gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৪ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
ভৈরব দূষণে দায়ী ১০৬ বাড়ি-প্রতিষ্ঠান

❒ নোটিশ প্রদানের পর করা হবে মামলা

প্রকাশ : সোমবার, ১৮ জুলাই , ২০২২, ১২:৪৯:১৬ এ এম
এস এম আরিফ:
1658083868.jpg
যশোরে ভৈরব নদ দূষণের সাথে সংশ্লিষ্ট একশ’ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই তালিকা করেছে। দূষণের সাথে জড়িতদের মধ্যে ৭৪ ব্যক্তি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে কোনো সেপটিক ট্যাংক নেই। তাদের টয়লেটের বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, দড়াটানা সংলগ্ন ১৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের অভ্যন্তরে নেই কোনো সেপটিক ট্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের স্যুয়ারেজ লাইন সরাসরি নদের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্যাথলজিক্যাল বর্জ্যও নদে ফেলা হচ্ছে। এসবের বাইরে পৌরসভার ১৪টি ড্রেন দিয়ে ময়লা আবর্জনা এসে পড়ছে ভৈরব নদে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সময় বেধে দিয়ে নোটিশ প্রদান করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোববার বেলা এগারটায় যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।গত জুন মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ভৈরব নদের দূষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে কাঠেরপুলে সন্ধ্যার পর মৃত পশুপাখি ও তাদের বর্জ্য ফেলে নদের পানি নষ্ট করা হচ্ছে। একই অবস্থা দড়াটানা ব্রিজের আশপাশেও। ওইসময় এটি নিয়ে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন। জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বিবেচনায় সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভৈরব নদ দূষণের সাথে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন। সেই আলোকে গতকাল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম এই তথ্য উপস্থাপন করে তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন বলে জানান। সভায় পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার জানান, ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের নামে চিঠি ইস্যু করার কাজ শুরু করেছেন।জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ। যে কোনো মূল্যে নদে প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। তেমনি করতে হবে দূষণমুক্ত। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। সবাইকে সাথে নিয়ে এই কার্যক্রমকে সফল করে তোলা হবে। ভৈরব নদ দূষণের সাথে জড়িতদের তালিকায় রয়েছে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনের আব্দুল্লাহ আল আমিনের প্রতিষ্ঠান অসীম ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, রজব আলী সরদারের পপুলার ও ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তার আতিকুর রহমানের কিংস হাসপাতাল, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের একতা হসপিটাল, রেনেসাঁ হসপিটাল, বাচ্চু মিয়ার অসীম ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলমের স্ক্যান হাসপাতাল, ডাক্তার গোলাম ফারুকের অর্থোপেডিক্স  হাসপাতাল এবং পপুলার, ল্যাব জোন ও দেশ ক্লিনিক, মমতাজের স্ক্যান ও ইউনিক হাসপাতালের মাঝের ড্রেন।প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে লিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন বিস্কুট ফ্যাক্টরি, লোন অফিসপাড়ার মমতাজ উদ্দীন পিন্টুর গরুর খামার, বালিয়াডাঙ্গার সুবল বাবুর মাছ ফ্যাক্টরি, ইকবাল হোসেনের গরুর খামার ও বালিয়াডাঙ্গা মসজিদ। এছাড়া, যশোর পৌরসভার হযরত গরীবশাহ মাজার সংলগ্ন দড়াটানা, রাজধানী হোটেল সংলগ্ন, বাবলাতলা ব্রিজ সংলগ্ন, যশোর কেন্দ্রীয় কারগারের পাশে ও লিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন ড্রেন, নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার দু’টি ড্রেন, মোল্লাপাড়া এলাকা ভিত্তিক ড্রেন, ঝুমঝুমপুর নদেরপাড়ের তিনটি ড্রেন, বালিয়াডাঙ্গার দু’টি ড্রেন এবং বালিয়াডাঙ্গার স্থানীয় ড্রেন দিয়ে ময়লা নদে পড়ছে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে বাসা বাড়ির অভ্যন্তরে সেপটিক ট্যাংক না বানিয়ে বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলছেন কাঠেরপুলের রওশন আরা, লোন অফিসপাড়ার মোহাম্মদ হাবলু, লিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন জাহাঙ্গীর কাদের, মোহাম্মদ আসলাম, মোহাম্মদ আলী, হাসানুর রহমান, নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম, আনিছুর রহমান, মোহাম্মদ নাসিম, সেলিম রেজা, আনোয়ার হোসেন, বাবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর মোল্লা, বুলু গাজী, মোহাম্মদ হাবিব, পান্নু শেখ, ফজলে আলী বাবু, ইংগুল আলী মোল্লা, রাকিব হোসেন, মোহাম্মদ দাউদ, মহাসিন শেখ, বিকাশ বিশ্বাস, মোল্লাপাড়ার রিনা বেগম, মাসুম খন্দকার, শফিয়ার রহমান, মোল্লাপাড়া নদের পাড়ের ফজলুল করিম টুটুল, নীলগঞ্জের সাহেব আলী, মাসুম বিশ্বাস, মফিজ বিশ্বাস, ছলেমান আলী, হাফিজুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, ঝুমঝুমপুর নদেরপাড়ের হাসানুর রহমান, আজবাহার মোল্লা, রাশিদা বেগম, ডাক্তার শরিফুল ইসলাম, রনি সরদার, নারগিছ সামাদ, ফরিদা বেগম, ফারুখ হোসেন, কাজী বুলবুল, মিয়া হাজি, মোহাম্মদ শফি, আলী হোসেন, মাসুদ হোসেন, হেমায়েত শেখ, কাজী আবুল হোসেন, শ্মশান রোড ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গার মিজানুর রহমান, বালিয়াডাঙ্গার রুহুল আমিন, মনিরুজ্জামান, আকরাম হোসেন, শাহাদাত মল্লিক, লালন ভূঁইয়া, ফরিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম, মাসুদ রানা, কালাম মিয়া, আব্দুল কাদের, রাশিদা বেগম, মিলন হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মান্নান শেখ, কৃষ্ণ বিশ্বাস, নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়ার জাহাঙ্গীর খান, শহিদুল ইসলাম, আফিয়া বেগম, আসকার মুন্সী, সৈয়দ রাশেদুল, মুজিবর ব্যাপারি, মোহাম্মদ সোহেল, আমিরুল মোল্লা, শেখ আব্দুর রহিম, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের স্বপন সরকার ও মুনছুর আহম্মেদ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে একতা হসপিটলের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মোহন বলেন, যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা মনগড়া ও অসত্য। তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সেপটিক ট্যাংক আছে। উপরন্তু তাদের হসপিটলের প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য প্রিজম বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। বর্জ্য পরিবহন বাবদ প্রতিমাসে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে চার হাজার টাকা করে প্রিজম বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। সমন্বয় সভায় বক্তৃতা করেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ-উজ-জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির, শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান, ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ প্রধান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মকছিমুল বারী অপু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল প্রমুখ।সভায় যশোর-বেনাপোল সড়কের মরা গাছ অপসারণ, সিএস ম্যাপ অনুসারে ভৈরব ও কপোতাক্ষ নদ খনন, মডেল মসজিদ নির্মাণ, ১৯ জুলাই একযোগে করোনার বুস্টারডোজ প্রদান, ২১ জুলাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর উদ্বোধন, ২৩ জুলাই মৎস্য সপ্তাহ, ৩১ জুলাই বৃক্ষমেলা উদযাপন ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট রাখাসহ চলমান নানা উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা করা হয়।

আরও খবর

🔝