gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
খুন জখম নিয়ে উত্তপ্ত যশোর

❒ রাজনৈতিক সেল্টারে এলাকা ভিত্তিক উঠতি সন্ত্রাসীরা বেপোরোয়া

প্রকাশ : বুধবার, ১ জুন , ২০২২, ১২:১৭:৫২ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
1654021172.jpg
যশোরে অব্যাহত খুন জখমের ঘটনায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। তুচ্ছ ঘটনায় এবং স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার দ্বন্দ্বে হত্যাকান্ড ও হত্যাচেষ্টা ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে একের পর এক। বিশেষ করে যশোর সদর উপজেলায় চিহ্নিত প্রতিপক্ষ ও পরিচিত জনদের হাতে খুনগুলো হচ্ছে। হাতে গোনা ক’দিনের ব্যবধানে যশোরের শহরতলী সুজলপুরে ও শংকরপুর চাতাল মোড়ে দু’জনকে খুন করা হয়েছে। এর একদিন পর ৩০ মে রাতে পৌর কাউন্সিলর এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুলকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকায় তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এলাকা ভিত্তিক দলীয় সেল্টারে থাকা উঠতি সন্ত্রাসীরা লোমহর্ষক সব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। দলীয় মিছিল মিটিংয়ে দেখা মেলে তাদের। ক্রাইম ঘটিয়ে সহজেই পালিয়ে যাওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই অপরাধীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকা ও নিহতদের স্বজনদের দাবি। ঘটনার আগে ও পরে পুলিশের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করেছেন স্বজনরা। পুলিশ টহল বৃদ্ধি, সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের নতুন তালিকা করে আটকের দাবি তাদের। একই সাথে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত ২৯ মে রাত ৮ টার দিকে যশোরের শংকরপুরের চাতাল মোড়ের সোলাইমান হোসেনের ছেলে আফজাল হোসেনকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক সেল্টারে থাকা যশোর কোল্ড স্টোর মোড় এলাকার সুজন ওরফে ট্যারা সুজনসহ চাতালের মোড এলাকার ৭/৮ জনের একটি চিহ্নিত চক্র কুপিয়ে হত্যা করে তকে। এ সময় তাকে রক্ষা করতে আসলে তার ছোট ভাই উজ্জলকেও হত্যার চেষ্টা করে তারা। গুরুতর অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই হত্যাকান্ডে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘবব্ধ ও পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ওটি। এ ঘটনার একদিন পর প্রায় একই সময়ে রাত ৮ টায় এলাকার অপর একটি চিহ্নিত উঠতি সন্ত্রাসী গ্রুপ কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে যশোর পৌরসভার ৯ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুলকে। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এলাকাবাসী ও পৌর পরিষদের লোকজন এবং পুলিশ প্রশাসন তৎপরতা দেখালেও কার্যত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। ২৯ মে রাতে এলাকার আফজাল হত্যাকান্ডের জের হিসেবে এই হামলা ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আফজাল খুনের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন জোরালো ভুমিকায় না থাকা ও গোয়েন্দা তৎপরতা দূর্বল হওয়ায় উঠতি সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা সহজেই ঘটিয়ে গেছে। শংকরপুর এলাকায় রাজনৈতিক সেল্টারে কয়েকটি গ্রুপ গড়ে উঠৈছে। বিতর্কিত ২০/৩০ জনের একটি চক্র ওই তিন গ্রুপে বিভক্ত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তারা মাথাচাড়া দিলেও পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণেই একের পর এক অঘটন ঘটেছে বলেও তারা জানান। গত ২১ মে সকালে উঠতি একদল সন্ত্রাসীর হামলায় খুন হন সুজলপুর গ্রামের খোরশেদ গাজীর ছেলে ইরিয়ান (২২)। ইরিয়ানকে হত্যার পর তার অপর ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে ওই সন্ত্রাসী চক্র। ওই হত্যাকান্ডের ১২ দিন পার হলেও পুলিশ আটক অভিযান চালায়নি বলে নিহত ইরিয়ানের স্বজনদের দাবি। যদিও স্থানীয়রা ইরিয়ান হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আটকের দাবি অব্যাহত রেখেছেন তারা। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেছেন, ওই সময় ঘটনাস্থলে এসআই মামুনের নেতৃত্বে দু’জন পুলিশ কনস্টেবল উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন। এর আগে গত কয়েক মাসে কলেজ ছাত্র, স্কুল ছাত্র, ইজিবাইক চালক, দোকানী ও রাজনৈতিক ঘরানার যুবক ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন খুন হন। তবে গত কয়েক দিনের দুটি খুন ও পৌরসভার কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাবুলকে হত্যা চেষ্টা ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা ও অপরাধ প্রবনতা নিয়ে রীতিমত শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খোঁজ খবর নিয়ে তথ্য মিলেছে, হত্যাকান্ডগুলো ঘটেছে ছোটখাটো পূর্ব ঘটনা নিয়ে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ স্বার্থ নিয়ে। উঠতি দৃর্বৃত্ত ও অস্ত্রধারীরা একের পর এক এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের দাবি, জড়িতরা এলাকারই। তারা রাজনৈতিক সেল্টারে চলে বলে পরিচয় দেয়। ধারালো অস্ত্রধারী হওয়ায় ওই সব চক্রকে মানুষ ভয় পায়। হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ফেললেও তারা যে কি ধরণের অপরাধ ঘটিয়েছে সে বোধও যেনো তাদের নেই। এ ব্যাপারে জোরালো পুলিশি টহলের দাবি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর। এছাড়া উঠতি সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের নতুন তালিকা করে আটকের দাবি উঠেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, হত্যাকান্ডগুলো ঘটে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠতি অপরাধী চক্র অপরাধ ঘটাচ্ছে। পুলিশি টহল জোরদার রয়েছে। এছাড়া হত্যাকান্ডগুলো যত্নসহকারে তদন্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। হত্যায় জড়িতরা আত্মগোপনে গেলেও সোর্স লাগিয়ে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, গোয়েন্দা শাখা অপরাধ প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল জোরদার ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডগুলোর ব্যাপারে দ্রুততম সময়ে অ্যাকশানে গিয়ে রহস্য উন্মোচনসহ জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা শাখা আরো আন্তরিকভাবে কাজ করবে অপরাধ দমনে।

আরও খবর

🔝