gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
লামায় বাছা মিয়ার সন্তানেরা ভূ-আগ্রাসীদের হীংস্র ছোবলে ক্ষতবিক্ষত
প্রকাশ : সোমবার, ১৮ জুলাই , ২০২২, ০৩:১৭:৪৪ পিএম
জাহিদ হাসান,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি::
1658135894.jpg
পার্বত্য লামায় ৩০ বছর আগের আন্ত: জেলা ভূমি সীমানা বিরোধ আপোষ অমান্য করে, আইন শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। জানাগেছে, হাই কোর্টের সিভিল রিভিশন মামলা নং ৩১৭/৮৮ বাইলেসন করে গত ৯ জুলাই পার্বত্য লামা উপজেলার ভূ-সীমানায় দলবদ্ধ জনতা নিয়ে বে আইনি প্রবেশ করে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপচেষ্টা করেছে সমতল জেলা কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউপি সদস্য মিজান গং। তাৎক্ষনিক সেনা টহলের আকস্মিক আগমনে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত থেকে বেঁচে যায় স্থানীয় ভূমি মালিক কৃষকেরা। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্যে বমুবিলছড়ি ইউপি সদস্য মিজান গং এর বাহুবল দেখানোর ধৃষ্টতা অবাক করেছে সবাইকে।বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে বান্দরবান কক্সবাজার এবং বান্দরবান-চট্টগ্রাম জেলা সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। সম্ভাব্য রক্তপাত এড়ানোর লক্ষ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দিয়ে বিগত ২৯/০৮/১৯৯৬ তারিখে কক্সবাজার সার্কিট হাউজে এক জরুরী সভায় বসেন। সেই সভায় মহাপরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ এর সভাপতিত্বে বান্দরবান কক্সবাজার এবং বান্দরবান-চট্টগ্রাম আঞ্চলের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তিকরণের নিমিত্তে তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যথাক্রমে; ১৯৭০-৮১ সালের আর, এস, জরিপের সীমানা রেখা বান্দরবান কক্সবাজার এবং বান্দরবান-চট্টগ্রাম আন্ত জেলা সীমানা হিসেবে গণ্য হইবে । (২) সীমানা নির্ধারণের পর যদি এক জেলার অধিবাসীর জমি অন্য জেলাভুক্ত হয় তবে জমির মালিকানা অক্ষুন্ন থাকিবে। (৩) বর্তমানে ১৯৯৬-৯৭ মাঠ মৌসুমে আন্ত জেলার বিরোধীয় এলাকায় পিলার স্থাপন করিতে হইবে। সূত্র স্মারক নং ৬৬/৯৪/৩১১/১(৭) তারিখ, ২/১০/৯৬। এর আগে ১৯৮৭ সালে পার্বত্য লামার বাসিন্দা সংক্ষুব্ধ বাছা মিয়া লামা কোর্টে একটি সিআর মামলা করেন, নং-৩/৮৭। মামলায় তৎকালীন কাকারা ইউনিয়নের বর্তমানে বমুবিলছড়ির বাসিন্দা ১৩ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল। এরা হলো, মনিরুজ্জামান, ছিদ্দিক আহামদ, আবদুল কুদ্দুছ, নুর আহামদ, ছাবের আহামদ, মঞ্জুরুল কাদের, মোহাম্মদ মিয়া, আবদুল ছালাম, মোজাহের মিয়া, মোক্তার আহামদ, মাজাহের আহামদ, আবদুল লতিফ ও রশিদ আহামদ। বিবাদীদের চারজন এখন জীবিত নেই। এর পর গজালিয়া ইউপির মধ্যস্থতায় বাছা মিয়ার মালিকানা ও দখলীয় ভূমি নিয়ে সমস্যা করবেনা মর্মে বিবাদীগং আপোষ করেন। এর পর আবদুল লতিফ উক্ত জমি নিয়ে পুনরায় বিরোধের চেষ্টা করলে, ১৯৯১ সালে লামা সাব জোনের পরামর্শে গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতা ও বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদ সদস্য উথোয়াই অং মার্মার উপস্থিতিতে আরেকটি অস্থায়ী এগ্রিমেন্ট করে। ২৫/৬/১৯৯১ তারিখে করা চুক্তিমতে বিরোধ মিমাংসার জন্য বাছা মিয়ার নামীয় ও দখলী জমির কিছু অংশ অপর পক্ষকে বন্টন করে দেয়া হয়। সত্ত ছিল, পরস্পর বিরোধ নিস্পত্তিকল্পে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিবেন। পরে উচ্চ আদালতের চুড়ান্ত আদেশ যেটা হবে, সেটা সবাই মেনে নিবেন।