gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
সুন্দরবনে পর্যটক টানতে তৈরি হচ্ছে নতুন ৪ ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ৩১ মে , ২০২২, ০৭:২৪:১৪ পিএম
খুলনা প্রতিনিধি:
1654003475.jpg
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা করছে সরকার। বনে প্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করছে বন বিভাগ। সে জন্য ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় আরও চারটি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।নতুন করে তৈরি হতে যাওয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী এবং শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক। নতুন এ চারটি ট্যুরিজম কেন্দ্র হলে পর্যটকদের ভ্রমণে আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।বন বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে সুন্দরবনে বেড়েছে পর্যটক ও রাজস্ব আয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার পর্যটক এসেছেন সুন্দরবনে। তাতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে পর্যটক এসেছিলেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১১ জন। আর রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৬ টাকা।সুন্দরবনের ভেতরে বর্তমানে সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। যেখানে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে বর্তমানে থাকা সাতটি স্থানে এত বেশি মানুষের যাতায়াতে ঝুঁকির মুখে পড়ে সুন্দরবনের সার্বিক পরিবেশ।এর অংশ হিসেবে পর্যটকদের ভ্রমণ আরও সহজ করতে পরিবেশবান্ধব নতুন স্পট তৈরির উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। ২০২১ সালে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ও পূর্ব বিভাগে চারটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র করা হচ্ছে।নতুন এ প্রকল্পের আওতায় সাতটি ফাইবার বডি ট্রলার, তিনটি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে, তিন কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, ছয়টি পাবলিক টয়লেট, সাড়ে আট হাজার ঘনমিটার পুকুর খনন, একটি শেডশহ প্রদর্শনী ম্যাপ, ৩০টি আরসিসি বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। পাঁচটি গাইড ম্যাপ, ২০টি ডাস্টবিন ও পর্যটকদের জন্য ১০টি পথনির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে।ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পূর্ণতা বলেন, হারবারিয়া, জামতলি সি-বিচসহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরেছি। সুন্দরবনের এত সুন্দর পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লাগছে।পর্যটক সায়রা শাজরিন নামিরা বলেন, তিন দিনের ট্যুরে সুন্দরবনে এসেছি। বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছি। জামতলী সি-বিচে এসেছি। অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে। তবু ভালো লাগছে। বনের মধ্যে এত সুন্দর সি-বিচ আছে, ভাবতেই অবাক লাগে।তাইসিন আনজিবা বলেন, আমি, আমার বাবা ও তার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। এখানে অনেক মজাই হচ্ছে। তিন দিনের ট্যুরে লঞ্চে আছি। এখন আছি জামতলা বিচে, প্রকৃতির মাঝে অনেক ভালো লাগছে। এখানে সব ঠিক আছে। কিন্তু ওয়াশ রুম নেই। এটা থাকলে ভালো হতো। এ ছাড়া আরও কয়েকটি স্পট থাকলে ভালো হতো।আরেক পর্যটক আকিব চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে একঘেয়েমির মধ্যে থাকার পর সুন্দরবনে প্রকৃতির মাঝে এসে মরটা ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে। এখন বাঘ, হরিণসহ পশুপাখি দেখলে আরও ভালো লাগবে।ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ী সাহেদী ইসলাম রকি বলেন, সুন্দরবনের সিজনটা হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। মার্চে কিছু টুকটাক ট্যুর হয়। মেইন সিজনটা হলো নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি চার মাস। এ ছাড়া সারা বছরই টুকটাক ট্যুর হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে কিছু বিদেশি পর্যটক আসেন। সুন্দরবনের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় মূলত বর্ষাকালে। এ সময় প্রকৃতি সাজে মনোমুগ্ধতায়। তবে ঝড়-বাতাসে ট্যুর একটু কম থাকে।তিনি আরও বলেন, এ বছর আশার তুলনায় বেশি পর্যটক আসছেন। সুন্দরবনে দিন দিন পর্যটক বাড়ছে। এখানে তিন দিনের ট্যুর ছাড়া পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। বর্তমানে যে স্পটগুলো রয়েছে, তার সঙ্গে আরও চারটি স্পট বাড়ছে। এতে সবার সুবিধা বাড়বে। সরকার ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সুন্দরবন ট্যুরিস্ট গাইড শেখ খলিলুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বনে মূল সৌন্দর্য হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আর প্রকৃতিগতভাবে যেগুলো সব সময় পাওয়া যায় চিতল হরিণ, বানর, বন্য শূকর, কুমির ধরনের প্রাণী। একসময় বনে অনেক প্রাণী ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত ছুটির দিনগুলোয় পর্যটক বেশি থাকে। নতুন কেন্দ্রগুলো তৈরি হলে পর্যটকরা নতুনের স্বাদ পাবেন।খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর ২ লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। কিন্তু সুন্দরবনে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা কম। এ ছাড়া ইয়াসসহ বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সুন্দরবনের ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং অভয়ারণ্য এলাকায় পর্যটকদের চাপ কমানোর জন্য চারটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া আগের সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য এগুলো মেরামত করছি। ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন চারটি ও পুরোনো সাতটি মিলিয়ে মোট ১১টি কেন্দ্রে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

আরও খবর

🔝