gramerkagoj
শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ক্ষেতেই পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন
প্রকাশ : সোমবার, ১৮ জুলাই , ২০২২, ০৭:১৫:৪৮ পিএম
হাফিজুর রহমান পান্না, রাজশাহী ব্যুরো ::
1658150173.jpg
বর্ষা মৌসুমেও নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের পানি না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর পাট চাষিরা। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ এলেও শুকিয়ে যাচ্ছে জলাশয়ের পানি। ফলে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সময় পেরিয়ে গেলেও পাট কাটেননি অধিকাংশ কৃষক। কেউ কেউ কাটার পর মাঠেই ফেলে রেখেছেন। এখন প্রখর রোদে ক্ষেতেই পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন।রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরকালিদাসখালী গ্রামের বর্গাচাষি আশরাফুল হক তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড খরতাপের কারণে তাঁর জমির পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। গরমে তাঁর জমির বেশির ভাগ পাটগাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে স্বর্বশান্ত হয়েছেন।রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস সুত্র জানান, গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) আষাঢ় মাসের শেষ দিনসহ মাত্র আটদিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে গত বছরের থেকে এবার আষাঢ় মাসেই বৃষ্টি কমেছে ৩১৫ মিলিমিটার। গত বছরের আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ২৫ দিন। বৃষ্টিহীন ছিল মাত্র পাঁচদিন। বৃষ্টিপাত হয় ৩৫৪ মিলিমিটার। চলতি বছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র আটদিন, যা ৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে সেটাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য। এ আটদিনের মধ্যে গত ১৮ জুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ জুন ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরপর আর ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটারের ওপরে ওঠেনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। ২৬ জুন এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।এছাড়া ১৭ জুন ও ২১ জুন দুই মিলিমিটার, ২৪ জুন ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার, ৩০ জুন ০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং ৩ জুলাই ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে এ আষাঢ়ে বৃষ্টি কমেছে ৩১৪ দশমিক ৯৮ মিলিমিটার।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। কেন না রাজশাহীতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে কাটছে বেশি। আবার নদীর নাব্যও কমেছে। বলা যেতে পারে সবমিলে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়াই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়ছে।রাজশাহীর পাট চাষিরা জানান, আষাঢ় মাসজুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, তানোর, বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলার নদী থেকে খাল-বিলে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে এসব অঞ্চলের খাল-বিলের শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বৃষ্টির দেখা না মিললে পাটের ভালো ফলন হওয়া সত্বেও জাগ দিতে না পারায় চরম লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।পবার দুয়ারি এলাকার কৃষক হাইদার আলী বলেন, ‘অন্য বছর এ সময়ে বারনই নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এ নদীতে নেই পানি। তাই পাট কেটে জমিতেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতেই রোদে পাটের দুরবস্থা। এর ওপর রয়েছে পানিসংকট। তাই বৃষ্টি না হলে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হবেনা। আর কোন কৃষক পাটের আঁশ ঘরে তুলতে পারবেন না। ’রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, পাটের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে দিন দিন চাষ বাড়ছে। জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকে জেলার সব জায়গায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে খুব একটা বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার ডোবা-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক জমি থেকে পাট কেটে ভ্যান ভাড়া করে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে নদীতে ও দূরবর্তী বিভিন্ন জলাশয়ে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, খরার কারণে পাটে ‘মাইট’ নামের এক ধরনের পোকার উপদ্রব হয়েছে। এখন পাটের জন্য জোরে বৃষ্টি দরকার। এ ছাড়া খরার কারণেও এবার পাট বড়তে পারেনি। যাঁদের জমিতে পাট ভালো আছে, তাঁরাও জাগ দেওয়ার পানি নিয়ে সংকটে পড়বেন। সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে চাষিদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহীতে পাট বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ। আর পাট ওঠার শুরুর দিকে ১৬০০ থেকে ১৮০০ বা ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এমন দামের কারণেই প্রতিবছর পাটচাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর, ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছিল। গত বছর ১৮ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। প্রতিবছরই পাট চাষ বাড়ছে।

আরও খবর

🔝