এদিকে দীর্ঘকাল পরে এসে এই বিষয়টি নিয়ে জোর প্রয়োগ করে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটাতে চাচ্ছে একটি মহল। মৃত বাছা মিয়ার সন্তানদের অভিযোগে জানাযায়,বমুবিলছড়ি ইউপি সদস্য মিজান সমতল জেলা কক্সবাজার চকরিয়ার অজ্ঞাতনামা বহিরাগত ৪০/৫০ জন লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে গত ৯ জুলাই /২২ তারিখে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, "পূর্বপুরুষদের আমল থেকে লামা থানার গজালিয়া মৌজার সিমানা তথা আন্তজেলা সিমানা বিরোধ চলে আসতেছিল । উক্ত বিরোধের জের ধরে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে একাধিক মামলা মোকদ্দমা চলছে। তন্মধ্যে খাস মহল অফিসার, কক্সবাজার এর নিকট সুট মোকদ্দমা নং -৮৬ / ১৮৯৯-১৯০০, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আদালত, চট্টগ্রাম এর মিচ রিভিশন মামলা নং জেলা প্রশাসক বান্দরবান এর নিকট মিচ মোকদ্দমা নং -১০ ( ৬ ) / ৮৯-৯০, কক্সবাজার জেলা সাব জজ আদালতের অপর মামলা নং- ৩১/৮ : ৩, সর্বশেষ মহামান্য হাইকোর্ট এর সিভিল রিভিশন মোকদ্দমা নং- ৩১৭/৮৮ যা বর্তমানে ঝডওজঞঐ গেছে । গত ২৫-০৮-৯৯ এবং ৩০-০৬-৯৯ ইং তারিখে পরপর দুইটি আপোষনামা সম্পাদন করেন ।অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে , মহামান্য হাইকোর্টের সিভিল রিভিশন মামলা নং- ৩১৭ / ৮৮ চলমান থাকার পরও বিবাদীরা তা  অমান্য করছে। জেলা সীমানা বিরোধ নিস্পত্তি না হওয়ার আগেই সরকার ও বিজ্ঞ আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে, বেআইনী সমাবেশ গঠন করিয়ে গায়ের জোরে আমাদের সুদীর্ঘ বছরের ভোগদখলীয় বিরোধীয় জায়গায় অনাধিকার প্রবেশ করে  তিনটি পাওয়ার টেলার মেশিন দিয়ে চাষ করে আমাদেরকে প্রাণে মারার চেষ্টা করছে।" আগ্রাসী মহলের হুমকীতে মৃত বাছা মিয়ার সন্তানরা নিরাপত্তা হীনতার আশংকা করছেন। ভূমি সংক্রান্ত স্পর্শকাতর একটি পুরোনো ঘটনা নতুন করে সঙ্ঘাত সৃষ্টির পায়তারা দাবি করে, স্থানীয়রা এর জন্য বমুবিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন। লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গজালিয়া মৌজা হেডম্যান প্রতিনিধি ইউপি সদস্য মংক্যাচিং চৌধুরী বলেন, সমতল জেলা থেকে শত লোক এনে সন্ত্রাসী মহড়া, নিন্দনীয় ঘটনা। লামা উপজেলার সকল রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দ এই বর্বরচিত ঘটনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য লামা ও পাশাপাশি সমতল জেলা কক্সবাজার চকরিয়া বমুবিলছড়ির নতুন প্রজন্মের মাঝে বন্ধুত্বের চীর ধরবার আশংকা করেছেন অনেকে। এ ব্যাপারে ১৬ জুলাই জানতে চাইলে, বমুবিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কাদের বলেন, "আদালতের নির্দেশনার আগে বিরোধীয় ভূমিতে পুর্বাবস্থা-শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা উচিত"। তিনি আরো বলেন, "মিজান মেম্বারের আর্জির প্রেক্ষিতে তাকে মসজিদের বিশ কড়া ভূমির হদিস জানতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে কেনই বা মৃত বাছা মিয়ার ভূমিতে গিয়ে এমনটা করেছে, তা আমার বোধগম্য নহে''। বিষয় নিয়ে এলাকায় নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে পরস্পর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা এ দিকে গুরুত্বসহকারে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আরও খবর

🔝