার কারণেই ১০৬ টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। অভিযুক্ত হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সেপটিংক ট্যাংক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কাছে ছবিসহ প্রমাণ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলা হচ্ছে। দূষণকারীদের তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তারা শিগগির সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। তবে, তালিকায় থাকা  প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কারও যদি কোনো অনিয়ম না থাকে তাহলে তাদের স্বাগতম জানান তিনি।

আরও খবর

🔝